ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করবো: শিল্প উপদেষ্টা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২৪
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করবো: শিল্প উপদেষ্টা

ঢাকা: শিল্প খাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করবো বলে জানিয়েছেন নবনিযুক্ত শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। একই সঙ্গে গ্যাসের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, চামড়া ও সার কারখানাগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে থেকে গণ-আন্দোলনে ছাত্র-জনতার যে ম্যান্ডেট সেটা নিয়েই সাধ্যমতো কাজ করবো। তবে সব কাজই চ্যালেঞ্জিং, দেখি কতটুকু করা যায়।

শনিবার (১০ আগস্ট) সকালে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে তিনি এ কথা জানান।

শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, অগ্রাধিকার হিসেবে আমাদের গ্যাসের সমস্যা রয়েছে, ক্ষুদ্র শিল্প নিয়ে কিছু পরিকল্পনা আছে। পরিবেশ বান্ধব কাজ করার বিষয়ে চেষ্টা থাকবে। যেমন সাভারে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। জাহাজ শিল্প নিয়েও আলোচনা করেছি। আমরা প্রতি দিনই বসবো কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা করা দরকার করবো। এখানে একটি চমৎকার টিম রয়েছে তারা খুবই অ্যাক্টিভ। আমরা চেষ্টা করে যাবো আপনারা সব সময় আমাদের সহযোগী হিসেবে পাবেন।

শিল্পের কোনো বিষয়ে জোড় দেওয়া হবে এবং চামড়া শিল্পে যে সংকট সেটা কাটানোর জন্য কি উদ্যোগ নেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে আদিলুর রহমান খান বলেন, আজকে আমার প্রথম দিন আমি কৃতজ্ঞ ছুটির দিনেও আমার সহকর্মীরা এসেছেন। আমাদের যেসব খাতে সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ আছে সেগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বিশেষ করে আমাদের গ্যাসে সংকটের জন্য গত ছয় মাস আমাদের চারটি সারকারখানা বন্ধ ছিল। শুধু ঘোড়াশাল সারকারখানা উৎপাদনে আছে। চামড়া খাতকেও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। গ্যাসের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, চামড়া ও সার কারখানাগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তবে সব কাজই চ্যালেঞ্জিং, দেখি কতটুকু করা যায়।

লোকসানের বিষয় কী পদক্ষেপ নেবেন, গ্যাস সংকট সমাধানে কি পদক্ষেপ নেবেন জানতে চাইলে আদিলুর রহমান খান বলেন, আমরা এসব বিষয় জানতে পেরেছি, আলোচনা করেছি, এ ব্যাপারে যতদূর সম্ভব কাজ করবো। সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে সার আমদানিতে। যাতে কৃষকদের কোনো সমস্যা না হয়। গ্যাসের জন্য এ সমস্যাটা না হয়। এর ফলে শিল্পের যে লোকসান হয় সেটা কমে যাবে।

দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে শিল্প উপদেষ্টা বলেন, এতো মানুষের রক্তের ওপর দিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা দায়িত্বে এসেছি এখানে দুর্নীতির বিষয়ে আমাদের কঠোর হওয়া ছাড়া উপায় নেই। অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে থেকে গণ-আন্দোলনে ছাত্র-জনতার যে ম্যান্ডেট সেটা নিয়েই সাধ্যমতো কাজ করবো। দুর্নীতির বিষয়তো প্রশ্নই আসে না। আমরা সবাই একটা টিম আপনারাও এর একটা অংশ। সবাই মিলে কাজ করলে আমরা সব কিছু ওভারকাম করতে পারবো।

তিনি বলেন, আমাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স থাকবে। আমাদের টিম এবিষয়ে সজাগ থাকবে। আমাদের কাছে যা অন্যায় অবিচারে অভিযোগগুলো এসেছে ভবিষ্যতে যাতে এবিষয়ে ব্যতিক্রম হয় সেজন্যই আমাদের দায়িত্বে আসা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির দিনে ‌সোমবার (৫ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এরপরই বিলুপ্ত হয় মন্ত্রিসভা।

এরপর বৃহস্পতিবার শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া রয়েছেন ১৬ জন উপদেষ্টা। যদিও তিনজন উপদেষ্টা এখনো শপথ নেননি। শুক্রবার শপথ নেওয়া প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টাদের দপ্তর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল পান আইন উপদেষ্টার দায়িত্ব।

এ সরকারের ১৬ উপদেষ্টার একজন আদিলুর রহমান খান। তিনি একজন মানবাধিকারকর্মী এবং মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বাংলাদেশের একজন আইনজীবী এবং সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল হোসেন মোহাম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশগ্রহণ করেছিলেন।

আদিলুর রহমান খান এবং সুশীল সমাজের অন্যান্য সদস্যরা ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর মানবাধিকার সংস্থা অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বিএনপি-জামায়াত সরকার কর্তৃক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হয়েছিলেন। ২০০৫ সালের ডিসেম্বর তিনি একটি মামলায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন যেখানে হাইকোর্ট সরকারকে ইসলামপন্থি জঙ্গিদের দ্বারা বিচার বিভাগীয় বোমা হামলা থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থতার ব্যাখ্যা দিতে বলেছিল। তিনি ১৪ মে ২০০৭ এ তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ২০১৩ সালের শাপলা স্কোয়ার বিক্ষোভের সময় নেতাকর্মীদের অপসারণের অভিযানে নিহতের সংখ্যা সম্পর্কে ‘বিভ্রান্তি ছড়ানোর’ জন্য আদিলুরের বিরুদ্ধে ঢাকায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টায় তাকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ এর ৫৪ ধারায় তাকে আটক করা হয়েছিল এবং তাকে কারাগারে ডিভিশন দেওয়া হয়নি। ঢাকায় হাইকমিশনার হিদার ক্রুডেনের মাধ্যমে কানাডা তার মুক্তির আহ্বান জানায়।  

বাংলাদেশের অসংখ্য মানবাধিকারকর্মী তার মুক্তির দাবি জানান। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি জাফর আহমেদ ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে খানকে কারাগারে ডিভিশনের মর্যাদা দিতে সরকারকে নির্দেশ দেন। ২০১৩ সালের অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি বোরহানউদ্দিন এবং বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের কাছ থেকে জামিন পেয়ে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।

২০১৪ সালের জানুয়ারিতে খান এবং অধিকারের পরিচালক এ এস এম নাসিরুদ্দিন এলান, ২০১৩ সালের বিক্ষোভের প্রতিবেদনে দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত হন। এরপর ২০১৭ সালের জুলাই মাসে মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন কর্তৃক কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে খানকে আটক করা হয়। পরদিন তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২৪
জিসিজি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।