পঞ্চগড়: চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাঝে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে কটাক্ষ করার অভিযোগ এনে লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের বই ছিড়ে ছিড়ে নদীর পানিতে ফেলে দিয়েছেন বইপ্রেমী ও পরিবেশকর্মী মাহমুদুল ইসলাম মামুন।
বুধবার (১৭ জুলাই) বিকেলে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে লাইভে মনের কথা জানাতে বইটি ছিড়েন মামুন।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের সূত্র ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ স্লোগান নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাফর ইকবাল। তার নিজহাতে লেখা একটি চিরকুট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই তার প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেছেন। বিভিন্ন প্রকাশনী তার লেখা বই বিক্রি না করার ঘোষণার মাঝে নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনকারীরা জাফর ইকবালের লেখা বিভিন্ন বই পুড়ে দেন।
এদিকে একজন লেখক ও শিক্ষাবিদের এমন মন্তব্যে ক্ষোভ থেকে এ কাজটি করেছেন দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় আজিজনগর গ্রামের বাসিন্দা মামুন।
১ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা ও দেখা যায়, আপনার (জাফর ইকবাল) লেখা অনেক বই আমি গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষকে পড়িয়েছি। অনেক কষ্টের টাকায় বইগুলো কিনেছি। আর নয়, আজকে আপনার বই ‘থিওরি অফ রিলেটিভিটি’ আমি ছিড়ে ছিড়ে নদীতে ফেলবো। আজকে গ্রাম-গঞ্জে থেকেও আমি প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি আপনাকে ভাসিয়ে দিলাম। আপনার মতো বোদ্ধা, অসাধুদের উসকে দেওয়ার মতো মানুষের প্রয়োজন নেই। আপনি আর বই লেখিয়েন না, আমাদের অনেক প্রকাশকও আপনার লেখা আর ছাপাবেনা। সবাই জানেন আমি অনেক বছর ধরে ঘুরে ঘুরে বই পড়াই, এখনো পড়াবো। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস পড়ানোর জন্য বাংলাদেশে অনেক লেখক রয়েছে, আমি তাদের বই পড়াবো। আপনার এমন কাল্পনিক বৈজ্ঞানিক কাহিনি আর লাগবে না। বড় দুঃখে এ কাজ করলাম।
এ বিষয়ে মাহমুদুল ইসলাম মামুন বাংলানিউজকে বলেন, বেশ কিছুদিন থেকে মন খারাপ, মনে কষ্ট। নানা কারণে উনি (জাফর ইকবাল) ছাত্র সমাজের মন থেকে উঠে গিয়েছেন। উনি বা উনার মতো কেউ কেউ চাইলে এগুলো আগেই মীমাংসা করতে পারতেন। সেটাতো করেননি, আবার কটাক্ষ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে। এটাতো যে কারো মনে কষ্ট লাগার কথা। এটার কারণে আমার মনের কষ্টে এটা করেছি। তার (জাফর ইকবাল) লেখা আরও অনেক বই আমার সংরক্ষণে আছে, এখন থেকে সেসব বই আর পড়াবো না এবং বিতরণও করবোনা। আমার মৃত্যুর আগ থেকে যেন আল্লাহ্ চারাগাছ বিতরণ করায়, বই পড়ায়। সব বই পাড়াবো, কিন্তু উনার (জাফর ইকবাল) বই আর পড়াবো না। এর মাধ্যমে বড়রা বা ছোটরা জানুক, সামাজিক দায় থাকে।
বইপ্রেমী ও পরিবেশকর্মী মামুন বাংলানিউজকে আরো বলেন, বর্তমান অবস্থা নিয়ে বসে সমাধান করা যেত। বর্তমান ৩০ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। আমার মতে সেটা কমিয়ে ১০ শতাংশে আনা যেত। একেবারে যারা অসহায় মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে তাদের ১০ শতাংশ সুবিধা দিয়ে বাকিটা মেধাবীদের সুযোগ দেওয়া যেত। আমার মতে এভাবে সমস্যা সমাধান করা যেত।
জানা গেছে, পরিবেশকর্মী মাহমুদুল ইসলাম মামুনের গাছ এবং বই বিলানো নেশা। তার সংরক্ষণে রয়েছে বিভিন্ন ধর্মীয় বইসহ দেশের নামকরা অসংখ্য লেখকের বই। এসব বই স্থানীয়রা পড়ে আবার ফেরত দেন। এভাবেই চলছে তার দীর্ঘ বছরের কর্মযজ্ঞ। তবে এবার সংক্ষুব্ধ হয়ে লেখক জাফর ইকবালের লেখা এক বই ছিড়ে নদীতে ফেলেছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৪
জেএইচ