ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে তরুণ, সুশীল সমাজ ও রাজনীতিকদের মতৈক্য দরকার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২৪
বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে তরুণ, সুশীল সমাজ ও রাজনীতিকদের মতৈক্য দরকার

ঢাকা: বালাদেশের অতীত প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা কখনো পূরণ হয়নি। সেজন্য জনসাধারণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে এবং রাজনীতিতে মানুষের আস্থা ফেরাতে হলে জনসাধারণের কথা বিবেচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত পুনর্গঠিত হওয়া।

পাশাপাশি রাষ্ট্রের সংস্কারও প্রয়োজনীয়। এই অভিমত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের।

তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিদের মতে, আগামীর বাংলাদেশ গঠনে রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজনীতিকদের সঙ্গে বর্তমান তরুণ সমাজের দর্শনগত দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে। আর রাজনীতিকরা মনে করেন, রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজসহ সবার মধ্যে অবশ্যই নৈতিক মিল বা ঐকমত্য থাকতে হবে। নতুবা যত উদ্যোগই নেওয়া হোক না কেন সবই ব্যার্থ হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্র ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা খুবই জরুরি।  

শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে ‘নাগরিক সমাজের অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ বিষয়ক জাতীয় মতবিনিময় এ মতামত উঠে আসে। মতবিনিময় সভাটির আয়োজন করে সিএসও অ্যালায়েন্স।  

সভায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ; সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সিএসও অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক ও ক্যাম্পের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী; সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সিএসও অ্যালায়েন্সের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. হোসেন জিল্লুর রহমান; ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান; সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম; গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শুরা ও কর্ম পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকারসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, গবেষক, রাজনীতিবিদ এবং দেশি-বিদেশি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতৃস্থানীয়রা অংশ নেন।

স্বৈরাচারের সময় সুশীল সমাজ অ্যাপোলজিস্টের মতো ভূমিকায় ছিল
রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে অবশ্যই সবার মধ্যে নৈতিক মিল বা ঐকমত্য থাকতে হবে জানিয়ে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ কেমন হবে, আগামীতে কোন বিষয়ে কী করতে হবে, এ বিষয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। সবাই সবার মতামত দিতে পারবেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত দেওয়ার অধিকার কারও নেই, সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ। কোনো গোষ্ঠী বা কোনো শক্তি একা বসে বাংলাদেশকে ঠিক করবেন, এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যদি হয়ও, সেটা ভবিষ্যতের জন্য ঠিক হবে না।  

তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বৈরাচার চলে যাওয়ার পর মানুষের মধ্যে অনেক বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। এখানে নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক, এনজিওসহ সবার মধ্যে সংস্কার প্রয়োজন আছে। সিভিল সোসাইটিসহ এনজিওরা স্বৈরাচারের সময় অ্যাপোলজিস্টের (সাফাই গাওয়া) মতো ভূমিকায় ছিল। এখানে অ্যাপোলোজিস্ট অনেক বড় ভয়ঙ্কর ভূমিকা রাখে, কারণ অ্যাপোলোজিস্টরা সুশীল কথাও বলবে, আবার ফ্যাসিবাদের সঙ্গেও সুর মেলাবে।  

আমির খসরু বলেন, স্বৈরাচার সরকারের সময় বিএনপিকে সমর্থন জানিয়ে ভোট না দেওয়ার কারণে নোয়াখালীর এক জায়গায় এক নারীকে ৩০ থেকে ৩৫ জন মিলে ধর্ষণ করেছিল। সে বিষয়ে এনজিওসহ সুশীল সমাজের কাউকে কোনো প্রতিবাদ করতে দেখিনি। আগামী দিনে আমাদের এসব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। রাজনীতিক ও এনজিওদের উচিত হবে এটা ভাবা যে, কীভাবে আরও দেশকে উন্নত করা যায়। এখানে অবশ্যই নৈতিক মিল বা ঐকমত্য থাকতে হবে।  

রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সংস্কার যা প্রয়োজন তা ইতোমধ্যে নির্ধারণ করা হয়ে গেছে। এখানে শুধু সংস্কারের জন্য কাজ শুরু করে দিতে হবে। এর জন্য সময় নিলে হবে না।  

