ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

৫ দিন পর খুলেছে সচিবালয়, প্রবেশে ব্যাপক তল্লাশি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২৪
৫ দিন পর খুলেছে সচিবালয়, প্রবেশে ব্যাপক তল্লাশি

ঢাকা: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে টানা পাঁচ দিন পর সরকারি-বেসরকারি অফিস চার ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। খুলেছে সচিবালয়ও।

তবে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রটিতে প্রবেশে ব্যাপক তল্লাশি করা হচ্ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থারও জোরদার করা হয়েছে।  

সচিবালয়ের সামনে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। প্রবেশ ফটকে পুলিশ সদস্যের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। তারা ব্যাপক তল্লাশি করছেন। এছাড়া গাড়ি ও দর্শনার্থীদের উপস্থিত কম লক্ষ্য করা গেছে।  

বুধবার (২৪ জুলাই) সচিবালয়ে ১২ টার মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু ‍মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ঘুরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাভাবিক উপস্থিতি দেখা গেছে।

প্রসঙ্গক, আজ ও আগামীকাল সরকারি-বেসরকারি অফিস চলবে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত। ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে কারফিউ ৭ ঘণ্টা শিথিল। অন্যান্য জেলার ক্ষেত্রে নিজ নিজ কর্তৃপক্ষ (জেলা প্রশাসক) এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

সচিবালয় ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। অনেক মন্ত্রীও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তার কার্যালয়ে উপস্থিত হন এবং কর্মকর্তাদের কাছে একে ওপরে খোঁজ খবর নেন। তবে আজকে সচিবালয়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। প্রবেশের ৫টি গেটের মধ্যে দুটি গেইট বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিটি গেটে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দেখা গেছে। যারা ব্যাগ নিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে চাচ্ছেন, তাদের ব্যাগও তল্লাশি করা হচ্ছে। নারীদের তল্লাশি করার জন্য নারী পুলিশও কাজ করছেন।  

সচিবালয়ে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি দেখা যায়নি। এজন্য এক ও দুই নম্বর গেটের মাঝামাঝি দর্শনার্থী অপেক্ষা কক্ষ দর্শনার্থী শূন্য দেখা গেছে। সচিবালয়ের লিফটগুলোর সামনেও ভিড় দেখা যায়নি। তবে সচিবালয়ে গাড়ির সংখ্যা সকালে তুলনামূলক কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে গাড়ির সংখ্যাও বেড়েছে।

এবিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো ইফতেখান হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পাঁচ দিন পর অফিস করছি। তবে এই কয়দিন আমাদের কার্যক্রম থেমে থাকেনি। আজকে রাস্তায় যানজট দেখা গেছে, স্বতঃস্ফুর্তভাবে সাধারণ মানুষ বেরিয়েছেন।  

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয়ের বেতার ও যন্ত্রবিদ মো. রফিকুজামান বাংলানিউজকে বলেন, রাস্তাঘাট স্বাভাবিক, সাপ্তাহিক ও সাধারণ ছুটিসহ মোট ৫ দিনের ছুটি শেষে আজকে অফিস করছি। ছাত্র আন্দোলনের নামে যারা দেশের সম্পদের ক্ষতি করেছে এটা আমাদের কাম্য নয়। মেট্রোরেল, সেতু ভবন, দুর্যোগব্যবস্থাপনা, অধিদপ্তর, ধ্বংস এগুলো ছাত্ররা করেনি। সরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা না হলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তো।

সচিবালয়ে দায়িত্বরত পুলিশের একজন সদস্য জানান, অনান্য দিনের মতো আজ সকাল থেকেই আমরা তৎপর রয়েছি। সচিবালয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে।  

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা- কর্মচারীরা জানান, আজকে রাস্তায় যান চলাচল করছে। অবশ্য অন্য দিনের তুলনায় কম দেখা গেছে। আমাদের মন্ত্রণালয়ে প্রায় সবাই সঠিক সময়ে উপস্থিত হয়েছেন। নিদিষ্ট সময়ে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই অফিসে আসতে পেরেছি।  

সচিবালয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ ও গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, ৫ দিন ছুটি শেষে সকাল থেকেই সচিবালয়ে কর্মীদের আসা শুরু হয়। অনেকেই নির্ধারিত সময়ের আগেই এসে কার্যালয়ে উপস্থিত হন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকেই গণপরিবহনসহ সব ধরনের যানবাহন চলছে। সকালে যানবাহন কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে। অন্যান্য দিনের মতো ব্যবসায়ীরা সকালে দোকানপাট না খুললেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে দোকানপাট খুলছেন। তবে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম ছিল।  দূরপাল্লার বাসের সংখ্যা একেবারেই কম। অফিস খোলা থাকায় শুধু নগর পরিবহন চলাচল করছে ফলে মানুষ অফিসে যাচ্ছেন।

এদিকে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এজন্য সরকারি-বেসরকারি অফিস আজ বুধবার থেকে চার ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাগুলোও আজ থেকে খুলেছে। পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট চালু করা হয়েছে।  সড়ক, মহাসড়কগুলোয় যান চলাচল ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

এর আগে গত সপ্তাহে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় বহু হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।  

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি নামে। একপর্যায়ে সরকার গত শুক্রবার রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করে। একই দিনে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। এখনো বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী।  

প্রথম দিন দুই ঘণ্টা বিরতি দিয়ে কারফিউ চলে। পরদিন তিন ঘণ্টা বিরতি দেওয়া হয়। গতকাল ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে চার ঘণ্টা বিরতি দেওয়া হয়। যদিও সারা দেশে জেলাভেদে এই বিরতি কমবেশি আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২৪
জিসিজি/এসএএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।