ঢাকা: গত কয়েকদিন ধরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক কর্মকর্তার ছেলের ১৫ লাখ টাকা দিয়ে কোরবানির ছাগল কেনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে বেশ আলোচনা চলছে। একজন রাজস্ব কর্মকর্তার ছেলে কীভাবে এতো টাকা দিয়ে ছাগল কিনতে পারেন- সেটি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
দেশজুড়ে যখন এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে তখন ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ছাগল কেনা মুশফিকুর রহমান ইফাতকে নিজের ছেলে নয় বলে দাবি করেছেন এনবিআর এর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনাল প্রেসিডেন্ট ড. মো. মতিউর রহমান।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) এক সেমিনার শেষে এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। বরং তিনি বলেছেন, ‘এটা কোনো প্রশ্ন নয়। এটা নিয়ে কোনো প্রশ্নের জবাব দেব না। ’
টিসিবি ভবনে অবস্থিত বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের কনফারেন্স রুমে ‘বাংলাদেশের বাণিজ্যনীতি: বিবর্তন, বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ দিক নির্দেশনা’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। সেমিনারে এনবিআর চেয়ারম্যান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের দেশে পাট ছাড়া আর কোনো কাঁচামাল নেই, যেটা আমরা রপ্তানি করতে পারি। যার কারণে সব কাঁচামাল আমাদের আমদানি করতে হয়। এ কাঁচামাল আমদানি করতে হলে আমাদের অন্য কিছু রপ্তানি করতে হবে। আমরা কাঁচামাল আমদানি করে পণ্য তৈরি করে সেগুলো রপ্তানি করি। এর জন্য আমাদের উৎপাদনকারী শিল্প রয়েছে। এ উৎপাদনকারী শিল্পকে এনবিআর এবং সরকার নানাভাবে সাপোর্ট দিচ্ছে।
তিনি বলেন, এনবিআর কয়েক বছর ধরে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ কনসেপ্টটি লালন করছে। এটি দুইভাবে হতে পারে। একটি, আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদার কিছুই বাইরে থেকে আমদানি করবো না। পুরোটাই যেন আমাদের দেশে উৎপাদন হয়, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি। যখনই আমরা আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে ফেলবো, তখন অটোমেটিক রপ্তানি হবে। তাই আমরা প্রথমে মার্কেট থেকে সব বিদেশি পণ্য বিদায় করতে চাই। অর্থনৈতিক এ প্রক্রিয়ার মধ্যে রপ্তানির জায়গা তৈরি হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বাইরের মার্কেটে যেতে হলে নিজেদের সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। সেই সক্ষমতা তৈরির যদি তাগিদ তৈরি না হয়, তাহলে আমরা বাইরের মার্কেটে যেতে পারবো না। যারা পণ্য উৎপাদন করেন, তাদের এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। তাদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কাস্টমস থেকে রাজস্ব আয় হোক, সেটা আমরা আশা করতে পারি না। কারণ কাস্টমসের রাজস্ব আয় ধীরে ধীরে কমবে। কারণ আমাদের কাঁচামাল ও মেশিন আমদানিতে সাপোর্ট দিতে হবে, আবার পণ্য রপ্তানির সময় আমাদের আবার সাপোর্ট দিতে হবে। যত আমরা উন্নয়নশীল দেশ হবো, তত আমাদের কাস্টমস সাপোর্টের জায়গাটা বাড়বে এবং কাস্টমসের আয়ও কমে আসবে। এটা মাথায় রেখেই এনবিআর কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, লেদারে আমরা (এনবিআর) অনেকদিন ধরে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছি। তারপরও লেদার যেভাবে এক্সপোর্ট মার্কেট দখল করার কথা, সেভাবে পারছে না। এখানে মূল সমস্যা কমপ্লায়েন্স ইস্যু।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীনের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন, ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এর (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুব আলম।
বাংলাদেশের ট্রেড পলিসির বিবর্তন, বর্তমান প্রকৃতি এবং ভবিষ্যতে কি ধরনের ট্রেড পলিসি প্রয়োজন সে বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. জাইদি সাত্তার। এর ওপর আলোচনা করেন বিএফটিআই এর সিইও ড. জাফর উদ্দিন, বিল্ড এর সিইও মিসেস ফৈরদৌস আরা বেগম, ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২৪
এসসি/আরআইএস