রাষ্ট্র ক্ষমতায় ভারসাম্যের প্রয়োজন 
জোনায়েদ সাকি বলেন, আমাদের রাষ্ট্রে হওয়ার কথা ছিল যে, নাগরিক সব থেকে বেশি ক্ষমতাবান হবে, রাষ্ট্র তাকে সুরক্ষা দেবে। কিন্তু এর উল্টোটা আমাদের ক্ষেত্রে হচ্ছে। রাষ্ট্র ক্ষমতার মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রাখার প্রয়োজন আছে। তা নাহলে রাষ্ট্র ক্ষমতার মধ্যে ব্যক্তি ঢুকে ব্যক্তি ক্ষমতাশীল হয়ে ওঠে। যা আমরা বিগত সময়ে দেখেছি।  

তিনি বলেন, একটা কথা রাজনীতিতে আছে যে বৈরী শক্তি। আমরা ভিন্ন পার্টিকেও বৈরী শক্তি মনে করি। বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে যে কোনো মতই থাকুক না কেন, রাষ্ট্র যদি তাকে সুরক্ষা দেয় তাহলে বৈরী শক্তি বলে যে কথাটা আছে সেটা থাকবে না। এক্ষেত্রে আমাদের রাজনীতিকদেরই এটা নিয়ে ভাবতে হবে। যাতে করে আগামীর কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ পেতে পারি।  

জনসাধারণের বড় আকাঙ্ক্ষা জীবনের নিরাপত্তা
অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার বলেন, রাষ্ট্রের বেসিক সংস্কার করা ছাড়া যত উদ্যোগই নেওয়া হোক না কেন তার সবই ব্যর্থ হবে। এসব কিছু রাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বারাই হতে হবে। গত ১৫ বছরে মানুষের মৌলিক অধিকার বহুভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে, সাধারণ যে জামিন পাওয়ার অধিকার সেটা থেকে পর্যন্ত নাগরিকদের বঞ্চিত করা হয়েছে। বর্তমানে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে জীবনের নিরাপত্তা, তারপর হচ্ছে সামাজিক মর্যাদার নিরাপত্তা। কারণ বিগত বছরগুলোতে মানুষকে বহুভাবে হেয় করা হয়েছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক নিরাপত্তাও রয়েছে।  

জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা বলেন, বর্তমান সরকার যে সংস্কার করছে তার অনেক প্রয়োজন আছে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নির্বাচনী কমিশন সংস্কার করা। আর সরকারের উচিত হবে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা। সব সংস্কারই সময়সাপেক্ষ ও চলমান প্রক্রিয়া।  

নতুন বাংলাদেশ নিয়ে অনেক আশাবাদী
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক কোনো কিছুর সমালোচনা করলে রক্ষা পাওয়া যায় না উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে রাজনীতির যে ধারাবাহিকতা, তার মধ্যে কেউ যদি সমালোচনা করে তাকে রক্ষা করা যাবে না, এমন প্রথা আমরা দেখতে পাই। সে ক্ষেত্রে আইনিভাবেও তাকে বাধা দিতে হবে। এই ধারাবাহিকতা শুধু গত ১৫ বছর নয়, এর আগেও এসব আমরা দেখেছি। বাংলাদেশের বাক-স্বাধীনতাকে ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে বন্ধ করা হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে। এ ধরনের ইতিহাস পৃথিবীর কোথাও নেই।  

তিনি বলেন, আমরা নতুন বাংলাদেশ নিয়ে অনেক আশাবাদী। আমাদের সম্ভাবনা প্রচুর সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু কিছু বিষয় আছে শঙ্কিত হওয়ার মতো। অন্তর্বর্তী সরকারকে এসব নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে।  

১৫ বছরে দেশের সার্বিক খাত বিভিন্নভাবে ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের সার্বিক খাত বিভিন্নভাবে ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল উল্লেখ করে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এনজিও যেমন সামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে, একইভাবে ব্যক্তিখাতও এতে ভূমিকা রাখছে। এ বিষয়টাকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের সার্বিক খাত বিভিন্নভাবে ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল। এখন যদিও সহায়ক পরিবেশ আছে, তবে এনজিওগুলোর ক্ষেত্রে শুধু কার্যক্রম চালিয়ে গেলে হবে না, তাদের মিশন রিথিঙ্কিং করার সময় এসেছে, তবে আগের কার্যক্রমগুলোকে বাদ দিয়ে নয়।  

