ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নাটোরে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮৩ হাজার মেট্রিক টন

মো. মামুনুর রশীদ, ডিসট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২৪
নাটোরে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮৩ হাজার মেট্রিক টন

নাটোর: চলতি মৌসুমে নাটোর জেলায় বাণিজ্যিকভাবে পুকুর ও প্রাকৃতিক উৎস খাল-বিল, নদ-নদী থেকে মাছ উৎপাদনের প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা ৮৩ হাজার ২০১ দশমিক ৮ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মোট আর্থিক মূল্য গড়ে প্রায় চার হাজার ৮১ কোটি ১৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।

এরমধ্যে পুকুরে প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা ৭৮ হাজার ৬৩৮ মেট্রিক টন, যার সম্ভাব্য মূল্য প্রায় তিন হাজার ৯৩৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। খাল-বিলে প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা তিন হাজার ৬৩১ দশমিক দুই মেট্রিক টন, যার সম্ভাব্য মূল্য প্রায় ১০৮ কোট ৯৩ লাখ ছয় হাজার টাকা এবং নদ-নদীতে প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা ৯৩২ দশমিক ছয় মেট্রিক টন, যার সম্ভাব্য মূল্য প্রায় ৩৭ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে বিভিন্ন মাছের আড়তসহ পুকুর থেকে প্রায় ২৫০ ট্রাক মাছ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। এছাড়া উৎপাদিত মাছ জেলার বৃহৎ জনগোষ্ঠীর খাদ্যে আমিষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে জেলার সাতটি উপজেলার অন্তত ৪৩ হাজার ৯২৯ জন মাছ উৎপাদনকারী ও মৎস্যজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা। অপরদিকে এ জেলায় মোট উদ্বৃত্ত মাছ উৎপাদন হয় ৩৪ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩৪১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ফলে রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদ্বৃত্ত মাছ উৎপাদনকারী জেলার তালিকায় রয়েছে নাটোর।

নাটোর জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট পুকুরের সংখ্যা ৩১ হাজার ৩২০টি, মৎস্য চাষির সংখ্যা ২৫ হাজার ৮৫০ জন এবং মৎস্যজীবীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৭৯ জন। প্রতিজনের বা মাথা পিছু প্রতিদিন গড়ে ৬০ গ্রাম হিসেবে জেলার ১৮ লাখ ৫৯ হাজার ৯২১ জন মানুষের মাছের খাদ্য চাহিদা ৪০ হাজার ৭৩২ মেট্রিক টন। বছরে মোট চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকে ৩৪ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন মাছ। যার আর্থিক মূল্য ৩৪১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

চলতি মৌসুমে জেলায় মাছ উৎপাদনের প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা পুকুরে ৭৮ হাজার ৬৩৮ মেট্রিক টন। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১২ হাজার ৪৯৬ মেট্রিক টন, নলডাঙ্গায় নয় হাজার ৪৮১ মেট্রিক টন, সিংড়ায় ২৩ হাজার ৮৬২ মেট্রিক টন, গুরুদাসপুরে ১৬ হাজার ১৯০ মেট্রিক টন, বড়াইগ্রামে আট হাজার ৪৬৮ মেট্রিক টন, লালপুরে পাঁচ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন ও বাগাতিপাড়ায় দুই হাজার ৬৫৫ মেট্রিক টন।

গত বছর জেলার সাত উপজেলায় মাছ উৎপাদন হয়েছিল ৭৮ হাজার ১৮২ মেট্রিক টন। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১২ হাজার ৪৫২ মেট্রিক টন, নলডাঙ্গায় আট হাজার ৯৮৮ মেট্রিক টন, সিংড়ায় ২৩ হাজার ৭৬৫ মেট্রিক টন, গুরুদাসপুরে ১৬ হাজার ৬০ মেট্রিক টন, বড়াইগ্রামে আট হাজার ৪১৪ মেট্রিক টন, লালপুরে পাঁচ হাজার ৪১৮ মেট্রিক টন ও বাগাতিপাড়ায় দুই হাজার ৫৭১ মেট্রিক টন।

সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার বিল থেকে মাছ উৎপাদনের প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা তিন হাজার ৬৩১ দশমিক দুই মেট্রিক টন। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১০২ দশমিক ৯৫ মেট্রিক টন, নলডাঙ্গায় ৩৯৭ দশমিক তিন মেট্রিক টন, সিংড়ায় এক হাজার ৫১২ দশমিক ছয় মেট্রিক টন, গুরুদাসপুর উপজেলায় ৪৮১ দশমিক দুই মেট্রিক টন, বড়াইগ্রামে এক হাজার ১২৮ দশমিক তিন মেট্রিক টন ও লালপুর উপজেলায় আট দশমিক আট মেট্রিক টন। এ উৎস থেকে প্রাপ্ত মাছের মূল্য প্রায় ১০৮ কোট ৯৩ লাখ ছয় হাজার টাকা।

অপরদিকে নদ-নদী থেকে মাছ উৎপাদনের প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা ৯৩২ দশমিক ০৬ মেট্রিক টন। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৪৭ দশমিক দুই মেট্রিক টন, নলডাঙ্গায় ৯১ দশমিক পাঁচ মেট্রিক টন, সিংড়ায় ১২১ দশমিক পাঁচ মেট্রিক টন, গুরুদাসপুর উপজেলায় ৪১ দশমিক আট মেট্রিক টন, বড়াইগ্রামে ১০১ দশমিক তিন মেট্রিক টন ও লালপুর উপজেলায় ৩৮৪ দশমিক সাত মেট্রিক টন। এ উৎস থেকে প্রাপ্ত মাছের মূল্য প্রায় ১০৮ কোট ৯৩ লাখ ছয় হাজার টাকা। এ উৎস থেকে প্রাপ্ত মাছের মূল্য প্রায় ৩৭ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

নাটোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে জানান, রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদ্বৃত্ত মাছ উৎপাদনকারী জেলা হচ্ছে নাটোর। এ জেলায় প্রতি বছর ৩৪ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন বেশি উদ্বৃত্ত মাছ উৎপাদন হয়। এছাড়া প্রাকৃতিক উৎস খাল, বিল, নদ-নদী থেকে বছরে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন দেশীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদন হয়। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য পাঠানো হয়। শুধু তাই নয় এ জেলায় উৎপাদিত মাছ সরাসরি ভারতেও রপ্তানি হয়। ফলে বছরজুড়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অন্তত ২৫ হাজার ৮৫০ জন মৎস্য চাষিসহ সংশ্লিষ্টরা।

তিনি আরও বলেন, মাছ উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করতে জেলার প্রতিটি উপজেলায় মৎস্য চাষিদের নিয়মিতভাবে মাছ চাষের ওপর বিভিন্ন কলাকৌশল ও উন্নত প্রযুক্তি সর্ম্পকে পরামর্শ ও ধারণা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি চাষিদের মাছের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তির জন্য মৎস্য বিভাগ থেকে বাজার তদারকিসহ সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হয়। এছাড়া প্রাকৃতিক উৎস খাল,বিল, নদ-নদীতে মাছ উৎপাদনে বাধাগ্রস্ত যাতে না হয়, সেজন্য অবৈধ কারেন্ট জাল, সব বাধা অপসারণে নিয়মিতভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এজন্য জেলায় মাছ চাষের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে।  

জেলায় উৎপাদিত মাছ জাতীয় অর্থনীতিতেও অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে আরও সমৃদ্ধ হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।