ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘পানিতে ভাসছিল খাট, আড়ার সঙ্গে ঝুলছিলাম আমরা ’

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৯ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২৪
‘পানিতে ভাসছিল খাট, আড়ার সঙ্গে ঝুলছিলাম আমরা ’ সাবিনা খাতুন

কলাপাড়া (কুয়াকাটা), পটুয়াখালি থেকে: বিধ্বস্ত বাড়ির সামনে বৃদ্ধার কোলে শিশু। যেন ধ্বংসের শেষপ্রান্ত থেকে নির্মাণযজ্ঞের শুরু।

ভাঙা হাঁড়ি থেকে খুঁজে পাওয়া ভাতের ভেজাচাল শুকাতে দিয়েছেন ভাঙাঘরের চালায়। ভেঙেছে রান্নার চুলাও।

এমন চিত্র উপকূলে রিমাল দুর্গতদের প্রায় সবার। শনিবার (১ জুন) সারাদিন পটুয়াখালীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। এমনকি এসব বাড়ি ঘরের সামান্য জিনিসপত্রগুলো রক্ষার জন্য অনেকে ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রেও যায়নি বলে জানা গেছে।

আছিয়া খাতুন

এমনি একজন কলাপাড়া উপজেলার জয় বাংলা পল্লীর সাবিনা খাতুন। নিজের ঘরের সামান্য জিনিপত্রগুলোই হারানোর উদ্দেশে তিনি ঘর ছাড়েননি তীব্র ঝড় আর জলোচ্ছ্বাসেও।

কথা হলে সাবিনা বলেন, মুরুব্বিদের কাছে শুনি যে- ঘরের থেকে সরে গেলে ঘর ফাঁকা হয়ে যায়! সেজন্য ছোট বাচ্চারা যারা ছিল, সবাইকে পাঠিয়ে দিয়ে আমরা আমাদের মতো ছিলাম। ঘরে যখন পানি ঢুকেছে, খাটও ভাসতে শুরু করেছে, আর আমরা আড়ার সঙ্গে ঝুলে ছিলাম, তাও ঘর ছেড়ে যাইনি। ঘর ছেড়ে নেমে গেলে মনে করেন আর পাইতাম না ঘরটা, এমন পরিস্থিতি হয়েছে। সিডরের বছর যে পানি হয়েছে, এবছর তার থেকে বেশি পানি হয়েছে। আর একটানা ৩টা চুবানি খেয়েছি এখানে বসেই। পানি ছিল গলা পর্যন্ত। আমরা হাঁটতেও পারিনি, সাঁতরে যাওয়া লাগছে।

এত দুর্যোগেও ঘর থেকে বের হননি, কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাহস ছিল দেখে, বা ঘর আর জিনিসপত্রগুলোর ওপর মায়া বাসনা ছিল দেখেই যায়নি। ঘরে অসুস্থ নানি-শাশুড়ি আছে, বিছানাগত; তাকেও ঘর থেকেও নামায়নি, কেননা তাকে নামাতে হলেই ৩-৪ জনকে তার সঙ্গে যেতে হতো। ঘরে বসে মনে করেন যে এক গৃহস্থ্য রান্না করেছে, পাঁচ গৃহস্থ্য ভাগ করে খেয়েছি। কারণ এ পানির মধ্যে কেউ আসতেও পারেনি, আমাদের খাওয়াতেও পারেনি। এভাবেই আমরা ডুবে ডুবে সবাই মিলেমিশে আছি যারা যারা আছি।

সাবিনার প্রতিবেশী বৃদ্ধ আছিয়া খাতুন বলেন, আমাদের ঘরে এমনি তেমন জিনিসপত্র নেই। গরিব মানুষ। এরপরে যেগুলো আছে সেগুলোও যদি বন্যায় ভেসে যায়, তবে নতুন ঘর বাঁধবো কি করে! তাই নিজের ঘরেই ছিলাম, একটু হলেও যদি কিছু বাঁচাতে পারি, সেটাই নতুন ঘরতে বাঁধতে সাহায্য করবে।

তিনি বলেন, ঘরের ভেতর হান্দায় দ্যাখেন কি অবস্থা! বালিশ খেতা (কাঁথা) কিৎসু নাই বাবা, সব ভিইজ্যা গেছে। কোনো কোনো ঘরে তো কিছু কিছু আছে, মোর ঘরে সব ভিইজ্যা গেছে।  

তবে ঘূর্ণিঝড়ের সাত দিন পেরোলেও এখন পর্যন্ত এ এলাকায় সেভাবে কোনো সাহায্য সহযোগিতা আসেনি বলেও দাবি তাদের। আর স্থানীয় মেয়র আলাদাভাবে কোন খোঁজখবরও দেননি বলে অভিযোগ পুরো পল্লীবাসীর।

বিধ্বস্ত বাড়িঘর

এ বিষয়ে সাবিনা খাতুন বলেন, আমরা সবাই এদ্দিন বাজার না করেই চলছি। মেম্বার-চেয়ারম্যান কেউ আসেনি। তারা এসে ঈদে একটু দেখা করে যায়, ৫-৭ কেজি চাল দিয়ে যায়। ওই পর্যন্তই।

এ বিষয়ে কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র বিপুল হাওলাদার বলেন, ত্রাণ সহায়তা কিছু দেওয়া হয়েছে এবং আরও বাকি আছে। গতকাল (শনিবার) প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ দিয়ে উদ্বোধন করে গেছেন। দ্রতই ত্রাণ দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৯ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২৪
এইচএমএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।