বরিশাল: বরিশালের বাকেরগঞ্জে কলেজশিক্ষার্থী লোপা আক্তারের (১৭) মরদেহ উদ্ধারের ঘটনাকে হত্যা উল্লেখ করে এর বিচারের দাবিতে জোরদার আন্দোলন শুরু হয়েছে। অন্যদিকে লোপার মা ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ এনে মামলা করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুপুরে বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কামারখালী বাজার ও আলহাজ্ব হযরত আলী ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন লোপার সহপাঠীরা।
লোপা দাড়িয়াল ইউনিয়নের উত্তমপুর কালেঙ্গার বাসিন্দা নাছির হাওলাদারের মেয়ে এবং কামারখালী আলহাজ্ব হযরত আলী ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। গত ২২ জুন ভোরে নিজের কক্ষে তার গলায় ফাঁস দেওয়া মরদেহ পাওয়া যায়। তার মরদেহ অস্বাভাবিক অবস্থায় ছিল বলে অভিযোগ স্বজনদের।
কর্মসূচি চলাকালে সহপাঠীরা বলেন, লোপা আক্তার মেধাবী ছাত্রী। সে কখনো আত্মহত্যা করতে পারে না, আবার তার শারীরিক এমন কোনো সমস্যা ছিল না, যে কারণে সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা চাই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তারা যতই ক্ষমতাশালী হোক না কেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ফাঁসি হোক।
এদিকে ওই ঘটনায় লোপার মা জেসমিন বেগম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে হত্যার আগে লোপাকে ধর্ষণের অভিযোগও আনা হয়েছে।
বাদীর আইনজীবী মো. মশিউর রহমান (সোহেল) জানান, মামলাটি আমলে নিয়ে আদালতের বিচারক এফআইআর হিসেবে থানাকে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় দাড়িয়াল ইউনিয়নের উত্তমপুর কালেঙ্গার বাসিন্দা মন্নান হাওলাদারের ছেলে ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ হাওলাদার (৩৫) এবং তার বড় ভাই রাকিবুল আলম হাওলাদারের (৪২) নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া আরও ২/৩ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বাদী জেসমিন বেগম বলেন, মামলার প্রধান আসামি রিয়াজ হাওলাদার প্রেমজনিত বিষয় নিয়ে লোপাকে ব্ল্যাকমেইল করার পাশাপাশি কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। প্রস্তাবে লোপা রাজি না হলে ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করে রিয়াজ। বিষয়টি হত্যার ঘটনার কিছুদিন আগে লোপা আমাকে জানায়।
বাদীর অভিযোগ, এ ঘটনার সূত্র ধরে গত ২১ জুন রাতে মামলার আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে লোপাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এরপর লোপার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে জানালার গ্রিলের সঙ্গে মরদেহ বেঁধে আসামিরা চলে যান। আর হত্যার আগে মামলার প্রধান আসামি রিয়াজ ধর্ষণ করেন লোপাকে।
জেসমিন বেগম জানান, ২২ জুন ফজরের নামাজের জন্য লোপাকে ডাকতে তার কক্ষে যান বাদী। ওইসময়ই লোপাকে হাঁটু গেড়ে ফ্লোরে বসা এবং তার গলায় পেঁচানো ওড়না জানালার গ্রিলের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পান তিনি। তখন বাদী চিৎকার দিলে অন্য স্বজনদের সঙ্গে আসামিরাও ঘটনাস্থলে আসেন এবং লোপা হার্ট অ্যাটাক করেছে বলে মোবাইল ফোনে সবাইকে জানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। লোপার মরদেহ তাড়াহুড়ো করে দাফনের ব্যবস্থাও করেন আসামিরা।
লোপার মায়ের অভিযোগ, লোপার সঙ্গে কলেজপড়ুয়া একটি ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ ঘটনা জানতে পেরে রিয়াজ হাওলাদার তার কন্যাকে ব্ল্যাকমেইল করে কুপ্রস্তাব দেন। এতে লোপা রাজি না হওয়ায় রিয়াজ তার কন্যাকে ধর্ষণের পর মেরে ফেলেছেন।
এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ডাকুয়া সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দাড়িয়াল ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াজের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে জেলা পর্যায়ের নেতাদের কাছে জানিয়েছি। দ্রুতই তার ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন, এখনো এ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র আমার হাতে এসে পৌঁছায়নি। পৌঁছালে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২৪
এমএস/এইচএ/