ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

চাঁদপুরে সরকারি খাল দখল করে বালুর রমরমা ব্যবসা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০২ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২৪
চাঁদপুরে সরকারি খাল দখল করে বালুর রমরমা ব্যবসা দুই পাশ দখল করে বালু ব্যবসা করার কারণে সরু হয়ে গেছে জমজমিয়া খাল

চাঁদপুর: চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ডাকাতিয়া নদী থেকে শুরু হওয়া মতলব দক্ষিণ পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি জমজমিয়া খাল দখল অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে খালটির মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর বাজারের উত্তর অংশ দখল করে বালুর রমরমা ব্যবসা করছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।

 

যার ফলে খালটি সরু হয়ে পরিবেশের বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে। আবার বালু-ইটসহ নানান সরাঞ্জামাদি পরিবহনে ব্যবহৃত বালু ব্যবসায়ীদের ট্রাক্টর ওই এলাকার সড়কে নিয়মিত যানজটের সৃষ্টি করছে। এসব কারণে ওই অঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

সরেজমিন নারায়ণপুর বাজার অংশে গিয়ে দেখা গেছে, ব্রিজের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে ‘বালুখেকো’দের একাধিক ব্যবসা। খাল দখল করে বালুর স্তূপ করে রাখা হয়েছে। ধনাগোদা নদী হয়ে এই খালে প্রবেশ করে বালুবাহী বাল্কহেড। একইসঙ্গে ব্যবসায়ীদের অনেক মালামাল খালটিতে থাকার কারণে খুব সহজে পরিবহনের সুযোগ হয়েছে।

এই খালটি সাধারণ ব্যবসায়ীদের জন্য আশীর্বাদ হলেও ওই বালুখেকো অসাধু ব্যবসায়ীরা এখন ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ও দখল করে খালটির অস্তিত্ব বিলীন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তারা বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করতে ব্যস্ত। তাদের এসব ব্যবসার জন্য খালটি সরু ও ভরাট হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। যে কারণে পরিবেশ বিপর্যয়সহ বন্যার সময় এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।  

খাল দখল করে স্তূপ করে রাখা বালু ব্যবসায়ীদের বালু ও ইট

পরিবেশ অধিদপ্তরও বিষয়টি সম্প্রতি দৃষ্টিতে এনেছে। জমজমিয়া খালের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ইতোমধ্যে ৬৪ জেলা খাল খনন প্রকল্পের আওতায় পরিকল্পনাতে প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সরকারি বরাদ্দ পাওয়া গেলে এটির খনন কাজ শুরু করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।  

মতলব দক্ষিণ উপজেলার দায়িত্বরত মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্তু পাল বলেন, ৬৪ জেলা খাল খননের প্রস্তাবনার তালিকায় জমজমিয়া খালটিও রয়েছে।  

খালের দুই পাশ দখল করে বালু, ইটসহ নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসা করেন মোতালেব খান, ফজলুল করিম সেলিম, নাছির উদ্দিন মিয়াজী, মজিবুর রহমানসহ আরো কয়েকজন।  

এদের মধ্যে মোতালেব খান বলেন, আমরা খাল দখল করিনি। খালের মধ্যে আমাদের আরও ৪০ ফুট আছে। তবে দক্ষিণ পাশে দখল থাকতে পারে। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি সরকারিভাবে আমাদের অংশটুকু বুঝিয়ে দিক।

বক্তব্যের জন্য মজিবুর রহমান ও নাছির উদ্দিন মিয়াজীকে খুঁজে তাদের প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যায়নি। তবে ফজলুল করিম সেলিম বলেন, আমরা সরকারি কোনো খাল কিংবা সম্পত্তি দখল করিনি। তবে তিনি বালু ব্যবসার কথা স্বীকার করেছেন।  

পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, পরিবেশের বিপর্যয় হয় এমন যে কোনো বিষয়ে আমরা কাজ করছি। সরকারি খাল দখল হলে আমরা অবশ্যই সেখানে যাব। এ ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।  

মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতিমা সুলতানা বলেন, এই অঞ্চলের লোকদের জন্য খালটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি কোনোভাবেই দখল হতে দেওয়া যাবে না। সরকারি এই খালটির পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে এবং অবৈধভাবে কোনো দখল থাকলে তা আমরা দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪১ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।