ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, বাবা-মায়ের কবরের পাশেই দাফন 

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪
তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, বাবা-মায়ের কবরের পাশেই দাফন 

পাথরঘাটা (বরগুনা): কয়েকমাস আগে ভাই মারা যাওয়ার পরে কফিনের পাশে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন তোফাজ্জল। কদিন আগেও এলাকার এক বৃদ্ধের মৃত্যুর পর নিজে কাঁধে করে অন্যের সহযোগিতায় বাঁশ এনে দিয়েছিলেন দাফনের জন্য।

আজ তিনি নিজেই কবরের বাসিন্দা।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের পিটুনিতে নিহত মাসুদ কামাল তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল নামে।  জানাজা শেষে বরগুনার পাথরঘাটায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে তাকে। মা, বাবা আর ভাইয়ের কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শা‌য়িত হলেন তোফাজ্জল।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় স্থানীয় একটি মাদরাসার মাঠে তোফাজ্জলের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় শোকে কাতর এলাকাবাসী এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান। জানাজায় কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয়রা বলেন, তোফাজ্জল খুবই হাস্যরসিক লোক ছিলেন। তাকে আমরা কখনই কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে দেখিনি। মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও সবার সাথেই হাসিমুখে কথা বলতেন তিনি। আমরা এই মৃত্যুকে কোনোভাবেই মানতে পারছি না। আমাদের দেশের সর্বোচ্চ একটা বিদ্যাপীঠে এমন নৃশংস একটা ঘটনা ঘটবে ভাবতেও পারিনি। ও চুরি করে না, তবুও যদি করেও থাকতো এজন্য আইন রয়েছে। সামান্য কয়েক টাকার মোবাইলের জন্য একটা জীবনকে এভাবে চলে যেতে হবে তা মানা যায় না।

জানাজায় অংশ নেওয়া মাওলানা নুরুজ্জামান আলমাস বলেন, রাতে ঘুমাতে পারিনি, শুধু চোখের সামনে ভাত খাবার দৃশ্য ভেসে উঠে। তোফাজ্জল আমার কোনো নিকট আত্মীয় না, তবুও ওর জন্য মায়া লাগে। এরকম একটা কাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হবে তা ভাবা যায় না।

তোফাজ্জলের স্কুলশিক্ষক মিলন মিয়া জানান, স্কুল জীবন থেকেই তোফাজ্জল খুব মেধাবী এবং শান্ত স্বভাবের লোক ছিল। ও সবসময় শিক্ষক এবং বড়দের সম্মান করতো। আমরা হত্যাকারীদের বিচার চাই এবং তাকে যারা মানসিক ভারসাম্যহীন করেছেন তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

এ বিষয়ে তোফাজ্জলের মামাতো বোন তানিয়া বলেন, আমি আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই। তারা পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে হত্যা করে দোষ এড়ানোর জন্য মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত করলে মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।

এর আগে, বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে আটক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা। পরে কয়েক দফায় মারধর করা রাত ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সন্ধ্যায় হলে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলছিল। এমন সময় হঠাৎ তোফাজ্জল হলে প্রবেশ করলে শিক্ষার্থীরা দুপুরে ছয়টি মোবাইল চুরির ঘটনার চোর সন্দেহে মূল ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে তাকে মারধর ও জেরা করতে থাকে। একপর্যায়ে, তাকে নিয়ে হল ক্যানটিনে খাওয়ানো হয়। এরপর এক্সটেনশন ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় বুক, পিঠ, হাত ও পায়ে ব্যাপক মারধর করেন একদল শিক্ষার্থী।

মারধরের ফলে তোফাজ্জলের পা থেকে রক্ত বের হতে থাকে। এরপর রাত পৌনে ১০টার দিকে ফের মূল ভবনের অতিথিকক্ষে নিয়ে মারধর করা হয়। এরপর ১০টার দিকে প্রক্টোরিয়াল মোবাইল টিমের সদস্যরা এলে মারধরকারীরা তাকে তাদের হাতে তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে কিছু শিক্ষার্থী ও কয়েকজন হাউস টিউটরের সহায়তায় তাকে প্রথমে শাহবাগ থানায় এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪
এসএএইচ 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।