ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর বাড়াতে ১৫০ চিকিৎসকের যৌথ বিবৃতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৫ ঘণ্টা, মে ৫, ২০২৪
তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর বাড়াতে ১৫০ চিকিৎসকের যৌথ বিবৃতি

ঢাকা: জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ এবং তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর বৃদ্ধির জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছেন দেশের প্রখ্যাত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ আহ্ছানিয়া মিশন ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালের ১৫০ জন চিকিৎসক। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা সরকারের প্রতি এই অনুরোধ জানান।

রোববার (৫মে) ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতি প্রদানকারী উল্লেখযোগ্য ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হলেন- বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি হাসপাতাল ও ওয়েলফেয়ার হোমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ হাই, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, স্কয়ার হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি এবং রেডিওথেরাপি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন, আহ্ছানিয়া মিশন ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এ এম এম শরিফুল আলম প্রমুখ।

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের উদ্যোগে এই যৌথ বিবৃতিতে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বজুড়ে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান আটটি কারণের ছয়টির সঙ্গেই তামাক জড়িত। তামাক ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি, যেমন ক্যান্সার, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, শ্বাসকষ্ট ও পায়ে পচন এবং খাদ্যনালীতে ক্যান্সারসহ নানা শারীরিক জটিলতা সম্পর্কে এখন আর কারো অজানা নয়। গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখনও ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ (৩ কোটি ৭৮ লক্ষ) তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করেন, ধূমপান না করেও প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বিভিন্ন পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। তামাক ব্যবহারের ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, সিওপিডি বা ফুসফুসের ক্যান্সার হবার ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ এবং অন্যান্য ধরনের ক্যান্সার হবার ঝুঁকি ১০৯ শতাংশ বেড়ে যায়। এ কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর এক লক্ষ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করে।

এ অবস্থায় তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কার্যকরভাবে করারোপের মাধ্যমে মূল্য বাড়িয়ে তামাকের ব্যবহার হ্রাসে উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিৎ। এতে করে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত হবে। অন্যদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনেও তা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে (২০১৯-২০২৩) বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৬৪৩ ডলার থেকে বেড়ে ২ হাজার ৭৬৫ ডলার হয়েছে। অথচ এ সময়ে বেশিরভাগ সিগারেটের দাম হয় প্রায় অপরিবর্তিত থেকেছে অথবা সামান্য বেড়েছে। ফলে সিগারেটের প্রকৃত মূল্য কমে গেছে। এতে করে সিগারেট অধিক সহজলভ্য হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রিও তামাকজাত দ্রব্যকে সহজলভ্য করছে। এর ফলে কিশোর ও তরুণদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে বৈ কমছে না। অন্যদিকে নিম্ন আয়ের মানুষেরাও ধূমপানে নিরুসাহিত না হয়ে বরং উৎসাহিত হয়ে পড়ছে। এত করে তারা আর্থিক ও শারীরিক উভয় ঝুঁকির মুখে পড়ছে। এখনই এটা নিয়ন্ত্রণে না আনা গেলে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকের ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা অসম্ভবপর হবে।

এমতবস্থায় বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি আইন করে নিষিদ্ধ করা উচিত। বিশ্বের বহু দেশে খুচরা বিক্রি নিষিদ্ধ রয়েছে। বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে সংশোধন করেও এটা করা যায়। এটা এখনই কার্যকর করা উচিত। পাশাপাশি কার্যকরভাবে করারোপের মাধ্যমে সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি করা জরুরি।

 

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, মে ৫, ২০২৪
এসসি/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।