নাটোর: জেলায় প্রায় দুই লাখ ৫২ হাজার ৪২টি কোরবানির পশুর চাহিদার বিপরীতে চার লাখ ৭৮ হাজার ২২৭টি পশু প্রস্তুত করেছেন খামারিরা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত প্রায় দুই লাখ ২৬ হাজার ১৮৫টি পশু ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার হাটে বিক্রি করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন হাটে, খামারে এবং অনলাইনে পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। এছাড়া শেষ সময়ে পশু পরিচর্যা ও গো-খাদ্য খাওয়ানো নিয়ে ব্যস্ত সময়ও পাড় করছেন খামারিরা।
নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ১৮ হাজার অধিক খামারে চার লাখ ৭৮ হাজার ২২৭টি কোরবানির পশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গত মৌসুমে কোরবানির ঈদে ছিল পাঁচ লাখ ২০ হাজার ২৩৮টি পশু। এ বছর জেলায় ষাঁড় ৯৪ হাজার ৬৫৮টি, বলদ ১২ হাজার ৮৫৩টি, গাভি ১৪ হাজার ৩৩৫, মহিষ দুই হাজার ১৬৬টি, ভেড়া ৩৪ হাজার ১৫০টি, ছাগল তিন লাখ ২০ হাজার ৩৬টি এবং অন্যান্য ২৯টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
এর মধ্য নাটোর সদর উপজেলায় ৮৭ হাজার ৪৬০টি, বাগাতিপাড়া উপজেলায় ৩৭ হাজার ৯২২টি, নলডাঙ্গা উপজেলায় ৫৬ হাজার ১৮৪টি, লালপুর উপজেলায় ৪০ হাজার ৯৮১টি, গুরুদাসপুর উপজেলায় ৯৭ হাজার ৮৮৯টি, সিংড়া উপজেলায় ৯২ হাজার ৫৬৬টি এবং বড়াইগ্রাম উপজেলায় ৬৫ হাজার ২২৫টি কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে।
নাটোর জেলার সবচেয়ে বড় কোরবানির পশুর হাট বসে শহরের তেবাড়িয়া, বড়াইগ্রাম উপজেলার মৌখাড়া হাট, সিংড়া ফেরিঘাটে, বাগাতিপাড়ার পেড়াবাড়িয়া, গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় এবং গোপালপুর উপজেলার মধুবাড়ীসহ জেলার বিভিন্ন পশুর হাটে এবার কোরবানির পশু বিক্রি হবে।
সদর উপজেলার তেবাড়িয়া এলাকার খামারি শফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর কোরবানির জন্য ছয়টি ষাঁড় গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন তিনি। বর্তমানে বাজার দাম মোটামুটি ভালো। যদি এ দাম থাকে তাহলে গরু প্রতি দেড় থেকে দুই লাখ টাকা দরে বিক্রি করা হবে।
একই উপজেলার ডাল সড়ক এলাকার বড় খামিরা রেকাত হোসেন জানান, তার খামারে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির পশু কিনতে আসছেন। অনলাইনের গরু বিক্রি হচ্ছে। তবে তুলনা মুলক ভাবে এবার পশুর দাম কম বলে মনে হচ্ছে। তার দাবি ভারত থেকে গরু আমদানি না হলে দেশে প্রস্তুতকৃত পশুর দাম ভালো পাওয়া যাবে। খামারিরা লাভজনক পর্যায়ে যেতে পারবেন। তবে তাদের দাবি গো-খাদ্যের দাম কমাতে হবে। তাহলে দেশের খামারিরা লাভবান হবেন। একই দাবি আরো অনেক খামারিদের।
সিংড়া উপজেলার হাতিন্দাহ এলাকার খামারি ইউসুফ মোল্লা বলেন, প্রতিবছর কোরবানিতে পশু সরবরাহ করি। সেজন্য এক বছর থেকে পশু পরিচর্যা করতে হয়। তবে বর্তমানে পশু পালন করা লাভজনক নয়। সবকিছুর দাম বেড়েছে। এতে খাদ্য ও শ্রমিক দিয়ে উৎপাদন খরচ ওঠে না। তবুও শখের বসে পালন করি। এ বছর আটটি ষাঁড় গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছি। আশা করছি, ১৮-২০ লাখ টাকা বিক্রি হবে।
নলডাঙ্গার চেউখালি গ্রামের তাহাজ উদ্দিন জানান, তিনি এবার শখ করে একটি ষাঁড় লালনপালন করেছেন। বিক্রি উপযোগী হলেও ক্রেতার বড় অভাব। অনলাইনে দেওয়ার পরও কোনো সাড়া মেলেনি। একই উপজেলার সাধনগর গ্রামের আনোয়ার তালুকদার জানান, কোরবানিকে কেন্দ্র করে তার খামারে চারটি গরু প্রস্তুত করেছেন। একটি ষাঁড়ের ওজন হবে প্রায় ৩০ মণ। কিন্তু কোনো ক্রেতা পাচ্ছেন না। বর্তমান বাজার দর হিসেবে বিক্রি করলেও ষাঁড়টির দাম হবে প্রায় ১১ থেকে ১২ লাখ টাকা।
নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর নাটোর জেলায় চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি কোরবানির পশু প্রস্তত রাখা হয়েছে। জেলায় কোরবানির চাহিদা পূরণ করে উদ্বৃত্ত দুই লাখ ২৬ হাজার ১৮৫টি পশু সারাদেশে বিক্রি করা হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা হবে।
তিনি আরও বলেন, খামারিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিরাপদ ও স্বাস্থ্য সম্মত পশু লালন পালনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যাতে খামারে অ্যান্টিবায়োটিক মুক্ত এবং মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি না হয়, সেদিক বিবেচনা করে গবাদি পশু লালন-পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৯ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৪
এসএম