ঢাকা, শনিবার, ১০ কার্তিক ১৪৩১, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ২২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ভারত থেকে আসা পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলে ভরা জমি

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২৪
ভারত থেকে আসা পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলে ভরা জমি

মেহেরপুর: মেহেরপুরে সীমান্তবর্তী গাংনী উপজেলার নেকজান ধলা গ্রামে ভারত থেকে আসা পানিতে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠ ও গ্রামের সাড়ে ৩ শতাধিক পরিবার।

ভারতের নদীয়া জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম টেইপুর থানার রাখালগাছি, রংপুর, বাগতি, কাগজিপাড়া, বাড়িপুতা ও ধাড়া সীমান্ত গ্রামের মাঠ থেকে গাংনীর কাথুলি ইউনিয়নের বেলতলা বোর্ডারের মাঠ দিয়ে উত্তর মাঠে এসে পানি জমায় প্লাবিত হয়েছে ধলা গ্রামের ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা।

স্থানীয় কাথুলি ইউপির ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য ফারুক হোসেন বলেন, নেকজান ধলা গ্রামের নেকজানপাড়া, মোল্লাপাড়া, দক্ষিণপাড়া, মধ্যপাড়া ও পশ্চিমপাড়া এলাকার সব বাড়িতেই এখন কয়েক ফুট পর্যন্ত পানি।

গাংনীর কাথুলি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য ফারুক হোসেন জানান, নেকজান ধলা গ্রামের প্রায় চার শতাধিক বসতঘর পানিতে কয়েক ফুট ডুবে আছে। অতি বর্ষণে গ্রামের অনেক কাঁচাঘর বিধ্বস্ত ও সব গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তলিয়ে গেছে ধলা গ্রামসহ আশপাশের অধিকাংশ ফসলি জমি।

ফলে গ্রামের লোকজন এখন বাঁশ ও কাঠ নিয়ে নিজেদের উদ্যোগে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।

ধলা গ্রামের সাবেক মেম্বার আনারুল ইসলাম কালু, স্কুল শিক্ষক জাকির হোসেন, কৃষক রমজান আলী, শফিকুল ইসলাম জানান, পানিবন্দি থাকায় গ্রামের অনেকের বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। অনেকেই গ্রাম ছেড়ে ইতোমধ্যে আত্মীয়—স্বজনের বাড়িতে চলে গেছেন। নিয়ে গেছেন তাদের গবাদি পশুসহ ঘরের ধান চালা ও অন্যান্য মালামাল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ বাড়ির টিউবওয়েলগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে দেখা গেছে, সুপেয় পানির অভাব। মানুষজন তাদের বাড়ির ধান—চালসহ অন্যান্য মালামাল এবং গবাদিপশু নিয়ে অন্যের বাড়িতে রাখতে যাচ্ছেন। অনেকের বাড়ির গোয়াল ঘর ও হেঁশেল ঘরে হাঁটুপানি জমে আছে। বাড়ির উঠানেও জমে আছে কোমর সমান পানি। এখানে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। তারা চলাচল করতে পারছেন না।

গৃহবধূ সুকিলা খাতুন, রজনী আক্তার ও রমেছা বানু জানান, আমরা কয়েকদিন এই পানির মধ্যেই চলাচল করছি। হেঁশেল ঘরে রান্না করতে পারছি না। বাড়ির উঠানে কোমর পর্যন্ত পানি জমায় চলাচল করতে গিয়ে পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে সাদা সাদা হয়ে পড়েছে। পা ও হাতসহ শরীর চুলকাচ্ছে ও ফুঁসকুড়ি পড়ে যাচ্ছে। বাচ্চাদেরও অবস্থা একই রকম।

এদিকে জলাবদ্ধতার কারণে ফসল নিয়ে উদ্বেগ—উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন ধলা গ্রাসের কৃষকরা। সদ্য রোপণ করা আমনের ক্ষেত ও আগাম শীতকালীন সবজির জমি তলিয়ে যাওয়ায় সংকটে পড়েছেন তারা।

নেকজান ধলা গ্রামের কৃষক আলাউদ্দীন আলীর ২ বিঘা জমির কপি, দেড় বিঘা জমির মাষকলাই, ১ বিঘা জমির কাঁচা মরিচ ও ৩ বিঘা মাছের পুকুর নষ্ট হয়ে গেছে।  

এছাড়া আকবুর আলীর এক বিঘা, জাহাঙ্গীর আলমের ১ বিঘা, আক্কাছ আলীর দেড় বিঘা জমির রসুন, সামসুল হকের দেড় বিঘা জমির পেঁয়াজ ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে জানান।  

তারা বলেন, ভারতীয় সীমান্তবর্তী ধলার এই মাঠের সব ফসল এখন পানির নিচে।  

এছাড়া ভারত থেকে আসা পানিতে জেলার সীমান্তবর্তী সহড়াতলা, রংমহল, খাসমহল, কাথুলি, শৈলমারী, ইছাখালি, বাড়িবাঁকা, ঝাঁ ঝাঁ, রুদ্রনগর, মুজিবনগর, সোনাপুর, জয়পুর, মাঝপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন জানান, অবিরাম বর্ষণের ফলে নিচু স্থানের কাঁচা মরিচ ও কপির পঞ্চাশ শতাংশ মরে যাবে। আর নিচু জমির ফসলের গোড়ায় দীর্ঘদিন পানি জমে থাকলে গোড়া পচে যাবে। এছাড়াও কলা, পেঁপে, আগাম ফুলকপি চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হবে।

তিনি জানান, ধলার ৫০ হেক্টর জমিতে রোপা-আমন, ২৫ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচ, ৫০ হেক্টর জমির মাষকলাই, ২৫ হেক্টর জমিতে তুলা, ৩৫ হেক্টর জমির পেঁয়াজ, ২০ হেক্টর জমির কলা চাষ ও অন্যান্য ফসল ১০ হেক্টরসহ প্রায় ৬৭৫ হেক্টর জমির ফসলের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। তবে দু-একদিনের মধ্যে রোদ উঠলে ফসলের মাঠ থেকে পানি নেমে যেতে পারে।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাসুদুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন ময়লাযুক্ত পানির মধ্যে থাকলে মানুষের দেহে ফাঙ্গাস বা ছত্রাক জাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।  
এছাড়া পানিবাহিত রোগ থেকে বাঁচতে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করে ও পানি ফুটিয়ে পানের পরামর্শ দেন তিনি।  

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা আজ শনিবার (২৬ অক্টোবর) সকালের দিকে জলাবদ্ধ এলাকা ধলা গ্রাম পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি স্থানীয়দের নিয়ে সাময়িকভাবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেন।  
গ্রামের জলাবদ্ধতা স্থায়ীভাবে দূরীকরণের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও ছোট কালভার্ট নির্মাণ করা হবে বলে জানান তিনি।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ বলেন, বৃষ্টিপাতের কারণেই ওই এলাকাতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। আমি এখনো ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে পারিনি। কৃষি অফিসারের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হবে।  

তিনি বলেন, প্রকৃতির দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাঠাব। এছাড়া যাদের বাড়িঘর পানির নিচে আছে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২৪
এসএএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।