ঢাকা, রবিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নেত্রকোনায় জীবিত ৩ ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে ভাতা বন্ধ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫১ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০২৪
নেত্রকোনায় জীবিত ৩ ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে ভাতা বন্ধ

নেত্রকোনা: জেলার পূর্বধলায় জীবিত তিন ব্যক্তিকে মৃতের সার্টিফিকেট দিয়ে তাদের নামের বরাদ্দকৃত বয়স্ক ও বিধবা ভাতা চেয়ারম্যান, মেম্বারদের পছন্দসই ব্যক্তিদের নামে প্রতিস্থাপনের অভিযোগ উঠেছে। এতে তাদের নামের বরাদ্দকৃত বয়স্ক ও বিধবা ভাতাও বন্ধ হয়ে গেছে।

ভোক্তভোগী দুইজন এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার তিন ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জীবিত তিন ব্যক্তিকে মৃতের সনদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে তাদের বয়স্ক ও বিধবা ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিকার চেয়ে ইউএনওর কাছে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইউএনও খবিরুল আহসান।

জীবিত থেকেও মৃতরা হলেন, খলিশাউড় ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গরুয়াকান্দা গ্রামের মৃত জহুর আলীর ছেলে মো. হযরত আলী (৭১)। হোগলা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জামিরাকান্দা গ্রামের মৃত সুরুজ আলী ফকিরের স্ত্রী ও মৃত ইন্তাজ মড়লের মেয়ে জহুরা খাতুন (৭৭) ও পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের উকুয়াকান্দা গ্রামের মৃত মামুদ আলীর মেয়ে খাদিজা আক্তার।

হযরত আলী তার লিখিত অভিযোগে জানান, বর্তমান সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীনে বয়স্ক ভাতার আওতায় তিনি দীর্ঘদিন যাবত একজন উপকারভোগী হিসেবে বয়স্ক ভাতা পেয়ে আসছিলেন। গত দুই সেশনে তার মোবাইল অ্যাকাউন্টে টাকা না আসায় বিষয়টি সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নেন। সেখানে সমাজ সেবা অফিসার জানান, খলিশাউড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কমল কৃষ্ণ সরকারের দেওয়া প্রত্যয়ন পত্রে তাকে মৃত দেখানো হয়েছে। পরবর্তীতে চেয়ারম্যানের দেওয়া পছন্দসই ব্যক্তিকে তার নামে বরাদ্দকৃত বয়স্ক ভাতা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তিনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

সুবিধা বঞ্চিত জহুরা খাতুনের অভিযোগ, তিনিও নিয়মিত বয়স্ক ভাতা পেয়ে আসছিলেন। গত দুই দফা অন্যান্যদের নামে বয়স্ক ভাতা আসলেও তার নামে আসেনি। তিনি মেয়েকে নিয়ে সমাজসেবা অফিসে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, গোগলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আকন্দ খোকনের স্বাক্ষরিত প্রত্যয়ন পত্রে তাকে মৃত দেখিয়ে আমার নামের স্থলে নূর মিয়ার কন্যা হালিমা খাতুনের নামে ভাতা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তিনি বিষয়টি চেয়ারম্যানকে অবহিত করার পরও প্রতিকার পাননি।

এছাড়া পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের উকুয়াকান্দা গ্রামের মৃত মামুদ আলীর স্ত্রী খাদিজা আক্তার ২০১৯ সাল থেকে বিধবা ভাতা পেয়ে আসছিলেন। ইতঃপূর্বে ব্যাংক ও পরে মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে ২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত টাকা উত্তোলন করেছেন। এই ভাতার টাকা দিয়ে তিনি নিজের ব্যয় বহন করতেন। গত বছরের জুন মাস থেকে তিনি ভাতা পাচ্ছিলেন না। বিষয়টি জানতে তিনি সমাজসেবা অফিসে গিয়ে খবর নিতে গেলে তাকে জানানো হয়, ‘আপনি তো মারা গেছেন’। তাই ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডর ইউপি সদস্যকে ফোন করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে খলিশাউড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কমল কৃষ্ণ সরকার জানান, একই গ্রামের হযরত আলী নামে দুই ব্যক্তির এক ব্যক্তি মারা গেলে ভুলবশত জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখানো হয়েছে। এই ভুল সংশোধনের জন্য ইতিমধ্যে সমাজসেবা অফিসে কাগজ পাঠানো হয়েছে।

হোগলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আকন্দ খোকন বলেন, আমার অজান্তে ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ভুলবশত এমনটি করেছে। তবে ভুল সংশোধনের জন্য ইতিমধ্যে আমি কাগজপত্র নিয়ে সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করেছি।

পূর্বধলা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা সুবিধাভোগীদের নামে মৃত্যু সনদ ইস্যু করে প্রতিস্থাপনের সুপারিশ পাঠানোর প্রেক্ষিতে উক্ত ভাতাভোগী দুইজনকে মৃত দেখিয়ে তাদের স্থলে চেয়ারম্যানদের দেওয়া নাম প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। আমরা যেহেতু এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে সংশোধনের ব্যবস্থা নেব।

পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. খবিরুল আহসান জানান, জীবিত ব্যক্তিকে মৃতের সার্টিফিকেট দিয়ে তার ভাতা কেটে নিয়ে অন্য জনের নামে প্রতিস্থাপনের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এর আগেও খাদিজা আক্তার প্রতিকার চেয়ে আরেকটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক সংশোধন ও দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নিতে সমাজসেবা বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।