ঢাকা, শনিবার, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কিছু বিষয় রাজপথে সমাধান সম্ভব নয়: শিক্ষামন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২৪
কিছু বিষয় রাজপথে সমাধান সম্ভব নয়: শিক্ষামন্ত্রী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, কিছু কিছু বিষয় থাকে যেগুলো রাজপথে সমাধান করা সম্ভব নয়।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে জাতীয় শিক্ষাক্রম পোর্টাল, বিষয়ভিত্তিক অনলাইন প্রশিক্ষণ ও নৈপুণ্য অ্যাপ বিষয়ক অনলাইন প্রশিক্ষণের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

তবে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকায় এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো মন্তব্য তিনি করেননি।

কোটা আন্দোলনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমের কল্যাণে আমরা জানতে পেরেছি, আমাদের সর্বোচ্চ আদালতে এই বিষয় নিয়ে আগামীকাল একটি শুনানি হবে। সেক্ষেত্রে একটি সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা আছে। যেহেতু এটি বিচারাধীন বিষয়, তাই এটি নিয়ে মন্তব্য করা সঠিক হবে না। তবে আমরা ঘটনাচক্রে দেখেছি, যখন থেকে কোটা তুলে নেওয়া হয়েছে, তখন থেকে অনেক জেলায় শিক্ষার্থীরা সরকারের যে সমস্ত পদগুলোতে কর্মসংস্থানের সুযোগ ছিল, সেটা সম্ভব হয়নি। চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে একেবারেই তারা পিছিয়ে ছিল। নারীদের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, ৫০টি জেলা থেকে কোনো ধরনের প্রতিনিধিত্ব ছিল না। যারা পাহাড়ি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সেখান থেকেও আগে যেভাবে সুযোগ পেতেন, সেটা সম্ভব হয়নি। এটা কোটা একেবারেই তুলে দেওয়ার কারণে হয়েছে। এখন যেহেতু আদালত থেকে একটা সিদ্ধান্ত আসবে, তাই আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

তিনি আরও বলেন, অনেকে এটি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। কিছু কিছু বিষয় থাকে যেগুলো রাজপথে সমাধান করা সম্ভব নয়। যেহেতু পক্ষভুক্ত হয়েছে। আমরা আশা করছি, এই বিষয়ে একটি নির্দেশনা আসবে। সরকারের নির্বাহী বিভাগ সার্বিকভাবে কোন কোন জেলা পিছিয়ে আছে, কোন কোন জনগোষ্ঠী পিছিয়ে তাদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি দেখবে। অর্ন্তভুক্তিমূলক উন্নয়ন জনগণের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার। সুতরাং, সেই অর্ন্তভুক্তিমূলক উন্নয়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করার জন্য তার সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর দিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শুধু সমাধান দিয়ে দিলেই শিক্ষার্থীদের উত্তর দেওয়ার দক্ষতা আমরা মূল্যায়ন করতে পারবো না, বিষয়টি কিন্তু তা নয়। সমাধান দিয়ে দেওয়ার মধ্যে মার্ক পেয়ে যাওয়ার কোনো বিষয় নেই। তবে যাতে করে বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেজন্য আমরা চেষ্টা করছি, প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে এই কাজগুলো না করে। এই বিষয়ে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিম নিয়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতির বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার শিক্ষকদের প্রতি যে সম্মানবোধ, শিক্ষার প্রতি তার যে দায়িত্ববোধ এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। শিক্ষাবান্ধব প্রধানমন্ত্রী বলতে আমরা শেখ হাসিনার নামই সব সময় বলি। তার সময়ই শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষায় যে বিনিয়োগ, শিক্ষায় যে বাজেট বরাদ্দ, সেটা ২০০৬ সালের সমগ্র বাজেটের থেকে বেশি। শিক্ষকদের বেতন-ভাত বর্তমানে যে অবস্থায় এসেছে, এটা কিন্তু তারই অবদান। সুতরাং আমাদের আস্থাশীল থাকতে হবে। শিক্ষায় যে বিনিয়োগ বেড়েছে, আগামীতেও বাড়বে। এই বিনিয়োগ যত বাড়বে, তত শিক্ষকদেরও সম্মানী এবং তাদের প্রাপ্য বাড়তে থাকবে।

মহিবুল হাসান আরও বলেন, পহেলা জুলাইয়ের পর থেকে যেসব শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করবেন এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানেও যেসব কর্মকর্তা যোগদান করবেন, তাদের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা আছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনা অবশ্যই সরকারের সার্বিক একটি নির্দেশনা। যেহেতু আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, সেহেতু এই বিষয়ে আলাদ মন্তব্য করবো না আমি। কারণ এটি সরকারের সার্বিক ভাবনার বিষয় এবং নীতি নির্ধারণের বিষয়।

এর আগে জাতীয় শিক্ষাক্রম পোর্টাল, বিষয়ভিত্তিক অনলাইন প্রশিক্ষণ ও নৈপুণ্য অ্যাপ বিষয়ক অনলাইন প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা একটি হিসাবে দেখেছি, ৩০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একেবারে কোনো ধরনের তথ্য-প্রযুক্তি সরঞ্জাম নেই। আমরা এর একটি তালিকা করেছি। আমরা ৩০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্মার্ট ক্লাস রুম করার জন্য অনুদান দিয়ে যাবো। প্রাথমিকভাবে আমরা পাঁচ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নির্ধারণ করেছি।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ। এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মোখলেস উর রহমান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২৪
এসসি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।