যশোর: যশোরের অভয়নগরে পুলিশের হেফাজতে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (২ জুন) সকালে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, আফরোজার মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাতে অভয়নগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম, এসআই শামছুল হক, এএসআই সিলন ও পুলিশ সদস্য রাবেয়া গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের আব্দুল জলিল মোল্যার ভাড়া বাড়িতে অভিযান চালিয়ে জলিলের স্ত্রী আফরোজা বেগমকে ৩০ পিস ইয়াবাসহ আটক করে। পরে আফরোজাকে থানা হেফাজতে রাখা হলে হঠাৎ রোববার (২ জুন) সকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় পুলিশ তাকে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আফরোজাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে পৌঁছানোর আগেই রাজারহাট এলাকায় পৌঁছালে আফরোজার মৃত্যু হয়।
আফরোজা বেগমের ছোট ছেলে নওয়াপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাব্বির মোল্যা অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, শনিবার রাতে আমাদের বাড়িতে পুলিশ এসে আম্মুকে বলে কাছে যা আছে, বের করতে। আম্মু কিছু নেই জানালে এএসআই সিলন নারী পুলিশকে ফোন করে ডেকে আনেন। এরপর শরীর তল্লাশি করে কিছু না পাওয়ায় আম্মুকে চড় মারতে থাকেন। এ সময় আমি মারতে নিষেধ করলে এএসআই সিলন আমাকেও দুটি চড় মারেন। সেই সঙ্গে আমার সামনেই ফ্যানের সঙ্গে চুল বেঁধে আম্মুকে ঝুলিয়ে রাখেন।
যশোর জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আফরোজা বেগমের বড় ছেলে মুন্না মোল্যা অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় একটি মহলের ইন্ধনে পুলিশ আমাদের বাড়িতে আসে। এরপর মাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্য মারধর করতে থাকেন। এ সময় নিজেদের কাছে থাকা ইয়াবা দিয়ে মাকে ফাঁসিয়ে রাত ১টার দিকে থানায় নিয়ে যায়। সকালে থানায় গিয়ে দেখি আমার মা অসুস্থ। পুলিশকে অনুরোধ করে আমার মাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা কয়েকটি টেস্ট দেয়। কিন্তু পুলিশ সেগুলো না করিয়ে আবার থানায় নিয়ে যায়। পরে মা আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে মায়ের মৃত্যু হয়।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, আমাদের ঘরে থাকা এক লাখ ৮০ হাজার টাকা লুট করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে আরও দুই লাখ টাকা ঘুষের দাবিতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে আমার মাকে।
আফরোজার মৃত্যুর বিষয়ে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক রকিবুল ইসলাম বলেন, ওই নারী খুবই দুর্বল এবং ব্লাড প্রেসার খুবই বেশি ছিল। যে কারণে আমি খুলনা রেফার্ড করতে চাইলে পুলিশের অনুরোধে যশোরে রেফার্ড করি।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুস সামাদ বলেন, ওই নারীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। ময়নাতদন্ত করা হয়েছে, রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
আফরোজার মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
অভয়নগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামের দাবি, মাদকসহ আটক ওই নারী হৃদরোগে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন।
আফরোজা বেগমকে নির্যাতন করা হয়েছে এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এএসআই সিলন বলেন, তাকে মারধর বা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্যাতনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তার পরিবারের সদস্যদের এ অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আকিকুল ইসলাম বলেন, ৩০ পিস ইয়াবাসহ আফরোজা বেগমকে শনিবার রাত দেড়টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে নারী থানা হাজতে রাখা হলে সকালে হঠাৎ করে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। রোববার এশার নামাজের পর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে আফরোজাকে দাফন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০২৪
ইউজি/আরআইএস