ঢাকা, শুক্রবার, ৯ কার্তিক ১৪৩১, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ২১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন চা শ্রমিকরা, আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪
কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন চা শ্রমিকরা, আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলোতে নিয়মিত কাজ করে মজুরি পান না চা শ্রমিকরা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ের গিয়ে ঠেকেছে যে, এখন আর তারা কাজে যান না।

মজুরি না পাওয়ায় বহু কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তারা। আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজায় উৎসব বোনাস পাবেন কিনা সেটা নিয়েও গভীর শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে কমলগঞ্জে ন্যাশনাল টি কোম্পানি মালিকানাধীন শ্রমিকরা চা বাগানে নিয়মিত কাজ করলেও মজুরি দিতে পারছে না বাগান কর্তৃপক্ষ। সরকার পতনের পর মাত্র দুই সপ্তাহ মজুরি পেয়েছিলেন তারা। মজুরি না পাওয়ার বিষয়ে মালিকপক্ষ বলছে, সরকার পতনের পর কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ বোর্ড ভেঙে যাওয়ায় মজুরি দিতে পারেননি না তারা। তবে দুর্গাপূজার আগেই মজুরি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের এনটিসির মালিকানাধীন ৮টি চা বাগান রয়েছে। এগুলো হলো পাত্রখোলা চা বাগান, চাম্পারায় চা বাগান, কুরমা চা বাগান, কুরঞ্জি চা বাগান, বাঘাছড়া চা বাগান, মাধবপুর চা বাগান, পদ্মছড়া চা বাগান এবং মদন মোহনপুর চা বাগান।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্য মতে, এ ৮টি চা বাগানে প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক চা বাগানে কাজ করেন। তাদের মজুরির ওপর আর প্রায় ২০ হাজার মানুষের ভরণপোষণ নির্ভর করে। সরকার পতনের পর মাত্র দুই সপ্তাহ মজুরি পেয়েছিলেন তারা।

পাত্রখোলা চা বাগানের নারী চা শ্রমিক রত্না বাউরী বলেন, ঘরে কোনো খাবার নেই, সরকার নামার পর মাত্র দুই সপ্তাহ মজুরি পেয়েছিলাম। আমাদের চা শ্রমিকরা সপ্তাহে যে টাকা পাই সেটা দিয়েই কোনো রকমে সংসার টেনে নিয়ে যাই। এখন হাতে টাকাও নেই, পরিবারের লোকজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। আমরা খুবই কষ্ট করে জীবন চালাচ্ছি। মজুরি বন্ধ থাকায় বাগানের কোনো দোকানপাট থেকে বাকিতেও কোনো কিছুই ক্রয় করতে পারছি না। এভাবে মজুরি বন্ধ থাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।

কমলগঞ্জ চা যুব পরিষদের সদস্য সচিব সজল কৈরি বলেন, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন সমাধান হবে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে বাগান বন্ধ না রেখে এখনো শ্রমিকরা কাজ করছে। যদি পূজার আগে চা শ্রমিকদের পাওনা দাওনা না দেওয়া হয় তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো।

কুরমা চা বাগানের বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নারদ পাসী বলেন, আমাদের কমলগঞ্জের এনটিসির সব চা বাগানেই একই অবস্থা। আমাদের শ্রমিকরা মজুরি না পাওয়ায় খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। সামনে আমাদের দুর্গাপূজা। শ্রমিকরা মজুরি না পেলেও কাজে ঠিকই যাচ্ছে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে শ্রমিকরাও আন্দালন সংগ্রামের দিকে এগিয়ে যাবে। আমরা মালিকপক্ষের কাছে জোড় দাবি জানাই, দ্রুত যেন মজুরির ব্যবস্থা করা হয়।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের শীর্ষ স্থানীয় চা শ্রমিকনেতা রামভজন কৈরি বলেন, সারাদেশে এনটিসির প্রায় ১৬টি চা বাগান রয়েছে। সবগুলো চা বাগানেই একই অবস্থা। আমরা প্রায় প্রতিদিনই মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। শ্রমিকদের মজুরি যেন দ্রুত দেওয়া হয় সেজন্য আমরা সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কয়েক দফা মিটিং করেছি। শ্রমিকরা শুধু রেশন পাচ্ছেন। কিন্তু মজুরি পাচ্ছেন না। আর মাত্র কয়েক দিন পরই দুর্গাপূজা। শ্রমিকরা যদি পূজার আগে মজুরি বোনাস না পায় তাহলে শ্রমিকরা কঠোর আন্দোলন সংগ্রামে যাবে৷ এতে করে চা বাগানেরই ক্ষতি৷ আমরা সরকারের কাছেও জোর দাবি জানাই, দ্রুত মজুরির ব্যবস্থা করা হোক।

এছাড়াও তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন আমাদের যে আশ্বস্ত করেছেন সে অনুসারে শ্রমিকরা বেতন ভাতা না পেয়েও কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আমাদের বলেছেন, পূজার আগেই সমাধান হবে। আর যদি না হয় আবারও আমরা কিছুদিনের মধ্যে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আমাদের প্রতিনিধিরা বসবে। যদি সমাধান না হয় তাহলে কঠোর আন্দোলনে যাবো।

ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি) জেনারেল ম্যানেজার এমদাদুল হক বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আমাদের বোর্ড প্রায় ভেঙে গেছে। তবে গত মঙ্গলবার আমাদের একটা মিটিং হয়েছে সেখানে চা পরিচালনা বোর্ডের ৫ জন ছিলেন। আমরা আরও ২-৩ জনকে আরও সংযোজন করা হবে। চা শ্রমিকদের আর সমস্যা থাকবে না। দ্রুত তাদের বেতন বোনাস দেওয়া হবে এবং সেটা তাদের দুর্গাপূজার আগেই।

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪
বিবিবি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।