নীলফামারী: দিনাজপুরের পার্বতীপুরে রেলওয়ের ডিজেলচালিত রেল ইঞ্জিনের ভারি মেরামতের জেনারেল ওভারহোলিং কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানার (কেলোকা) জনবল সংকট দেখা দিয়েছে।
রেলইঞ্জিন কারখানার অত্যাধুনিক মেকানিক্যাল (কারিগরি) সেকশন (বিভাগে) ৫৫৯টি পদের বিপরীতে এক সময় কর্মরত ছিল প্রায় সাড়ে ৪শ শ্রমিক-কর্মচারী।
সূত্র জানায়, কারখানায় যান্ত্রিক, বৈদ্যুতিক, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং স্টোরসহ ১১টি বিভাগ রয়েছে। মূল জনবলের তিন ভাগের এক ভাগ রয়েছে। কারখানায় জনবল বরাদ্দ রয়েছে ৭২৪ জন। বর্তমানে কর্মরত রয়েছে ২১৩ জন। অন্যান্য সেকশনে ২৯ শতাংশ পদশূন্য রয়েছে। গত অর্থবছরে এ কারখানা থেকে ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে গেছেন।
প্রতিবছরেই এভাবে অবসরের কারণে জনবল সংকট বেড়েছে। কিন্তু জনবল নিয়োগ হচ্ছে না। খালাসি পদে বরাদ্দ রয়েছে ৫০ জন। কারখানায় নিয়োগ করা খালাসি দেওয়া হয়েছে ৪৮ জন। ১২৪ জন আউট সোর্সিং ও অস্থায়ী শ্রমিক (টিএলআর) জনবল দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ এ কারখানায় জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
কারখানা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেল ইঞ্জিনের ভারি মেরামতের (জেনারেল ওভারহোলিং) আউটটার্নের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১টি। ভারি মেরামত শেষে আউটটার্ন করা হয়েছে গত জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নয়টি। এরমধ্যে তিন থেকে পাঁচ বছর পড়ে থাকা তিনটি অকেজো ভারি রেল ইঞ্জিন মেরামত করে চলাচল উপযোগী করা হয়েছে। দেশে চলমান যাত্রী ও মালবাহী ট্রেনে ব্যবহৃত প্রতিটি ইঞ্জিন পাঁচ বছর পরপর পূর্বনির্ধারিত শিডিউল মোতাবেক জেনারেল ওভারহোলিং বা ভারি মেরামত করতে হয়।
কারখানার সূত্র মতে, রেল ইঞ্জিনের স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল ২০ বছর। আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া প্রতিটি লোকোমোটিভকে (রেল ইঞ্জিন) পাঁচ বছর পরপর জেনারেল ওভারহোলিংয়ে (জিওএইচ) জন্য পার্বতীপুরে কেলোকায় পাঠানো হয়। পরে কারখানায় লোকোমোটিভ জিওএইচ করে কার্যক্ষম করে তোলা হয়। একটি রেল ইঞ্জিনে ৩৪ হাজারের বেশি যন্ত্রাংশ রয়েছে। এসব ইঞ্জিন মেরামতের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে খুচরা যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করতে হয়। জেনারেল ওভারহোলিং এ প্রতিটি যন্ত্রাংশ খুলে আলাদা করা হয়। ক্রটিপূর্ণ যন্ত্রাংশগুলো পরিবর্তন করে নতুন যন্ত্রাংশ সংযোজন ও অকেজো অংশ মেরামত করে সচল করা হয়।
কারখানা সূত্র মতে, বাংলাদেশ রেলওয়েতে লোকোমোটিভ রয়েছে ২৯৪টি (ব্রডগেজ ১০৮টি, মিটারগেজ ১৮৬টি)। ইতোমধ্যে ১৩০টি ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে ব্রডগেজ ৬০টি ও মিটারগেজ ৮০টি। রেল বহরে ৬৭ বছর পুরোনো ছয়টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ (রেল ইঞ্জিন) চালু অবস্থায় রয়েছে। আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া লোকোমোটিভগুলোকে বছরের পর বছর ধরে জেনারেল ওভারহোলিং করে সচল রাখা হয়েছে। কেলোকায় যন্ত্রাংশ সংকট কিছুটা কমলেও জনবল সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
মেকানিক্যাল (কারিগরি) সেকশনে (বিভাগ) নিয়োগ পাওয়া একজন কর্মচারীর ইঞ্জিনের হাজার হাজার যন্ত্রাংশ চিনতে এবং তা খোলা ও মেরামতের কৌশল শিখতে ১০-১২ বছর লেগে যায়। এরপর এই কর্মচারীরাই দক্ষ হিসেবে বিভিন্ন ট্রেডে পদোন্নতি পেয়ে ওপরের পদে চলে যায়।
এখন নিয়োগ দিলেও দক্ষ জনবল গড়ে উঠতে অন্তত আট বছর সময় লাগবে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে মেকানিক্যাল সেকশনে খালাসি (চতুর্থ শ্রেণি) পদে কিছু জনবল নিয়োগ দেওয়া হয় বলে সূত্র জানায়।
ডিজেলচালিত রেল ইঞ্জিনের জিওএইচ করে কার্যক্ষম করার লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে সৌদি অর্থায়নে ২০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পার্বতীপুরে ১১১ একর জমির ওপর বাংলাদেশ রেলওয়ের কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা স্থাপন করা হয়।
এ ব্যাপারে পার্বতীপুর কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানার প্রধান নির্বাহী (সিইএক্স) প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, যে কারখানা দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সচল রাখছে। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ এ কারখানায় দীর্ঘদিন ধরেই জনবল সংকট। প্রতিমাসে এক-দুইজন করে অবসরে যাচ্ছেন। ভারি মেরামত শেষে আউটটার্ন করা হয়েছে গত জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৯টি। এরমধ্যে তিন থেকে পাঁচ বছর পড়ে থাকা তিনটি অকেজো ভারি রেল ইঞ্জিন মেরামত করে চলাচল উপযোগী করা হয়েছে। কারখানাটি আউটটার্নে সফলতা দেখিয়েছে। রেলওয়ে কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানাকে সক্রিয় করতে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগসহ খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ ও অর্থ বরাদ্দ পেলে প্রতি মাসে তিনটি আউটটার্ন দেওয়া সম্ভব হবে। সময়মতো দেশি মালামাল যদি সরবরাহ পাওয়া যায় কারখানায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪
এএটি