সাতক্ষীরা: ‘সারারাত মেয়ে মরিয়মকে কোলে নিয়ে মাঠে বসেছিলাম। একটুও ঘুমাতে পারিনি।
কথাগুলো বলছিলেন আফরোজা বেগম। সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কের দু’পাশ থেকে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর একজন তিনি।
জানা গেছে, সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানে বসতঘর হারিয়ে সড়কের পাশের খোলা মাঠে পলিথিন টানিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেই দিনরাত কাটছে অসহায় পরিবারগুলোর। জোটেনি রাতের খাবার। সকালে এক বেলা খিচুড়ি জুটলেও আরেক বেলা খোঁজ নেয়নি কেউ। অনেককে কাটাতে হয়েছে শুধু পানি খেয়ে। এভাবেই ফাঁকা মাঠে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। সবার মুখেই দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তার ছাপ।
সোমবার (১ জুলাই) সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা-বাঙ্গারের মোড়-বাকাল এলাকা থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর রাস্তার পাশের মাঠেই বৃষ্টিতে ভিজে নির্ঘুম রাত কেটেছে তাদের। মঙ্গলবারের উচ্ছেদ অভিযানে আশ্রয়হীন হয়ে পড়া পরিবারের সংখ্যা আরও বেড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বসতভিটা হারিয়ে রাস্তার পাশে খোলা মাঠে পলিথিন টানিয়ে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে অসহায় পরিবারগুলো। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে সারারাত ছেলে-মেয়েকে নিয়ে নির্ঘুম রাত কেটেছে তাদের। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে খাবারের কষ্ট।
আফরোজা বেগম ছাড়াও জেসমিন, রাবেয়া, পারুল ও খাদিজাও নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। তাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই। পড়নে ভেজা জামা-কাপড়। সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগ ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে তাদের বসতঘর। শেষ সম্বল হারিয়ে তারা ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির পাশের খোলা মাঠের এক কোণে পলিথিন টানিয়ে কাটিয়েছে রাত।
এই মাঠের এক কোণে মুড়ি খাচ্ছিলেন আজগর আলী। মুড়ি খেতে খেতে তিনি বলেন, সারারাত কিছু খাইনি। তাই দোকান থেকে শুকনা মুড়ি নিয়ে আসলাম। ১৫ বছর ধরে স্ত্রী-ছেলে নিয়ে এখানে বসবাস করছি। কিন্তু এবার সড়ক জনপথ বিভাগ আমাদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। পরিবারের ১৩ জন সদস্য এখন কোথায় থাকবে?
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোকে দ্রুত পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, পরিবারগুলো পথে বসেছে। মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের দুঃখকষ্ট দেখার মতো না। খোলা আকাশে বৃষ্টিতে ভিজে রাত কেটেছে তাদের। তাদের দ্রুত পুনর্বাসন করা দরকার।
প্রসঙ্গত, সোমবার থেকে সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়ক উন্নয়নের লক্ষ্যে সড়কের দুইপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এতে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে সড়কের পাশে বসবাস করা অনেক পরিবার।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪১ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২৪
এসএম