ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কিশোরকে তুলে নিয়ে চাঁদা দাবি, ৪ পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৩ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২৪
কিশোরকে তুলে নিয়ে চাঁদা দাবি, ৪ পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার

রাজশাহী: জেলার গোদাগাড়ীতে এক কিশোরকে তুলে নিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে চার পুলিশ সদস্যকে নিজ কর্মস্থল থেকে পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তের স্বার্থে রোববার (০৫ মে) সন্ধ্যার পর তাদের গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী পুলিশ তদন্তকেন্দ্র থেকে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

রাজশাহী পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার হওয়া চারজন হলেন- গোদাগাড়ীর প্রেমতলী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আনোয়ারুল ইসলাম, কনস্টেবল রেজাউল করিম ও মিলন হোসেন।

এর আগে শনিবার (০৪ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম গ্রাম থেকে ওই কিশোরকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তার বাবা মো. মুর্ত্তজা একজন কাপড় ব্যবসায়ী।

এই ঘটনার পর ওই কিশোর জানায়, শনিবার রাত ৮টার দিকে তার বাবার দোকান বন্ধ করে বাইরে আসে। এরপর সে তার দুই বন্ধুর সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। ওই সময় দুইটি মোটরসাইকেলে করে চারজন তাদের সামনে আসেন। পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর তারা জোর করে ওই কিশোরকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে চলে যান। রাত ৯টার দিকে তার হাতে হাতকড়া পরানো হয়। এরপর তাকে প্রেমতলী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পাশে থাকা পদ্মা নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয় এবং তার বাবাকে ফোন দিয়ে সেই টাকা আনতে বলা হয়। না হলে মাদক মামলায় চালান দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন তারা।

এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে গোদাগাড়ী উপজেলার বসন্তপুরে ফাঁকা রাস্তার পাশে সোহানুরকে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরে ওই কিশোর একা গোগ্রাম বাজারে চলে আসে।

ভুক্তভোগী কিশোর জানায়, পুলিশ পরিচয় দিলেও ওই সময় তাদের পরনে পুলিশের পোশাক ছিল না। তাদের একজনের হাতে থাকা হাতকড়া তাকে পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে তারা তার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তবে পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর এর আগে ওই চারজন তার মোবাইলে থাকা বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে পিন নম্বর নিয়ে তার সামনেই তিন হাজার টাকা তুলে নেন।

এদিকে ভুক্তভোগীকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার খবরটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তার পরিবার তাকে খুঁজতে থাকেন। থানায় ফোন করা হয়। এ সময় এএসআই আনোয়ারুলকে সাদা পোশাকে গোগ্রাম বাজারে দেখতে পান স্থানীয়রা। স্থানীয় লোকজন তার কাছে ভুক্তভোগীর বিষয়ে জানতে চান। একপর্যায়ে স্থানীয় ব্যক্তিরা তাকে অবরুদ্ধ করেন। পরে খবর পেয়ে প্রেমতলী তদন্তকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসমান গণি অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়েই লোকজনকে লাঠিপেটা করেন তিনি। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয়রা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন ও গোদাগাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সোহেল রানা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে এএসআই আনোয়ারুলকে সেখান থেকে নিয়ে যান।

যদিও ওই কিশোরকে তুলে নিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, এএসআই আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, জড়িত না হলেও ঘটনার সঙ্গে তাকে ফাঁসানো হয়েছে।

তবে রাজশাহী পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাইফুর রহমান জানিয়েছেন, এই ঘটনায় পুলিশ বাদী মামলা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্তের স্বার্থে প্রাথমিকভাবে চারজনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগের সত্যতা পেলে এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২৪
এসএস/এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।