নড়াইল: জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করায় নড়াইল পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরার নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বিকেলে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের উপ-পরিচালক মো. আল আমিন নড়াইল জজ আদালতের বিচারকের কাছে মামলার এজাহারের কাগজ হস্তান্তর করেন।
এর আগে সোমবার (২৯ জুলাই) যশোর স্পেশাল জজ আদালতে এ মামলা করা হয়।
মামলার এজাহারের উল্লেখ করা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৩২ লাখ ১৮ হাজার ৯৯৯ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং অবৈধভাবে ১৪ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন আঞ্জুমান আরা। যা দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন।
দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের উপ-পরিচালক মো. আল আমিন বাংলানিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আঞ্জুমান আরা ১৯৮৭ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি পেয়ে ধারাবাহিকভাবে ২০০০ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পান এবং ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে স্বেচ্ছায় অবসর নেন।
তিনি ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি নড়াইল পৌরসভার মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নেন এবং এখনো দায়িত্ব পালন করছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি আজুমান আরার প্রতি সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি করা হয়। তিনি একই বছরের ১৯ মার্চ দুদকে সম্পদের বিবরণী দাখিল করেন। দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে আঞ্জুমান আরা তার স্থাবর ও অস্থাবর ও নগদ অর্থ বাবদ ৮৩ লাখ ৫৭ হাজার ২১২ টাকার সম্পদ থাকার তথ্য ঘোষণা করেন। কিন্তু তদন্তকালে সর্বমোট এক কোটি ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৯১০ টাকার সম্পদের তথ্য পায় দুদক।
মামলায় বলা হয়, আঞ্জুমান আরার নামে সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারির দিনই অর্থাৎ ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি তিনি ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, নড়াইল শাখায় পরিচালিত তার নামীয় হিসাব থেকে চেকের মাধ্যমে নিজে ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা তোলেন। ২০২২-২০২৩ করবর্ষে দাখিল করা আয়কর রিটার্নে ব্যবসা বহির্ভূত অর্থ সম্পদ হিসেবে ৩৩ লাখ ১৬ হাজার টাকা প্রদর্শন করেছেন তিনি। আঞ্জুমান আরা সম্পদ বিবরণীতে ৩২ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৮ টাকার সম্পদ থাকার তথ্য গোপন করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এছাড়া ২০২১-২০২২ করবর্ষ পর্যালোচনায় তার পৌর নির্বাচনী ব্যয়সহ পাওয়া যায় এক কোটি ২৮ লাখ ৯৫ হাজার ৯১০ টাকা। আয়কর নথি ও অন্যান্য রের্কডপত্র অনুযায়ী আঞ্জুমান আরার মোট গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমাণ এক কোটি ১৪ লাখ সাত হাজার ৩৭৬ টাকা। সে মোতাবেক অভিযুক্ত আঞ্জুমান আরার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ ১৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫৩৪ টাকা। যা দুদকে ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মামলা তদন্তকালে মেয়র আঞ্জুমান আরার অপরাধের সঙ্গে অন্য কারো জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকেও আমলে নেবে দুদক।
নড়াইল পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরার নামে দুদকের করা মামলা সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, তথ্য বিবরণীতে আমি সম্পদের কোনো তথ্যই গোপন করিনি। আর আমার অবৈধ অর্জিত কোনো সম্পদও নেই। তারপরও এমন মামলা কেন করা হয়েছে, আমার বোধগম্য নয়। আমি আইনি প্রক্রিয়ায় আগাব।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২৪
এসআই