বরিশাল: দীর্ঘ দুই সপ্তাহের অধিক সময় ধরে কোটা সংস্কারের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই আন্দোলন করে আসছিলেন। তবে মঙ্গলবার এ আন্দোলনকে ঘিরে হঠাৎ বিএম কলেজে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে মসজিদে আটকে পড়া ছাত্রলীগ কর্মীকে উদ্ধার করে আনতে গিয়ে শিক্ষক ও পুলিশ সদস্যরা আহত হন।
এ ঘটনায় বরিশাল মেট্রোপলিটনের কোতোয়ালি মডেল থানা ও এয়ারপোর্ট থানায় এখনও কোনো মামলা দায়েরও হয়নি। যদিও বিএম কলেজের ঘটনায় কি হবে তা না জানা গেলেও নথুল্লাবাদ এলাকায় শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা কনস্টেবল জালাল আহম্মদ শরীফ পুলিশ বক্সে হামলার ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ বক্সে হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতির বিষয়টি বুধবার (১৭ জুলাই) সকালে অতিরিক্ত উপ–পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. ফজলুল করিম জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত মামলা দায়েরের পর জানানো হবে বলে জানান তিনি।
আর এয়ারপোর্ট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন বলেন, নথুল্লাবাদের ঘটনা মামলা হওয়ার কথা থাকলেও খোঁজ না নিয়ে কিছু বলতে পারছি না।
এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে চলা এ আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের কাছাকাছি স্থানেই প্রতিনিয়ত পুলিশ সদস্যদের অবস্থান ছিল। যারা শিক্ষার্থীসহ সকলের জান-মালের নিরাপত্তার কাজটিও করে যাচ্ছেন দক্ষভাবে। তবে হঠাৎ করেই মঙ্গলবার পুলিশের ওপর চড়াও হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করছে পুলিশ। যেখানে মঙ্গলবার সকাল থেকে নথুল্লাবাদে বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরসহ একাধিক নেতাকর্মীর উপস্থিতি কিছুটা ভাবিয়ে তুলেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে।
যদিও ছাত্রদলের একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই অবস্থানের কারণেই মঙ্গলবার রাতে সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরসহ বেশ কয়েকজনকে সন্ধান করেছে পুলিশ। যার সত্যতা নিশ্চিত করে মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে জানিয়েছেন- আর কারও বাসায় পুলিশ গিয়েছে কিনা না সেটা খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বলতে পারছেন না, তবে গেলো রাতে তার বাসায় পুলিশ গিয়েছিলো। বাসায় গিয়ে তাকে না পেয়ে চলে যায় তারা।
তিনি বলেন, এর আগে আমার এলাকা থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে জড়িত এক ছেলেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে এতে আমি ভয় পাই না। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে গতকাল নথুল্লাবাদে ছিলাম। এজন্য দৃষ্টিতে হয়তো এসেছি। আমার ওপর হামলা– মামলা হলে, কিংবা আমি জেল খাটলেও এখন কিছু করার নেই।
যদিও কাউকে গ্রেপ্তার বা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকের কোনো ঘটনা এ পর্যন্ত ঘটেনি বলে জানিয়েছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ বিভাগ।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের সামনের বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৫টার দিকে পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে আন্দোলন স্থল থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। আর ওই সময় তাদের কয়েকজন সহপাঠীকে আটক রাখার তথ্যে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা কনেস্টাবল জালাল আহম্মদ শরীফ পুলিশ বক্সে হামলা চালায় শিক্ষার্থীরা।
তবে কাউকে আটক করা হয়নি জানিয়ে পুলিশ সদস্যরা বলছে, শিক্ষার্থীরা আকস্মিক শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা কনস্টেবল জালাল আহম্মদ শরীফ পুলিশ বক্সে হামলা করে, এ সময় তারা পুলিশ সদস্যদের কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করার পাশাপাশি পুলিশ বক্সে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২৪ রাউন্ড শর্টগানের রাবার বুলেট ও ৮ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) আলী আশরাফ ভূইয়া বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কোনো তথ্য যাচাই না করে পুলিশ বক্সের দিকে তেড়ে আসেন। কোনো এক ছাত্র দৌড়ে পুলিশ বক্সে ঢুকলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তবে সর্বোচ্চ নমনীয়ভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২৪
এমএস/নিউজ ডেস্ক