সমাজে ওয়াচডগের (সমালোচনার) ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সিভিল সোসাইটিতে একটি বড় দুর্বলতা দেখি। সিভিল সোসাইটিসহ আমরা অনেকে মনে করি, রাজনীতি শুধুমাত্র একটা নীতি। তবে আমার মতে রাজনীতির মতো করে চিন্তা করা সবার প্রয়োজন আছে। আমাদের কথা বলার ধরনকে বদলাতে হবে, বৈষম্য দূর করতে হবে। অর্থাৎ নতুন এক ধরনের জাস্টিস সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

‘রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি এই প্রস্তাবও রাখব, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারি নির্বাচন বাতিল করতে হবে। কারণ ক্ষমতা বহুমুখীকরণের প্রয়োজন আছে। এখানে স্থানীয় সরকারকে মূল সরকার থেকে আলাদা করলে এক প্রকার জবাবদিহির পরিবেশ তৈরি হবে। বাংলাদেশে সামনে যে সম্ভাবনা আছে সেগুলোকে আমাদের সুযোগ নিতে হবে’, বলেন ড. হোসেন জিল্লুর।

সরকারের নীতির বাইরে গেলে লাইসেন্স কেড়ে নেওয়ার ‍হুমকিও ছিল
মতবিনিময় সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে পানি সম্পদ এবং বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা যারা অধিকার নিয়ে কাজ করি তাদের কিন্তু পথচলাটা স্বাভাবিক ছিল না। আমাদের বলা হয়েছিল সরকারের নীতির বাইরে ভিন্ন কিছু করলে আমাদের লাইসেন্স পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হবে। আমরা যারা মানবাধিকার বা পরিবেশ নিয়ে কথা বলি সেগুলো কিন্তু কোনো বড় প্রতিষ্ঠান বা সরকারের কোনো নীতির বিরুদ্ধে যাবে। তাই বলে বন্ধ করে দেওয়ার যে চাপ সেটা প্রতিনিয়ত আমাদের ভুগতে হয়েছে। আমরা এসব নিয়ে বহু প্রতিবাদ করেছি।  

বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে নাগরিক সমাজের সহযোগিতা অপরিহার্য উল্লেখ করে পরিবেশ উপদেষ্টা আরও বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াই শুধু অন্তর্বর্তী সরকারের নয়, এটি আমাদের সবার দায়িত্ব। এটির বাস্তবায়নে নাগরিক সমাজের সহযোগিতা অপরিহার্য। রাষ্ট্রের সংস্কারে নিজেদেরও পরিবর্তন করতে হবে। সরকারের কোনো উদ্যোগে ঘাটতি থাকলে তা উল্লেখ করতে হবে। বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সরকার ও বিভিন্ন কমিশন আলাপ-আলোচনা করছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। বিভিন্ন আন্দোলনকারীদের মুখপাত্রদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। প্রথাগত সরকারের থেকে বর্তমানে সবকিছু ভিন্নভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

ত্রাসের রাজত্বের কারণে শেখ হাসিনার পরাজয়
শারমীন এস. মুরশিদ বলেন, বৈশ্বিক পরিসরে সুশীল সমাজ বলতে আমরা যা বুঝি তা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভিন্ন হয়ে গেছে। আমাদের সমাজে রাজনৈতিক দলগুলো এবং সুশীল সমাজসহ সবার কিছু কমন দর্শন আছে। আর সেই দর্শন হচ্ছে কারও কোন ক্ষতি করা যাবে না, কাউকে হত্যা করা যাবে না, কারও মানবাধিকার লঙ্ঘন করা যাবে না। এখানে সবার আদর্শ ও দর্শন একই।  

আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি আন্দোলন খুব কাছ থেকে দেখেছি। সেখানে ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে লড়াই করেছে। কিন্তু কখনো তারা এটা ভাবেনি যে অপরিচিত নারী বা পুরুষের সঙ্গে এক হয়ে আন্দোলন করেছে। এর ফলে এখানে কোনো নারী বঞ্চনার শিকার হতে দেখিনি। এখানে এই প্রজন্ম আমাদের দেখিয়েছে, তারা আসলে কীভাবে দেশটাকে দেখতে চায়। আমি মনে করি আন্দোলনের এই ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ এক সঙ্গে যে লড়াই করেছে তা নিয়ে বিশ্বে অনেক গবেষণা হবে।  

ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার কারণে শেখ হাসিনার সরকারের পরাজয় ঘটেছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা শারমীন এস. মুরশিদ বলেন, তারা যখন ত্রাসের রাজনীতি করে তখন সুশীল সমাজসহ অনেকে বলেছেন যে, আমি কী বলবো, এখানে কিছু বলা যাবে না। সে সময় আমরা সুশীল সমাজ কিছু বলতে পারিনি। কিন্তু তরুণরা সেই ভয় পায়নি। যেজন্য তারা মনে করেছেন এভাবে তাদের ভবিষ্যৎ চলবে না। তাই তরুণরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং স্বৈরাচারকে উৎখাত করেছে।  

অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের বিষয়টি উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ হচ্ছে এক কথায় ঝাড়ু দারের কাজ। আমাদের ঘর পরিষ্কার করতে হবে। আর তরুণরা বলছে রিপেয়ার, রিফর্ম ও রিবিল্ড। আমরা এই রিফর্ম করতে গিয়ে অনেক জটিলতা দেখেছি। তবে আমরা একটি সম্ভাবনার জায়গা তৈরি করে দিতে পারব। আমরা উপদেষ্টারা কিন্তু আপনাদের মতো সুশীল সমাজ থেকে এসেছি। তরুণরা মনে করেছে, হয়তো তাদের সরকারে বসালে অনেক কিছুই পরিবর্তন হবে। তারা নিরপেক্ষ জায়গা থেকে সব কিছু ঠিক করবে।

রাজনীতিকদের সঙ্গে তরুণদের দর্শনগত দূরত্ব কমিয়ে আনা দরকার
রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজনীতিকদের সঙ্গে বর্তমান তরুণ সমাজের দর্শনগত দূরত্ব কমিয়ে আনার প্রয়োজন আছে উল্লেখ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাজিফা জান্নাত বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সোশাল মিডিয়া অনেক বড় ভূমিকা রাখে। আরব বসন্ত শুরু হওয়ার পর অনেক দেশে আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছিল। সেসব দেশে আন্দোলন বন্ধ করার জন্য সোশাল মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেক্ষেত্রে আমাদের উচিত হবে কীভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে আরও বেশি সচেতন করে ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে যারা রাষ্ট্রপরিচালনা করছেন, তাদের মধ্যে প্রজন্মগত গ্যাপ বা দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি আমাদের দর্শনগত যায়গায় অনেক গ্যাপ আছে, এটাতে সিনিয়ররা আমাদের পথ দেখাতে পারেন।  

এই সমন্বয়ক বলেন, মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার চায়। আমরা এখনো এই মৌলিক অধিকার পাইনি। পাশাপাশি আমাদের সামাজির নিরাপত্তার অনেক অভাব আছে। বাংলাদেশে কেউ থাকতে চায় না এজন্য। অনেকে আবার মৌলিক অধিকার বিসর্জন দিয়ে হলেও তার নিরাপত্তা চায়। তাই এই নিরাপত্তা আমাদের তৈরি করতে হবে।  

অ্যাকশন এইড-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, বাংলাদেশ কখনো স্থির কোন দেশ ছিল না, এখানে বহু উত্থান পতন আছে। আমরা যে কাজগুলো ৪০ বছর যাবত করেছি, এখন এসে যুবসমাজের মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে। এখন যুবরা কথা বলতে চায়, তাদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট করতে চায়। আমাদের তাদের বুঝতে হবে। তবে এর সঙ্গে আমরা চাই একটি সুন্দর ও বৈষম্যহীন সমাজ।  

বাংলাদেশ সময়: ২২০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২৪
ইএসএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।