ঢাকা, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

চুরির মামলার তদন্তে নেমে অবৈধ অস্ত্রের সন্ধান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৪
চুরির মামলার তদন্তে নেমে অবৈধ অস্ত্রের সন্ধান

ঢাকা: কেরানীগঞ্জের একটি বাসায় টাকা-স্বর্ণালঙ্কারের সঙ্গে চুরি হয় পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র। তবে এই চুরির ঘটনায় পুলিশে কোনো অভিযোগ করেননি বাসার মালিক।

কারণ, অস্ত্রগুলো অবৈধ ছিল।

পরে রাজধানীর চকবাজারের একটি চুরির ঘটনায় চোর চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর অবৈধ এসব আগ্নেয়াস্ত্রের সন্ধান পায় পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় কেরানীগঞ্জের ওই বাসার মালিক শাহীনকে। তার কাছেই অস্ত্রগুলো সংরক্ষিত ছিল।

পুলিশ জানায়, চকবাজারের ইসলামবাগ এলাকায় ঈদের ছুটিতে গত ১২ এপ্রিল একটি চুরির ঘটনার জেরে দুই নারীসহ সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদেরকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ ও অধিকতর তদন্তে শাহীনসহ আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চারটি বিদেশি পিস্তলসহ পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন মো. রাজীব হোসেন রানা (২৮), মো. শাহীন (৪০), মো. আবুল হাসান সুজন (২৫), মো. পারভেজ নুর (৩৮) ও মানিক চন্দ্র দাস (৩৬)।

তবে এই চক্রের আরও দুই সদস্য রশিদ মিয়া (৪৬) ও হাসান শাহারিয়ার পাপ্পু (৩৫) পলাতক রয়েছেন। এরমধ্যে রশিদ বিদেশে পলাতক, আর শাহারিয়ারকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) ড. খ. মহিদ উদ্দিন।

তিনি বলেন, চকবাজারের ইসলামবাগ এলাকার একটি বাড়িতে গত ১২ এপ্রিল চুরির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে নেমে চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। চক্রের মূলহোতা মামুন ২২ মামলার আসামি। মামুনের অন্যতম সহযোগী তার মা হাসিনা। তারা স্থানীয়ভাবেই চোর হিসেবে পরিচিতি। চুরি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গিয়ে চক্র গড়ে তোলেন মামুন।

তার গড়ে তোলা ১০ থেকে ১২ জনের চক্রটি স্থানীয়ভাবে মামুন বাহিনী হিসেবে পরিচিত। তারা নানা কৌশলে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে চুরি করে আসছিলেন।

চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধারে আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে নেমে অস্ত্রের তথ্য পায় তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে জানা যায়, মামুনের চক্রের একটি অংশের সদস্য রাজীব হোসেন রানাসহ তিন সদস্য প্রায় এক বছর আগে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার একটি বাসায় চুরির ঘটনা ঘটায়। কিন্তু রহস্যজনকভাবে এই ঘটনায় থানা পুলিশে কোনো অভিযোগ করেনি। এর কারণ এই বাসা থেকেই টাকা পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ বেশ কিছু অস্ত্র চুরি হয়ে যায়। ফলে এই অবৈধ অস্ত্রের মালিক শাহিন কোনো অভিযোগ করেননি।

পরে অস্ত্রের মালিক শাহিনকে গ্রেপ্তারের পর গত ২২ এপ্রিল থকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত টানা পাঁচদিন ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে পাঁচটি অস্ত্র ও ৩৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় আরও চারজনকে।

গ্রেপ্তার রানার বিরুদ্ধে ১০টি মামলা, সুজনের বিরুদ্ধে একটি, মানিকের বিরুদ্ধে চারটি ও পারভেজের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। বর্তমানে তারা পুলিশের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে রয়েছেন। এই ঘটনায় দুজন পলাতক।

গত এক বছরে চুরি করে পাওয়া অস্ত্রগুলো নানা কৌশলে হাত বদল হয় উল্লেখ করে অতিরিক্ত কমিশনার মহিদ বলেন, মামুনের চক্রটি মূলত চুরির সঙ্গে জড়িত। সাধারণত কোনো চক্র যখন গড়ে ওঠে তখন তারা নানা সরঞ্জাম সংগ্রহ করে বড় ধরনের কাজ করে থাকে। তেমনি এই অস্ত্রগুলোর অপব্যবহারের সুযোগ ছিল। তবে আমাদের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত অস্ত্রগুলো একাধিকবার হাত বদল বা কেনাবেচা হয়েছে। কিন্তু অস্ত্রগুলো কোনো ধরনের ব্যবহারের তথ্য পাইনি। ব্যবহারের আগেই উদ্ধার করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যার বাসা থেকে অস্ত্রগুলো চুরি হয়েছে। তিনি কোনো অভিযোগ করেননি। এমন কি আমাদের তদন্তে যখন গ্রেপ্তার হয়েছে তখন সে অস্ত্রর বৈধতার কোনো তথ্য দিতে পারেননি। অস্ত্রগুলো চুরি হওয়ার পরে তিন হাতে বদল হয়েছে। অবৈধ অস্ত্র তিনি কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন সেই বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৪
পিএম/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।