ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পানি বাড়ছে, ফেনীর ভয় তুরাগ পাড়ের মানুষের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২৪
পানি বাড়ছে, ফেনীর ভয় তুরাগ পাড়ের মানুষের

ঢাকা: ভয়াবহ এক বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীসহ বেশ কয়েকটি জেলা। সেই বন্যার ভয়ই দেখা যাচ্ছে রাজধানীর উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত তুরাগ পাড়ের মানুষের মধ্যে।

ইতোমধ্যে তুরাগ নদে পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানি বেড়ে ডুবে গেছে নদের ওপারে মাঠ, আশুলিয়ার জলাধার ও বেড়িবাঁধ সংলগ্ন তীরের নিচু অংশ ।  

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) তুরাগের গাবতলী, দিয়াবাড়ি ও আশুলিয়া বেড়িবাঁধ এলাকা ঘুরে এমনই দেখা গেল। সেখানে দেখা যায়, মিরপুরের দিয়াবাড়ি ঘাট, চিড়িয়াখানার পেছনটাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা পানির নিচে। একই অবস্থা আশুলিয়ার কিছু অংশেও।

দক্ষিণে বুড়িগঙ্গায় মিলিত হওয়ার কারণে তুরাগে জোয়ার-ভাটার কিছুটা প্রভাব আছে। টঙ্গীখাল থেকে কিছুটা পানি মেশে তুরাগে।  এ ছাড়া তুরাগের পানির অন্যতম প্রধান উৎস বৃষ্টির পানি। ফলে বেশি বৃষ্টি হলেই তুরাগে পানি বাড়ে।

তুরাগে পানি বেড়ে পশ্চিম পাড়ের মানুষের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে তা মারাত্মক আকার ধারণ করেনি বলেন স্থানীয়রা। সবশেষ গত কয়েকদিনে পানি বেড়ে পশ্চিম দিকে ছড়িয়ে যাওয়ায় মৎস্যজীবীরা কম মাছ ধরতে পারছেন। এতে তাদের আয় কমে গেছে।  

তবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে নৌকা চলাচল বেড়েছে। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে গেছে ওপারে ফসলি জমি ভরাট কার্যক্রম কার্যক্রম।

তুরাগ পাড়ের বাসিন্দারা জানান, এখন তুরাগে যে পরিমাণ পানি বেড়েছে, তা অনেকটাই স্বাভাবিক। বর্ষাকালে তুরাগে এমন পানি থাকে। এর আগেও পানি বেড়েছিল।  

শ্রাবণের শুরুতে এখনকার চেয়ে দুই ফুট উঁচু হয়ে পানি প্রবাহিত হয়। পরে আবার পানির উচ্চতা তিন ফুট কমে যায়। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ফুটখানেক বেড়েছে। আবার বৃষ্টি না হলে, কমে যাবে।
 
মিরপুর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন নবাবের বাগ এলাকার কৃষক মঞ্জুরুল বলেন, তুরাগের পানি নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। প্রতিবার এমনই পানি হয়। তবে এবার দেশের পূর্বাঞ্চলে বিশেষ করে ফেনীর বন্যায় ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। তুরাগের সঙ্গে সংযোগ থাকা নদীর উজানে বাঁধ খুলে দিলে কী হয়, তা নিয়েই আমাদের ভয়। তখন তো সমস্যা হতে পারে!

কৃষকরা জানান, হঠাৎ কোনো সমস্যা না হলে ভাদ্রের শেষ দিকে তুরাগের পানি কমে যাবে। তখন ধানের চারা বোনা হবে। এর দুই মাসের মধ্যে পশ্চিম পারের জমিতে ধান লাগানো যাবে।

আপাতত বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও তুরাগের পানি নিয়ে সতর্ক থাকার কথা বললেন দিয়াবাড়ি ঘাটের যাত্রী আনিসুর রহমান ও মাঝি মো. রিয়াজ আলী।  

তারা বলেন, এখানে পারাপার হওয়ার সময় অনেক নৌকা ডুবে প্রতিবছরই মানুষ মারা যায়। বন্যা বেশি হলে ভয় আরও বাড়বে। ওপারে আমরা যারা বসবাস করি তাদেরও সমস্যা হবে। ফেনীর অবস্থা আমাদের ভয় পাইয়ে দিয়েছে।

হঠাৎ করে তুরাগে পানি বাড়লে সাভার আশুলিয়া ও টঙ্গী এলাকা সংকটে পড়বে। বাদ যাবে না খোদ ঢাকাও, এমনটি মনে করছেন ঢাকাবাসীদের অনেকে। বিশেষ করে যারা বেড়িবাঁধের আশপাশে বসবাস করেন।  

বন্যাকবলিত জেলাগুলোয় গবাদি পশু ও জানমাল ভেসে গেছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। ঢাকায় প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস। রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রশাসনিক কেন্দ্র, শিল্প-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান।  

যদি পানি ঢাকায় ঢুকে যায় তাহলে কী হবে, এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ঢাকাবাসীর মধ্যে। মিরপুর ও সাভারের গাবতলীর বেশ কয়েকজন এমন প্রশ্ন রাখলেন।

গাবতলীর বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, ফেনীর ভয় আমাদের পেয়ে বসেছে। সেখানে তো কখনো এমন বন্যা হয় না। তুরাগে হওয়ার শঙ্কা নেই। কিন্তু উজানে যদি (বাঁধ খুলে দেওয়ার মতো) সমস্যা হয় তখন কী হবে? 

এই মুহূর্তে দেশে ১১টি জেলা বন্যাকবলিত। এই জেলাগুলোয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। এ মুহূর্তে ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬২৯টি পরিবার পানিবন্দী। আর এই বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৩ জন মারা গেছেন।

শুক্রবার দুপুর ১২টার পর সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বন্যাক্রান্ত জেলাগুলো হলো—ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ।

বন্যায় এখন পর্যন্ত কুমিল্লায় চার, কক্সবাজারে তিন, চট্টগ্রামে দুই, ফেনীতে এক, নোয়াখালীতে এক, লক্ষ্মীপুরে এক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন মারা গেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২৪
জেডএ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।