গাইবান্ধা: গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটাসহ চার উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি কিছুটা কমলেও এখনও রয়েছে বিপৎসীমার ওপরে।
অন্যদিকে তিস্তার পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।
জেলায় বন্যার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিতে তলিয়ে গেছে আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, কাউন ও আমন বীজতলাসহ আড়াই হাজার হেক্টরের বেশি জমির ফসল। ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের।
পানি ওঠায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ৮০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব এলাকায় বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু জায়গা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ আশ্রয়কেন্দ্রে। পানি কমলেও দুর্ভোগ-ভোগান্তি বাড়ছে মানুষের।
রোববার (৭ জুলাই) বিকেল ৩টায় গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যানুযায়ী, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ১৩ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭১ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি ১১ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে করতোয়া নদীর পানি ১৪ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৫৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ও তিস্তার নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদ-নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট, ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি প্লাবিত হয়েছে।
জানা যায়, অতি বর্ষণ ও উজানের ঢলে জেলার চার উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী প্লাবিত এলাকার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তীত রয়েছে। জেলার সবগুলো নদ-নদীর পানি দ্বিতীয় দফায় বেড়ে আবার তিন নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা- এ চার উপজেলায় বন্যায় ২৯টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বিপৎসীমার ওপরে থাকায় ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত সদরের কামারজানি, ঘাগোয়া, ফুলছড়ির ফজলুপুর, এরেন্ডাবাড়ি এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এসব এলাকার পানিবন্দি মানুষ শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। গো-চারণ ভূমি তলিয়ে যাওয়ায় প্রকট আকার ধারণ করেছে গো-খাদ্যের সংকট। চুলা ও টিউবওয়েল ডুবে থাকায় সংকট রয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের। টয়লেট ডুবে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। কয়েকটি এলাকায় ভাঙনও দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে পোকামাকড়ের ভয়।
ফলে লোকজন আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন অন্যত্র।
প্লাবিত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবারের সংকট। বন্যার পানি সঠিকভাবে না ফুটিয়ে পান করায় অসুস্থ হচ্ছেন অনেকেই।
জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, পানিবন্দি এসব মানুষের জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট ১৮১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে সাঘাটা উপজেলায় রয়েছে ৩৬টি, সুন্দরগঞ্জে ৪৮টি, ফুলছড়িতে ২৩টি, সদরে ২৪টি, সাদুল্লাপুরে ৩৩টি, পলাশবাড়ীতে ছয়টি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ১১টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে।
এদিকে বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরে বন্যার পানি ওঠায় সদর উপজেলার ১৭টি, ফুলছড়িতে ১৪টি, সাঘাটায় ২১টি ও সুন্দরগঞ্জে ১১টিসহ জেলার মোট ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সাতটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও তিনটি দাখিল মাদরাসায় পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রাথমিক ও জেলা শিক্ষা বিভাগ।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, চলমান বন্যায় চার উপজেলায় দুই হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, বীজতলা ও শাকসবজি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। দ্রুত পানি নেমে গেলে ক্ষতি কম হবে। অন্যথায় ফসল পচে নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, গাইবান্ধায় তিন নদ-নদীর পানি কমছে। এর মধ্যে ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। তবে তিস্তার পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, জেলা সদরে তিন হাজার ৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া চার উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নের ২০ হাজার পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা করে মোট ১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলায় মেডিকেল, কৃষি, স্বেচ্ছাসেবক এবং লাইভস্টোক টিম রয়েছে। একাধিক এনজিও বন্যার্তদের সেবায় কাজ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২৪
এসআই