ঢাকা, রবিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বরিশালে ১৮ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত যা ছিল আলোচনায় 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫১ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২৪
বরিশালে ১৮ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত যা ছিল আলোচনায় 

বরিশাল: গত ১৮ জুলাই রাতে ইন্টারনেটসেবা বন্ধ হওয়ার পর গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ নিয়ে বিপাকে পড়েন সাংবাদিকরা। অফিসে সংবাদ সংশ্লিষ্ট ছবি, ভিডিও ও নিউজ পাঠাতে হিমশিম খেতে হয় রিপোর্টারদের।

আর নিউজ সংকটের মধ্যে স্থানীয় যে কয়টি পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে তাতে ছবির আধিক্য ছিল বেশি।  

যদিও কারফিউতে বরিশাল স্বাভাবিক থাকায় সংবাদগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম, মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়গুলোর উপস্থাপিত হয়েছে বেশি।

যার মধ্যে বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ ও বরিশাল মেট্রোপলিটনের তিন থানা মিলিয়ে চারটি থানায় হামলা ও নাশকতার অভিযোগে দায়ের হওয়া ৬টি মামলা এবং বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার হওয়ার সংবাদ ছিল উল্লেখযোগ্য।  

ছয় মামলায় ১০৩ জন এজাহারভুক্ত ও ৩ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। আর মঙ্গলবার পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ৭৮ জন। এছাড়া কারফিউ ভঙ্গ করার দায়ে বরিশাল নগর ও জেলায় শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

অপরদিকে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় আটকে থাকা প্রায় দুইশত পর্যটককে ৪ টি বাসের মাধ্যমে সড়কপথে ঢাকার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে সেনাবাহিনী। যে কাজে জেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্যরা সহযোগিতা করেছেন।

এছাড়া সাংবাদিক সেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্যোগের আয়োজনে কারফিউ চলাকালীন সময়ে সাধারণ ভাসমান ও অসহায় মানুষদের জন্য বরিশাল নদী বন্দরে রাতের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। যা ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে নগরজুড়ে।  

যদিও সেইসঙ্গে রোববার থেকে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর পানিও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, মঙ্গলবার বিকেলে জোয়ারের সময় নদীর পানি এতোটাই বৃদ্ধি পায় যে নগরসহ উপকূলীয় অঞ্চলের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়।

এর বাইরে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দিবাগত রাতে দীর্ঘ ৯ ঘণ্টার বেশি সময় পরে (রাত সাড়ে ৯ টার দিকে) বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়ক থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার ঘটনা আলোচনায় ছিল।  

ফলে ১০ ঘণ্টার মাথায় ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা এবং ঝালকাঠি ও বরিশাল জেলার একাংশের সঙ্গে ঢাকা, খুলনাসহ বরিশাল নগরের সাথে সড়ক যোগাযোগ সচল হয়ে মানুষের ভোগান্তি লাঘব হয়।

শুক্রবার (১৯ জুলাই)

বরিশালে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষ, নগর বিএনপির আহ্বায়ক -সদস্য সচিবসহ ২০ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেল পৌনে চারটার দিকে নগরীর চৌমাথা বাজার সংলগ্ন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে ঘটা এ ঘটনায় মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গাজি নইমুল হোসেন লিটুসহ ৫ জন বলে জানিয়েছেন সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গির।  

এছাড়াও আহত হয়েছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার ও যুবদল নেতা মো. রিপনসহ ১০ জনকে। এর মধ্যে ৬ জন বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন। এই সংঘর্ষের আগে নগরে আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ও বিএনপি কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে।

এদিকে শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত কারফিউ শুরুর আগে শেষবারের মতো মাত্র এক ঘণ্টার জন্য বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (২০ জুলাই)

নির্দেশনার দুই দিন পর ২০ জুলাই (শনিবার) রাত ১ টার দিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ৩ শত শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে বাধ্য করে কর্তৃপক্ষ। পরে হলগুলো সিলগালা করে দেওয়া হয়। শনিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল কাইয়ুম।

এদিকে শনিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত কারফিউর চারদিনে বরিশাল নগরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। কোনো ধরনের সড়ক অবরোধ কিংবা জ্বালাও-পোড়ায়ের ঘটনা ঘটার খবর পাওয়া যায়নি নগরসহ জেলাজুড়ে। এদিকে গণপরিবহন চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ থাকায় রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল। সেইসঙ্গে নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট বসানোর পাশাপাশি র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়।  

জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, বরিশাল নগরসহ জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের সদস্যদের পাশাপাশি ৬ প্লাটুন বিজিবি ও ৭ প্লাটুন সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

অপরদিকে কারফিউ চলাকালীন সময়ে জরুরি প্রয়োজন এবং অনুমোদিত ব্যক্তির বাইরেরে সড়কে কেউ চলাচলের চেষ্টা করলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছে এবং ফিরে যেতে হয়েছে। প্রতিদিন সকালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানে অনেকে লাঠিপেটারও শিকার হয়েছেন, আবার অনেককে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

যদিও প্রথম দিন (শনিবার) কারফিউ শিথিলের সময় নগরে বিক্ষোভ মিছিল ও পথচারীদের মাঝে কালো ব্যাজ বিতরণের চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদের নেতাকর্মীরা। তবে পুলিশি বাধায় তারা নগরের প্রধান সড়ক সদর রোড ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। আর ওই সময় পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়ান বাসদ জেলা শাখার সমন্বায়ক ডা. মনীষা চক্রবর্তী।

তবে প্রতিদিন শিথিলকালীন সময়ে অনেকে পরিস্থিতি দেখতে ঘর থেকে সড়কে নেমেছেন, ফলে পাড়া-মহল্লার অলিতে-গলিতে ছিল স্বাভাবিক দিনের মতো মানুষের আড্ডা। বিকেলের দিকে ফাঁকা সড়ক ও মাঠগুলোতে শিশু-কিশোর ও তরুণরা ক্রিকেট ও ফুটবল খেলায় মগ্ন ছিলেন। তবে অন্ধকার নামার পর গোটা নগর ছিল অনেকটাই শুনসান।

এদিকে কারফিউর দ্বিতীয় দিন থেকে আমদানি সংকটের কথা বলে বরিশালের বাজারগুলোতে সবজি, মাছসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।

রোববার (২১ জুলাই)

বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বরিশাল নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে উত্তর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. সালাউদ্দিন পিপলু, মহানগর মৎস্যজীবী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফেরদৌস হাওলাদারসহ বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের ১৬ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানোর ঘটনা।

অপরদিকে এদিন দুপুরে হিজলায় উপজেলায় নিজ দোকান থেকে মুদী দোকানি মো. সুলাইমান (২৩) এর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। যদিও প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ওই ব্যবসায়ী আত্মহত্যা করেছেন, তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছে থানা পুলিশ।

এদিকে রোববার আপিল বিভাগের রায় ঘোষানর পর কোটা সংস্কার নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমন্বায়ক সুজয় বিশ্বাস শুভ বলেছেন, আমরা আমাদের সারাদেশের সমন্বয়কদের সঙ্গে কথা বলছি, আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে আমরা আমাদের পরবর্তী করণীয় বলব। আর এখনও পর্যন্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্ত যে- ‘কারফিউ চলাকালীন আমরা শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যাচ্ছি না’।

সোমবার (২২ জুলাই) রাতে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) বরিশাল জেলার ১০ উপজেলায় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা এবং নগরে ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করার ঘোষণা আসে।

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই)

কারফিউ শিথিল থাকলেও এসময় কোনো ধরনের মিছিল-সভা, সমাবেশ করার সুযোগ নেই বলে হুঁশিয়ারি দেয় পুলিশ প্রশাসন। এছাড়া এদিন দুপুরে কুয়াকাটায় আটকে পড়া দুইশত পর্যটককে ৪টি বাসের মাধ্যমে বরিশাল হয়ে ঢাকায় পৌঁছে দিয়েছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এদিকে হল থেকে মধ্যরাতে নামিয়ে দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখনও বরিশালে আটকা রয়েছেন। তারাও যে কোনো মূল্যে নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছাতে চান।

অপরদিকে এদিন বরিশালের বাকেরগঞ্জে স্ত্রীর ছুরিকাঘাতে স্বামী স্কুল শিক্ষক শহিন হাওলাদার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

 বাংলাদেশ সময়: ১১৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২৪
এমএস/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।