ঢাকা, রবিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সুন্দরী বেগম হত্যা মামলার আসামিকে হাত-পা বাঁধা অচেতন অবস্থায় উদ্ধার 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৪
সুন্দরী বেগম হত্যা মামলার আসামিকে হাত-পা বাঁধা অচেতন অবস্থায় উদ্ধার  আসামি জামিরুল ইসলাম

মেহেরপুর: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামন্দীর চাঞ্চল্যকর সুন্দরী খাতুন হত্যা মামলার আসামি জামিরুলকে (৪৫) হাত-পা ও মুখ বাঁধা অচেতন অবস্থায় একটি বাগান থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

জামিরুল ইসলাম বামন্দীর সুন্দরী বেগম হত্যা মামলার এজাহারনামীয় দুই নম্বর আসামি ও কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার শিতলাইপাড়া গ্রামের আবু আফ্ফানের ছেলে।

তবে জামিরুল ইসলামের দাবি, মামলার বাদী রেজাউল হক তার ছেলে সিরাজ ও সিরাজের ছেলে ইলিয়াস হোসেনের দাবিকৃত তিন লাখ টাকা দিতে না পারায় তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

জামিরুল ইসলাম বর্তমানে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শুক্রবার দিবাগত রাতে সেখানেই কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

তবে রাত হওয়ায় অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

জামিরুল জানান, ২০২০ সালের ২৮ মে গাংনীর বামন্দীতে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে আমার চাচী সুন্দরী বেগমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আমার চাচাকেও আহতাবস্থায় উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় আমার চাচীর মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড ধরে পরের দিন ২৮ মে আমাকে আটক করেন ডিবি পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাড়ির মালিক রেজাউল হক বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। আমাকে ওই মামলায় দুই নম্বর আসামি করা হয়। এই মামলা থেকে রেহাই করে দেবেন বলে তিন লাখ টাকা দাবি করে আসছেন বাদী রেজাউল হক। গত বুধবার (২৪ জুলাই)  আমি মেহেরপুর কোর্টে হাজিরা দিয়ে বামন্দীতে আসি। বামন্দীতে একটি স্থানে আমার সাথে রেজাউল হক তার ছেলে সিরাজুল ইসলাম ও সিরাজুল ইসলামের ছেলে ইলিয়াস হোসেনের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায় আমাকে চা খেতে দেন তারা। চা পান করার ১৫/২০ মিনিটের মধ্যে আমি চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করি। আমার জ্ঞান থাকা অবস্থায় তারা কারেন্টের তার গলায় পেঁচিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। আমি মারা গেছি ভেবে একটি বাগানের মধ্যে হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলে রেখে যায়। তারপর আর কিছু বলতে পারবো না।  

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, স্থানীয়দের দেওয়া খবর পেয়ে বামন্দীর একটি আমবাগান থেকে অচেতন অবস্থায় জামিরুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সঠিকভাবে জ্ঞান ফিরলেই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মাসুদুর রহমান জানান, চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে তাকে অজ্ঞান করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা অবজারভেশনে রাখা হয়েছে।

ফ্লাশব্যাক ২০২০ সাল : 

২৮ মে সকালের দিকে গাংনীর বামন্দীতে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে সুন্দরী বেগম নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। একই ঘরের চৌকির ওপর থেকে সুন্দরী বেগমের স্বামী রুস্তম আলীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাদের উদ্ধারের পর ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে মাঠে নামে তৎকালীন জেলা পুলিশ। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হতে না হতেই হত্যারহস্য উদঘাটন করে পুলিশ। মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডের সূত্র ধরে দৌলতপুর উপজেলার শিতলাইপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে আটক করে নিহত সুন্দরী বেগমের ভাশুর আবু আফ্ফানের ছেলে জামিরুল ইসলামকে।

পরে তৎকালীন মেহেরপুর পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলী নিজ কনফারেন্স রুমে সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফ করেন এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে।  

হত্যারহস্য উদ্‌ঘাটন করে তিনি বলেন, জমি বিক্রির টাকা লুট করতেই খুন করা হয় সুন্দরী বেগমকে। সুন্দরী বেগম একটি জমি বিক্রি করতে ক্রেতার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা বায়না নিয়েছিলেন। সেই টাকা ছিনতাই করতে একজন সহযোগীকে নিয়ে সুন্দরীকে হত্যা করেন ভাসুরের ছেলে জামিরুল ইসলাম। মামলাটি অতিগুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা হিসেবে আমলে নিয়ে রহস্য উদ্‌ঘাটন করার জন্য জেলা গোয়েন্দা শাখাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। জেলা গোয়েন্দা শাখার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত ওসি জুলফিকার আলীর তদন্তে জামিরুল ইসলামকে আটক করেন। আটকের পর তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা শিকার করেন। পরে জামিরুলকে আদালতে নিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এসময় তিনি সুন্দরী বেগম হত্যা ও জমি বিক্রির টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করেন। সুন্দরী বেগমকে গলায় শাড়ি জড়িয়ে হত্যা করা হয়। এসময় স্বামী রুস্তম আলী বাঁধা দিলে কুড়াল দিয়ে তার ওপরও হামলা চালায় আসামিরা। দুজনই মারা গেছে ভেবে আসামিরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।  

এঘটনায় মটমুড়া গ্রামের রেজাউল হক বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০০২১ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৪
এসএএইচ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।