শেরপুর: নেত্রকোণায় সাম্প্রতিক বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কাটেনি। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ।
তবে পানিবন্দি ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে এলাকার অনেকেই চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। ধান-চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খাবারের জন্য এসব মানুষকে পড়তে হচ্ছে কষ্টের মধ্যে।
পাহাড়ি নদী মহারশি, সোমেশ্বরীর পানি ইতঃপূর্বেই কমে গেছে। গত দুদিনে ভোগাই ও চেল্লাখালীতেও পানি অনেকটাই কমেছে। তবে ভাটি এলাকার পানি কমছে ধীরগতিতে।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বন্যা কবলিত নিম্নাঞ্চলের অন্তত পাঁচটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।
পাহাড়ি ঢলের পানিতে রাস্তা-ঘাট সেতু কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়ে জেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। লক্ষাধিক কৃষকের ৫০০ কোটি টাকার আমন আবাদ শাকসবজি ক্ষতি হয়েছে। ঢলের পানিতে ছয় হাজার পুকুরের ৭০ কোটি টাকার মাছের ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। হাঁস মুরগি গরু ছাগলেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে জেলায় প্রায় সাত হাজার কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। শতশত গৃহহীন পরিবার এখনও খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এরা পায়নি কোনো সরকারি সাহায্য সহযোগিতা। বন্যা–পরবর্তী সময়ে ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে লাখো মানুষের।
নিম্নাঞ্চলের ৫-৬টি ইউনিয়নে নৌকা ও কলাগাছের ভেলা ছাড়া চলাচল করতে পারছেন না বানভাসি লোকজন। ঢলের পানি নামায় নকলা উপজেলার গৌরদ্ধার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে জলাবদ্ধতা রয়েছে। এছাড়াও নকলা উপজেলার চন্দ্রকোন, চরঅষ্টাধর ও পাঠাকাটা ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চলে কিছু পরিবার পানি বন্দী অবস্থায় আছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের কিছু সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক বাড়ির চারপাশে জমে আছে পানি।
নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি এলাকায় দরিদ্র নিপীড়িত লোকজন ত্রাণের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে দুর্গত এলাকাগুলোতে খাদ্য ও পানি সরবরাহে নিরলসভাবে কাজ করে গেলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এদিকে ঘর বাড়ি হারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগলোকে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহবুবুর রহমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। পানিবন্দি মানুষের কাছে নৌকায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে শুকনা খাবার, স্যালাইন, মোমবাতি ও রান্না করা খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সেনাবাহিনী, বিজিবি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বন্যা য়ক্ষতি গ্রস্তদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারিভাবে সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি।
উল্লেখ্য, বন্যায় গত এক সপ্তাহে জেলায় শিশু, নারীসহ মারা গেছেন ১২ জন। তারা হলেন- নালিতাবাড়ী উপজেলার খলিশাকুড়া গ্রামের ইদ্রিস আলী (৬৬), অভয়পুর গ্রামের দুই ভাই হাতেম আলী (৩০) ও আলমগীর হোসেন (১৬), বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের গৃহবধূ অমিজা খাতুন (৪৫), বাতকুচি গ্রামের বৃদ্ধা জহুরা খাতুন (৭০), নালিতাবাড়ীতে নানা বাড়ি বেড়াতে আসা শেরপুরের ধলা ইউনিয়নের চান্দেরনগর কড়ইতলা গ্রামের জামানের আট বছর বয়সী কন্যাশিশু জিমি আক্তার, কলসপাড় ইউনিয়নের ঘোনাপাড়া এলাকার আব্দুর রশিদ (৫০), নকলা উপজেলার জালালপুর চিকনা এলাকার উজ্জ্বল মিয়া (৫০), গণপদ্দি গজারিয়া এলাকায় আব্দুর রাজ্জাক (৬০) ও নকলা উপজেলার টালকি ইউনিয়নের বড়পাগলা গ্রামের রফিকুল ইসলামের পাঁচ বছর বয়সী ছেলে রাহিম, শেরপুরের তমির উদ্দিন। এছাড়াও ঝিনাইগাতিতে বন্যার পানিতে ভেসে এসেছে এক অজ্ঞাত নারীর লাশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২৪
এসএম