ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পরমাণু প্রযুক্তির মাধ্যমে চিকিৎসার মানোন্নয়নে আসছে বিশাল প্রকল্প

এস এম এ কালাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২৪
পরমাণু প্রযুক্তির মাধ্যমে চিকিৎসার মানোন্নয়নে আসছে বিশাল প্রকল্প

ঢাকা: পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নতির লক্ষ্যে বিশাল একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ প্রকল্পের মাধ্যমে থাইরয়েড, কিডনি, লিভার, বোন ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের সঠিক ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানো হবে।

দেশের পাঁচটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (ইনমাস)’ স্থাপনের মাধ্যমে এ প্রকল্পের সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে ৬৯৭.০২ কোটি টাকার প্রাক্কলিত ব্যয়ে। যা ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত চলবে। সেজন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় দেশের পাঁচটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (ইনমাস) স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে।

যে পাঁচ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ প্রকল্প করা হবে সেগুলো হলো- বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ও শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

পরিকল্পনা কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, চলতি বছরের ১৭ অক্টোবর পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) রেহানা পারভীন সভাপতিত্বে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তারা প্রকল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ও সংশোধনের সুপারিশ করেন। এসব পর্যবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ঠিক করে দিলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য-লক্ষ্য
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন দীর্ঘ সময় ধরে পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাইরয়েড, কিডনি, লিভার ও বোন ক্যান্সারের মতো রোগের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে। বর্তমানে ১৪টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (ইনমাস) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (নিনমাস) স্থাপিত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে আধুনিক পরমাণু প্রযুক্তির মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো পরমাণু চিকিৎসা সেবা আরও বিস্তৃত করা, যাতে দেশের আরও বেশি মানুষ এসব সেবা পেতে পারে। বিশেষত, দরিদ্র জনগণের জন্য কম খরচে উচ্চমানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করাই এর মূল লক্ষ্য।

প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় এবং মেয়াদ
এই প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৬৯৭.০২ কোটি টাকা। প্রকল্পটি এপ্রিল ২০২৪ থেকে জুন ২০২৮ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে, তবে কিছু সংশোধনের পর বাস্তবায়নকাল পরিবর্তন করে জানুয়ারি ২০২৫ থেকে জানুয়ারি ২০২৯ পর্যন্ত নির্ধারণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বিশেষজ্ঞ কনসালটেন্ট নিয়োগ, আসবাবপত্র এবং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, নতুন হাসপাতালের নির্মাণ কাজসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের পুনঃমূল্যায়ন এবং সংশোধন করা হবে।

সেবা প্রচার ও প্রসার
এ প্রকল্পের আওতায় নতুনভাবে স্থাপিত ইনমাসগুলোর মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হবে, তবে এর পাশাপাশি সেবাগুলোর ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে। বর্তমানে অনেক সাধারণ মানুষ এ ধরনের সেবা সম্পর্কে সচেতন নয়, তাই সেবা প্রচারের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

পরবর্তী পদক্ষেপ
সভায় অংশগ্রহণকারীরা প্রকল্পের পটভূমি, লক্ষ্য এবং ব্যয়ের বিস্তারিত পর্যালোচনা করেন এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছেন। প্রকল্প এলাকা হিসেবে প্রস্তাবিত পাঁচটি হাসপাতালের নামকরণে পরিবর্তন এবং ডিপিপিতে প্রকল্প এলাকা নির্বাচনের যৌক্তিকতা পুনঃমূল্যায়ন করা হবে।

এছাড়া, বাজারদর কমিটি গঠন এবং নন-শিডিউল আইটেমের ব্যয় প্রাক্কলনের জন্য বাজারদর নির্ধারণ করে সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদন ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে, সঠিক মূল্য নির্ধারণের জন্য প্রাইস কনটিনজেন্সি ৩ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সংস্থার প্রতিনিধি বলেন, পরমাণু প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে ১৯৬০ সাল থেকে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন বিভিন্ন ধরণের পরমাণু চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ইতিমধ্যে দেশের ১৪টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইনমাস স্থাপন করেছে এবং বর্তমানে আরও আটটি ইনমাস স্থাপনের কাজ চলছে। তবে নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে আরও পাঁচটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে পরমাণু চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালু করা হবে, যাতে দেশের চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়ন এবং জনগণের স্বাস্থ্য সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া, প্রকল্পের আওতায় সেবা প্রচার ও প্রসারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষ এই আধুনিক চিকিৎসা সেবা সম্পর্কে আরও জানতে পারে।

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিনিধি সভায় তিনি ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সেবা প্রদানের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালে পূর্ববর্তী ১৫টি মেডিকেল কলেজ প্রকল্পের মাধ্যমে ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫৭ জন সেবা প্রার্থীদের সেবা প্রদানের মাধ্যমে রাজস্ব খাতে ৫৩ কোটি ১৪ লাখ ১৩ হাজার ৯০৫ টাকা আয় করা হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষকে দেওয়া এসব সেবার বিষয়ে প্রচার ও প্রসারের যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। তাই, এ প্রকল্পের আওতায় মূল কাজের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এ সেবার বিষয়টি প্রচার ও প্রসারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

আর্থ সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. আব্দুর রউফ বলেন, পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাইরয়েড, কিডনি, লিভার ও বোন ক্যান্সারের মতো রোগের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। স্বল্পমূল্যে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে পরমাণু চিকিৎসা প্রদান এবং এর সেবা সম্প্রসারণের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন কর্তৃক বাস্তবায়নের জন্য এ প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এপ্রিল ২০২৪ থেকে জুন ২০২৮ পর্যন্ত বাস্তবায়নের প্রস্তাবও করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২৪
এসএমএকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।