ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মধুখালীতে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ধামাচাপার চেষ্টা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৫ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৪
মধুখালীতে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ধামাচাপার চেষ্টা অভিযুক্ত পাঁচজনের মধ্যে তিনজন

ফরিদপুর: ফরিদপুরের মধুখালীতে মোবাইলফোনে আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইলিং করে দিনের পর দিন এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি প্রভাবশালী মহল দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

তবে ঘটনাটি জানাজানি হলে ১১ দিন পর পাঁচজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে থানায়।  

এদিকে অভিযোগ রয়েছে, মামলা রুজুর দুদিন পরেও ভুক্তভোগীকে হেফাজতে নিয়ে তার ফরেনসিক পরীক্ষা কিংবা জবানবন্দি কিছুই নেওয়া হয়নি এখনও।  

এ ব্যাপারে পুলিশ বলছে, মামলা হলেও মেয়েটিকে পাওয়া যাচ্ছে না তার ঠিকানায়।  

অন্যদিকে, মামলার আসামি অভিযুক্ত পাঁচ যুবকের কাউকেই এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।  

জানা গেছে, মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে এসে ওষুধ কোম্পানির দুই প্রতিনিধির খপ্পরে পড়ে সংঘবদ্ধ এই ধর্ষণের শিকার হয়েছে ভুক্তভোগী কিশোরী, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় উত্তাপ ছড়িয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকাতেও।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মে রাতে ১৬ বছর বয়সী কিশোরীকে (ভুক্তভোগী) উপজেলার মরিচ বাজারের একটি বাড়িতে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে। এরপর মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।  

এ ব্যাপারে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. ইমরান হোসাইন বলেন, ‘সেদিন রাত ৩টার পর ভুক্তভোগী কিশোরী মেয়েটি হাসপাতালে আসে। সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পরিতোষ তখন ডিউটিতে ছিলেন। মেয়েটি প্রথমে জানায়, তার পেটে ব্যথা হয়েছে। পরে সে ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে জানালে পরিতোষ পাশের রুমে গিয়ে আমাকে ডেকে তুলেন। আমি তখন মেয়েটির কাছে গিয়ে তার সমস্যা জানতে চাই। সে তখন জানায়, তাকে সংবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে। তখন আমি আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর ব্যবস্থা না থাকায় তাকে ফরিদপুরে বিএসএমএমসি হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠিয়ে দেই। তবে মেয়েটি আর রাতে হাসপাতাল ছেড়ে ফরিদপুরে যেতে পারেনি।  

জানা গেছে, পরের দিন তার হাসপাতালে অবস্থানের খবর পেয়ে তোড়জোড় শুরু হয় প্রভাবশালী মহলের। তারা তিনদিন মেয়েটিকে তাদের হেফাজতে নিয়ে সুস্থ করে তুলে। এর মাধ্যমে আলামত নষ্টেরও সুযোগ করে দেওয়া হয়। তবে এরই মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে এক পর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে হৈ চৈ শুরু হয়।  এরপর মেয়েটির এক চাচার মাধ্যমে দেড় লাখ টাকায় বিষয়টি দফারফা করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদে মেয়েটির পরিবার তার ধর্ষণের বিষয়টি চেপে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। মেয়েটির চাচা বাবুল দাবি করে, তার ভাতিজি দাদা বাড়ি গিয়েছিল। তিনদিন পরে সে বাড়ি ফিরেছে। তবে তার সঙ্গে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি।  

অন্যদিকে, মেয়েটি সাংবাদিকদের কাছে ভিডিও সাক্ষাৎকারে তাকে ধর্ষণের কথা জানালে পাশাপাশি হাসপাতালের চিকিৎসকের বক্তব্য প্রকাশ্যে এলে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। বিষয়টি গোয়েন্দাদের কানেও পৌঁছে। এরপর নিরুপায় হয়ে মেয়েটির বাবা উল্লিখিত তিনজনসহ অজ্ঞাতনামা আরও দুজনকে আসামি করে মধুখালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। গত ১১ জুন রাতে মামলাটি নথিভুক্ত হয়। মামলা নম্বর-১২।  

এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) পর্যন্ত মামলার কোনো কার্যক্রম শুরু করতে পারেননি তিনি। অন্য একটি মামলার সাক্ষী দিতে তিনি এখন বাইরে রয়েছেন। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না। মামলার কোনো নথিও তিনি হাতে পাননি।  

এ ব্যাপারে মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মো. মিরাজ হোসেন বলেন, গত ১১ জুন ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে এ ঘটনায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। পরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।