ঢাকা: ‘ভাগের মা গঙ্গা পায় না’। প্রচলিত এ প্রবাদের অর্থ—কোনো কাজের দায়িত্ব একাধিকজনের ওপর থাকলে তা সুচারু বা সম্পন্ন হয় না।
মিরপুর-কচুক্ষেত মূল সড়কের ভেতরে ভিশন গার্মেন্টস কারখানার মোড় থেকে পূর্বে বিস্তৃত এই অবহেলিত অংশ। সড়কটির ৪ নম্বর ওয়ার্ড অংশে গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনা রয়েছে। রয়েছে কিছু পোশাক কারখানা। সড়কের দুই পাশে দুই ওয়ার্ডের দুজন কাউন্সিলরও আছেন যথারীতি। কিন্তু উল্লিখিত সড়কাংশটি দুই ওয়ার্ডের মাঝামাঝি হওয়ার কারণে এই অংশের দায়িত্ব নেন না কেউ। উভয়পক্ষই করেন ঠেলাঠেলি।
সরেজমিনে দেখা যায়, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এখানে পানি জমেছে। যেন ছোটখাট খালে পরিণত হয়েছে। মানুষ পাশ দিয়ে কোনোমতে হেঁটে চলাফেরা করছে। যানবাহনগুলো এ সড়ক এড়িয়ে চলে।
এই সড়কের পাশে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের অংশে দুইটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, একটি ক্যানসার হাসপাতাল এবং একটি টেকনোলজি কলেজ। আছে সাতটি গার্মেন্টস কারখানা। একটি সুপারশপ, একটি বাজারও আছে। রাস্তার পশ্চিমাংশে ন্যাম ভবন ও বিআরটিএর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে যায় জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক মেরামত নিয়ে ঠেলাঠেলি থাকলেও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রায় দুই তৃতীয়াংশের বসবাস ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে। বিশেষ করে কারখানাগুলোর শ্রমিকদের দুই-তৃতীয়াংশের বসবাস এই ওয়ার্ডে। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মসজিদটিতে নামাজ পড়া সব মুসল্লিও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের। দুই ওয়ার্ডের মানুষে এভাবে মিশে-মিশে বসবাস ও চলাফেলা করলেও সড়কাংশটি মেরামতে এক হন না দায়িত্বশীল কেউ। ফলে নেওয়া হয় না মেরামতের কোনো উদ্যোগ। তাই তো প্রায় দশক ধরে মেরামতের আঁচড় পায় না এ সড়কাংশ। যখন একেবারেই চলাফেরার অনুপযোগী হয়ে পড়ে, পাশের কারখানা বা বাড়ি থেকে ভাঙা ইট-সুড়কি কিছুটা ফেলে কোনোমতে চলাফেরার উপযোগী করেন স্থানীয়রা। আর বৃষ্টি হলে খানা-খন্দক ও গর্তগুলো বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কথা হয় সড়কের মাথায় অবস্থিত লোড স্টার কারখানার শ্রমিক আমেনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি ছুটির পর কারখানা থেকে বাসায় ফিরছিলেন। অসাবধানতাবশত গর্তে পড়ে কাদা মাটি মেখে যায় তার গায়ে। বোরখা খুলে হাতে ধরে তিনি বাসা ফিরছিলেন।
আমেনা খাতুন বলেন, ‘পড়ে গিয়েছিলাম। খেয়াল করিনি। পানির নিচে ভাঙা ইট ছিল, পড়ে গেছি। সড়ক নিয়ে বলে কোনো কাজ হয়! বরং কোনো কথা বলতে চাই না। ’
পাশের দোকানদার শাহাদত বলেন, ‘আমি আড়াই বছর ধরে দেখছি এ রকম ভাঙা। মাঝে মাঝে কারখানাগুলো ইট-সুড়কি ফেলে ভরাট করে। কয়েক মাস পর আবার উঁচু নিচু, ভাঙা-চোরা হয়ে যায়। দুই কমিশনার ঠেলাঠেলি করেন, রাস্তার কোনো কাজ হয় না। ’
কথা হয় ষাটোর্ধ্ব এক ভ্যানচালকে সঙ্গে। তিনি বাসাবাড়ির মালামাল টানেন। সড়কের বেহাল দশা নিয়ে কথা উঠতে তিনি ছড়া কেটে বলেন, ‘কমিশনার জনি.../ কাজের কথা উঠলে বলে কাজ করবো এখনি। ’
এ ছড়া কমিশনারকে শুনিয়েছেন কি না? জানতে চাইলে ওই ভ্যানচালক বলেন, ‘পাগল আছেন!’ বলেই আশপাশে তাকাতে তাকাতে সেখান থেকে চলে যান।
কথা হচ্ছিল পাশের আল আকসা মসজিদের মুসল্লি আলী আসগরের সঙ্গে। তিনি ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কেয়ারী মুনের পাশের গলিতে বসবাস করেন। এশার নামাজ পড়ে বের হয়ে খানিক পূর্বে গিয়ে ঘুরে বাসায় ফিরছিলেন।
তিনি বলেন, বৃষ্টির পানি জমে মসজিদের পাশে থেকে ভিশনের মোড় পর্যন্ত অনেকটাই ডুবে গেছে। এর নিচে ইট-সুড়কি রয়েছে। পাশ দিয়ে কারখানার মেয়েগুলো যাচ্ছে। ওরাই কষ্ট করছে, আমি ওদিকে না গিয়ে উল্টোপথে যাচ্ছি।
আলী আসগর বলেন, সড়কটির দুই পাশে দুই ওয়ার্ড, এজন্য মেরামত করা হয় না। কিছুদিন আগে ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে বিআরটিএর পেছন পর্যন্ত মেরামত করেছে। কিন্তু এই সড়কটির কোনোই ব্যবস্থা হলো না। এভাবে বেশ কয়েক বছর ধরে পড়ে আছে, কে কাকে বলবে—এটা তো বুঝতে পারছি না। কমিশনাররা তো এগুলো দেখে থাকেন। এত বছর কেন মেরামত করছে না বুঝতে পারছি না। এমনিতেই অবস্থা খারাপ। বৃষ্টি হলে নদীর মত হয়ে যায়। এটা তো খুবই খারাপ!’
সড়কের বেহাল অবস্থা নিয়ে কথা হয় ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জামাল মোস্তফার সঙ্গে তিনি। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার এলাকায় কোনো সমস্যা নেই তো। আমার এলাকার সড়কের সব ঠিক আছে। ’
সড়কের অংশটি ৪ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝামাঝি। এটা কি আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসেন সামনাসামনি কথা বলি। ’
আর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হুমায়ুন কবির জনির সঙ্গে কথা বলতে তার মোবাইল ফোন নম্বরে কল দিলে প্রথম দুদিন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে কল বাজলেও অন্য প্রান্ত থেকে সাড়া মেলেনি।
এই ওয়ার্ডের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, কাজটি বেশ বড়। কিন্তু সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ কম। এজন্য কেউই কাজটি করেনি। বরাদ্দ পেলে নিশ্চয়ই কাজটি হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২৪
জেডএ/এইচএ/