ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রাজধানীর পথে পথে মৌসুমি কসাই  

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৬ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২৪
রাজধানীর পথে পথে মৌসুমি কসাই  

ঢাকা: পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ শেষ করে কোরবানির পশু জবাই দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নগরবাসী।  

মাংস বানাতে কসাইয়ের চাহিদা ব্যাপক থাকায় রাজধানীর পথে পথে চলছে মৌসুমি কসাইদের দর কষাকষি।

গরুর দামের ওপর তাদের শ্রমের দর নির্ধারণ হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে তাদের দর পেশাদার কসাইয়ের চেয়ে অনেকাংশেই কম।

সোমবার (১৭ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, চায়ের দোকানদার, দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, মাছ বিক্রেতা, হোটেলের মেসিয়ার, কলকারখানার শ্রমিক শ্রমজীবী মানুষের একটি বড় অংশ কোরবানির দিন মৌসুমি কসাইয়ের কাজ করছেন।

গরু বানিয়ে (জবাই, মাংস কাটা) দিয়ে কিছু অর্থ ও মাংস সংগ্রহ করা তাদের লক্ষ্য।
অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গরু কোরবানির সামর্থ্য তাদের নেই। তাই পরিবারের জন্য ঈদের দিন কাজ করে কিছু টাকার পাশাপাশি মাংস সংগ্রহ করে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা মৌসুমি কসাইয়ের কাজ করেন।

শেওড়াপাড়ার চা বিক্রেতা মো. শিপন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছরই কোরবানির ঈদে গরু বানাই। আমরা চার-পাঁচজন মিলে সারাদিনে চার থেকে পাঁচটি গরু বানিয়ে দিই। এতে কিছু অর্থ উপার্জন হয়। একই সঙ্গে যাদের গরু বানিয়ে দিই, তারা পারিশ্রমিকের পাশাপাশি খুশি হয়ে আমাদের মাংস দেন। সেই মাংস নিয়ে ঈদের দিন বিকেলে বাড়ি যাই।

গাজীপুরের রিকশাচালক আবু মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামে সমাজ থেকে দুই থেকে তিন কেজি মাংসের বেশি পাই না। তাই গত কয়েক বছর ধরে কোরবানির দিন কসাইয়ের কাজ করতে শহরে চলে আসি।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সারাদিন কসাইয়ের কাজ করে পারিশ্রমিক ছাড়াও যে মাংসটুকু পাই, তা আমার এক আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে ফ্রিজে রাখি। পরদিন  মাংস নিয়ে বাড়ি যাই। বাড়ি দূরে হওয়ায় মাংসটা বরফ করে নিয়ে যাই।  
এদিকে কোরবানির দিন যেখানে পেশাদার কসাই একটি কোরবানির গরু কাটতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেন, সেখানে মৌসুমি কসাইদের চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা দিলেই কাজ করে দিচ্ছেন। তবে পেশাদার কসাইরা গরুর দামের ওপর তাদের রেট নির্ধারণ করেছেন। সে ক্ষেত্রে হাজারে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দাবি করেছেন।

এ ব্যাপারে শেওড়াপাড়া পেশাদার কসাই মামুন বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের দিন সকালে থেকে কাজ চলছে। আজ পাঁচটি বড় গরু বানাবো। প্রতিটি গরুর দামের হাজার প্রতি ২০০ টাকা করে রেট নির্ধারণ করা হয়েছে। একজন পেশাদার কসাইয়ের বানানো মাংস আর অপেশাদার কসাইয়ের বানানো মাংসের মধ্যে রাতদিন পার্থক্য রয়েছে। আমরা কৌশল করে হাড় থেকে মাংস আলাদা করি এবং হাড়গুলো অত্যন্ত সুন্দর করে বানানো হয়। এক্ষেত্রে চামড়া নষ্ট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তাই তাদের চেয়ে আমাদের রেটটা বেশি। তবে ঈদের দ্বিতীয় দিন আমাদের রেট অর্ধেকে নেমে যায়।

কোরবানির ঈদ এলেই বেড়ে যায় কসাইদের কদর। এসময় পেশাদার কসাইয়ের পাশাপাশি মৌসুমি কসাইদের কদরও বেড়ে যায়। অনেকে ভালো কসাই না পেয়ে মৌসুমি কসাইদের কাজে নিতে বাধ্য হন।  

জানা যায়, কোরবানি ঈদে রাজধানীতেই গরু-ছাগল মিলিয়ে প্রায় ৫০ লাখ পশু জবাই হয়। ঈদের সময় এত বিপুল সংখ্যক পশু জবাই হওয়ায় পেশাদার কসাইদের দিয়ে পশুর চামড়া ছাড়ানো সম্ভব হয় না। ফলে এসময় বেড়ে যায় মৌসুমি কসাইদের চাহিদা।

এদিকে অদক্ষ কসাইয়ের কারণে প্রতি বছর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, দক্ষ কসাই দিয়ে গরু বানানো উচিত। এতে বিপুল পরিমাণ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে চামড়া শিল্প।

তবে অনেকেই পেশাদার কসাইয়ের অভাবে ঈদের দ্বিতীয় দিন কোরবানি করবেন বলে জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২৪
এসএমএকে/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।