ফরিদপুর: গত কয়েকদিনে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ফরিদপুরের জনের হাটে শ্রমিক কমেছে অন্তত আট গুণ। ধান লাগানো ও পাট কাটার জন্য ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশিতেও পাওয়া যাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত শ্রমিক।
ফরিদপুর শহরের পশ্চিম গোয়ালচামট এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উত্তর পাশে ৩০ শতাংশ জমির ওপর অবস্থিত হাটটির নাম মিজান নগর কৃষান হাট। স্থানীয়দের কাছে ‘জন হাট’ হিসেবে পরিচিত এই হাটটি। মূলত ফরিদপুরসহ এই অঞ্চলে শ্রমিকের চাহিদা বেশি থাকে, বিশেষ করে ফসল রোপণ ও কাটার সময়। সেই প্রয়োজন থেকেই এই হাটটি গড়ে উঠে।
হাট কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে পাট কাটা ও রোয়া ধান লাগানোর মৌসুম হওয়ায় প্রতিদিন গড়ে এখানে ৭০০ থেকে ৮০০ শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিনের কারফিউ ও দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য শ্রমিকের সংখ্যা অনেক কমে গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রৌদ্রোজ্জ্বল পুরো জনের হাটের খাঁ খাঁ অবস্থা। অন্যান্য সময় যেখানে দেড় দুই হাজার মানুষের আনাগোনা থাকে সেখানে হাতে গোনা দেড় দুইশো মানুষের আনাগোনা চোখে পড়ে। এদের অনেকেই কারফিউয়ের আগে কাজে গিয়েছিলেন। তবে কাজ শেষ হলেও যানবাহন না চলায় তারা হাটে ফিরে আসতে পারেননি। ওই কয়দিন গৃহস্থের বাড়িতেই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। আবার নতুন করে বিক্রি হওয়ার জন্যও এসেছেন কিছু শ্রমিক। তারা বয়সে তরুণ হওয়ায় বাজারে তাদের চাহিদা কম।
ভাঙ্গার মানিকদহ ইউনিয়নের আদমপুর গ্রাম থেকে চারজন শ্রমিক নিতে এসেছিলেন ফিরোজ মিয়া (৪৫)। তিনি বলেন, পাট কাটার জন্য শ্রমিক দরকার বলে আইছিলাম। সারা হাট ঘুইরা মাত্র দুইজন শ্রমিক পছন্দ হইলো। তাগড়া(তরুণ) শ্রমিকরা কাজে ফাঁকি দেয় বইলা নেই নাই। হাটে তেমন শ্রমিকই নাই আর বয়সী শ্রমিক তো আরও নাই।
রংপুরের মাহিগঞ্জ এলাকা থেকে শ্রম বিক্রি করতে এসেছেন মাহিদুর মিয়া (৩১)। তিনি বলেন, ১০ দিন আগে কাজে গিয়েছিলেন রাজবাড়ী সদরের একটি গ্রামে। সেখানে মাত্র ছয়দিনের কাম ছিল। পরে হুড়োহুড়ি লাইগা যাওয়ায় মালিকের বাড়িতেই খাইছি। বাস খোলার বুধবার (২৪ জুলাই) আবার এই হাটে আইছি।
হাট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই হাটে বেশিরভাগ শ্রমিক আসেন ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুরসহ উত্তরবঙ্গের অন্যান্য জেলা থেকে। এসব শ্রমিকদের কিনে নেন ফরিদপুরসহ আশপাশের জেলা-মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, শরীয়তপুরের কৃষকরা।
এই হাটকে ঘিরে শুধু মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি, গড়ে উঠেছে দোকানপাট। এসব দোকানে নাস্তা, দুপুরের খাবার, পুরোনো জামা-কাপড়, কৃষি কাজের কাচি, দা, খন্তা, নিড়ানিসহ নানা ধরনের সরঞ্জাম বিক্রি হয়। সেখানে কয়েকটি সেলুনও গড়ে উঠেছে। তবে বর্তমানে মানুষজন কম থাকায় ওইসব দোকানগুলো প্রায় ক্রেতা শূন্য অবস্থায় রয়েছে।
ওই হাটটি পৌরসভা থেকে ইজারা নিয়ে পরিচালনা করেন ওই এলাকার বাসিন্দা মো. বাবু শেখ (৪১)। শ্রমিক বিক্রি হয়ে গেলে প্রতিজন শ্রমিকের কাছ থেকে ১০ টাকা করে নেন তিনি।
বাবু শেখ জানান, বর্তমানে হাটে শ্রমিকের সংকট রয়েছে। অন্যান্য বছর পাট কাটার এই মৌসুমে হাটে এক হাজার পাঁচশত থেকে ছয়শত শ্রমিক থাকে। এবার আছে মাত্র দেড় থেকে দুইশোর মত। এজন্য বাধ্য হয়ে মানুষ পাঁচশো টাকার শ্রমিক ৭০০ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকায় কিনে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক গৃহস্থ শ্রমিক না পেয়ে বাড়িতে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, কারফিউতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ায় যেসব শ্রমিক গৃহস্থের বাড়িতে আটকা পরেছিল তারা অনেকেই বাড়িতে চলে গেছে। এছাড়া কারফিউতে এখানে শতাধিকের মত শ্রমিক ছিল যারা আশপাশের ছোট ছোট হোটেল, বোডিং এ ৫০ বা ১০০ টাকার বিনিময়ে রাতে ঘুমিয়েছেন। যাদের কাছে টাকা ছিল না তারা শ্রীঅঙ্গনের বারান্দায় ফ্রিতে ঘুমিয়ে থাকতেন। কারফিউ শিথিল হওয়ায় তারাও বাড়িতে চলে গেছেন। মূলত আবার কখন কি হয়ে যায় এই ভয়ে বাজারে শ্রমিক কম রয়েছে এবং সুযোগ পাওয়ায় বেশিরভাগই বাড়িতে চলে গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২৪
এসএম