ঢাকা: ফতোয়া নিয়ে দেওয়া আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। এ রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, যথাযথ শিক্ষিত ব্যক্তিরাই ধর্মীয় বিষয়ে ফতোয়া দিতে পারবেন।
রোববার (২৫ জানুয়ারি) সুপ্রিমকোর্টের ওয়েব সাইটের মাধ্যমে এ রায় প্রকাশিত হয়।
ফতোয়া সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের বিষয়টি বাংলানউজকে নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার এস এম কুদ্দুস জামান।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে ফতোয়ার মামলার উদ্ভব হয়। ২০০১ সালে ১ জানুয়ারি ফতোয়া অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের পর ২০১১ সালের ১২ মে আপিল বিভাগ ফতোয়া নিয়ে সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছিলেন। আপিল আংশিক মঞ্জুর করে সংক্ষিপ্ত রায় দেওয়া হয়।
রায়ে বলা হয়, ধর্মীয় বিষয়ে ফতোয়া দেওয়া যেতে পারে। তবে এর মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক কোনো ধরনের শাস্তি দেওয়া যাবে না। ধর্মীয় বিষয়ে ফতোয়া দেওয়া যেতে পারে। যথাযথ শিক্ষিত ব্যক্তিরা ফতোয়া দিতে পারেন। তবে তা মানতে বাধ্য করা যাবে না। ফতোয়ার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক কোনো ধরনের শাস্তি দেওয়া যাবে না। রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনে ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকার ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে, এমন কোনো ধরনের ফতোয়া দেওয়া যাবে না।
ফতোয়া নিয়ে আপিলের ওপর এ রায় দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৬ বিচারকের বেঞ্চ।
যে নির্দিষ্ট ঘটনাটিকে ঘিরে হাইকোর্ট ফতোয়া নিষিদ্ধের রায় দিয়েছেন, সেটি সঠিক ছিলো। তবে সব ধরনের ফতোয়াকে অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় যথার্থ ছিলো না বলে মত দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগের রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে আপিলকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আব্দুর রাজ্জাক।
২০০০ সালের ২ ডিসেম্বর একটি পত্রিকায় ফতোয়া সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, নওগাঁ জেলার সদর উপজেলার কীর্তিপুর ইউনিয়নের আতিথা গ্রামের এক গৃহবধূকে ফতোয়া দিয়ে হিল্লা বিয়ে দিতে বাধ্য করা হয়। বিষয়টি নজরে এলে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন।
রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি বিচারপতি গোলাম রাব্বানী এবং বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার হাইকোর্ট বেঞ্চ সব ধরনের ফতোয়াকে অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত বলে রায় দেন।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছর মুফতি মো. তৈয়ব ও মাওলানা আবুল কালাম আজাদ নামে দুই ব্যক্তি আপিল করেন।
২০১১ সালের ১ মার্চ আপিলের শুনানি শুরু হয়। শুনানির এক পর্যায়ে আদালত এ বিষয়ে বিস্তারিত আইনি ব্যাখ্যার জন্য এমিকাস কিউরি হিসেবে সাবেক বিচারপতি টি এইচ খান, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম ও এ এফ হাসান আরিফ, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বি এম নূরুল ইসলাম, ড. এম জহির, ব্যারিস্টার রাবেয়া ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট এম আই ফারুকী এবং ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদকে নিযুক্ত করেন। এরপর সবপক্ষের শুনানি শেষে বিষয়টি রায়ের জন্য ৪ মে অপেক্ষমান রাখেন আপিল বিভাগ। পরে ওই বছরের ১২ মে সর্বোচ্চ আদালত ফতোয়া নিয়ে সংক্ষিপ্ত রায় দেন। এর সাড়ে তিন বছরের মাথায় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৫