ফরিদপুর: আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ফরিদপুরের সালথার বিভিন্ন পশুর হাটে ইজারাদারেরা ক্রেতা ও বিক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত খাজনা (হাসিল) আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া হাটগুলোতে ইজারাদারদের হাসিল আদায়ের তালিকা টাঙানোর কথা থাকলেও অধিকাংশ হাটেই তার নেই।
এছাড়াও বিভিন্ন কোরবানির পশুর হাটে হাট ইজারাদার ও তার নিয়োজিত লোকজনেরা নিয়ম বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত হাসিল (টোল) আদায় করার পাশাপাশি অতিরিক্ত পশু রাত না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে ফেরত নিতে দেওয়া হচ্ছে না বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা অভিযোগ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সালথা উপজেলার প্রতিটি পশুর হাটে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কর্তৃক নির্ধারিত হাসিলের তালিকা টাঙানো বাধ্যতামূলক। তবে উপজেলার কোনো হাটেই তা টাঙানোর প্রয়োজন মনে করছেন না প্রভাবশালী ইজারাদাররা।
অভিযোগ রয়েছে, সালথা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ হাটের ইজারা পেয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। ফলে স্থানীয় প্রশাসন এ অনিয়ম দেখেও চোখ বুজে আছেন বলে স্থানীয়দের দাবি। এ সুযোগে ইচ্ছে মতো হাসিল তুলছেন ইজারাদাররা। এতে কোরবানির পশু কিনতে গিয়ে ক্রেতারা হয়রানির মুখে পড়ছেন।
সালথা উপজেলার অন্যতম পশুর হাট আটঘর ইউনিয়নের নকুলহাটি।
বুধবার (১২ জুন) বিকেলে নকুলহাটি হাটে গরু-ছাগল কিনতে আসা ক্রেতারা জানান, ‘এই হাটে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কর্তৃক নির্ধারিত হাসিলের তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার জোরে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রীতিমতো হাসিল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। সেখানে গরু প্রতি নির্ধারিত ২শ-৫শ টাকার বদলে ৫০০-১৫শ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ছাগলের জন্য নির্ধারিত ১শ-২শ টাকার পরিবর্তে আদায় হচ্ছে ৪শ-২শ টাকা। ’
এছাড়া কেউ তার পশুটি বাড়িতে ফেরত নিতে চাইলে ইজারাদার ও তাদের নিয়োজিত কর্মীরা পশুটি নিজ বাড়িতে নেওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন না। তারা বলছেন, রাত না হওয়া পর্যন্ত পশুটি হাট থেকে ফেরত নেওয়া যাবে না। এ নিয়ে বিপদে পড়ছেন দূর থেকে পশু নিয়ে হাটে আসা বিক্রেতারা।
সালথা উপজেলার বিভিন্ন হাটের গরু-ছাগল ক্রেতারা জানান, বিভিন্ন হাটে ছাগল প্রতি ৮শ থেকে ২ হাজার টাকা ও গরু প্রতি ১ হাজার থেকে ২৫শ টাকা পর্যন্ত হাসিল নেওয়া হচ্ছে। হাসিলের টাকা নিয়ে ইজারাদারের পক্ষে যে স্লিপ দেওয়া হচ্ছে, তাতে শুধু গরুর দর লেখা হচ্ছে। হাসিলের অংক লেখা হচ্ছে না। কোনো ক্রেতা এই রসিদ নিতে না চাইলে হুমকি-ধামকি দিয়ে তাকে হাট থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে নকুলহাটি হাটের ছাগল হাটের হাসিল উত্তোলনকারী মো. বিজু বলেন, ফরিদপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) প্রায় তিন বছর আগে এ হাসিল নির্ধারণ করেছেন। আমরা হাসিলের দর পরিবর্তনের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
নকুলহাটি হাটের ইজারাদার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাকির মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, কোরবানির হাটতো তাই হাসিল আদায়ে একটু কম-বেশি হচ্ছে। তবে, আমরা ১ লাখ টাকার নিচে বিক্রি হওয়া গরু থেকে ১ হাজার ও ১ লাখের বেশি দামে বিক্রি হওয়া গরু থেকে ১৫শ টাকা হাসিল নিচ্ছি। এছাড়া ছাগল প্রতি ১২০ টাকা থেকে ২শ টাকা পর্যন্ত হাসিল নেওয়া হচ্ছে। আবার অনেক পরিচিতদের কাছ থেকে হাসিলের টাকা আরও কম কিংবা নিচ্ছিও না।
তবে হাটে হাসিলের কোনো তালিকা টাঙানো হয়নি বলে অকপটে স্বীকার করেন এ ইজারাদার।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিছুর রহমান বালী বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিটি গরুর হাটে হাসিলের নির্ধারিত মূল্য তালিকা প্রদর্শন করার কথা। তবে, কোনো হাটে সেটা না মানা হলে আমরা খোঁজখবর নিয়ে দেখব। এছাড়া আমরা প্রতিটি হাটে হাসিলের ব্যাপারে তদারকি করব।
তিনি বলেন, ক্রেতা-বিক্রেতার কাছে থেকে অতিরিক্ত হাসিল আদায়ের সুযোগ নেই। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে।
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক চৌধুরী রওশন ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমি এক বছর হলো এই জেলায় যোগ দিয়েছি। আমার যোগ দেওয়ার আগের হাসিলের যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেটাই এখনও বহাল আছে। তাই না দেখে মূল্য তালিকা বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করব। আর যে পশুর হাটগুলোতে হাসিলের তালিকা টাঙানো হয়নি, সেখানে তালিকা টাঙানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া পশুর হাটে পশু ক্রেতা-বিক্রেতার কাছে থেকে ইজারাদাররা অতিরিক্ত হাসিল নিলে, সে ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২৪
এসআরএস