ঢাকা: ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ডের ৫ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো প্রকৃত খুনিদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সংস্থা কাজ করলেও লক্ষণীয় কোনো অগ্রগতি নেই মামলাটিতে।
গত বছরের ২৭ আগস্ট রাতে নিজ বাসায় জবাই করে হত্যা করা হয় ইসলামী ফ্রন্টের এই নেতাকে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পশ্চিম টিমের সহকারী কমিশনার (এসি) জুলহাস উদ্দিন আকন্দ বাংলানিউজকে বলেন, একটি মামলার তদন্ত কাজ যেভাবে এগোয়, এটিও সেভাবে এগোচ্ছে। তবে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কোনো হত্যাকারীকে এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
এ পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজনদের ব্যবহৃত সন্দেহে ৭ হাজার মোবাইল ফোন নম্বর ট্র্যাক করা হয়ছে। তবে সন্দেহভাজনরা ইন্টারনেটে কথা বলার অ্যাপ্লিকেশন ভাইবারের মাধ্যমে যোগাযোগের কারণে পুলিশ তাদের গতিবিধি অনুসরণ করতে পারছে না বলে জানান এই তদন্ত কর্মকর্তা।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোজাফফর উদ্দিন মহসিন নামে আহলে হাদিসের নেতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলেও বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন একজন তদন্ত কর্মকর্তা।
ফারুকী হত্যাকাণ্ডের ২ সপ্তাহ পর পুলিশের পক্ষ থেকে জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের জড়িত থাকার বলা হয়েছিল। তবে তদন্তে এখনো তাদের সংশ্লিষ্টতার ‘হদিস’ পাওয়া যায়নি বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা সংস্থার আরেক কর্মকর্তা।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপ-কমিশনার (ডিসি) পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, হত্যাকারীরা চিহ্নিত হয়নি। তবে সন্দেহভাজনদের নিয়মিত জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
তদন্তের ‘ধীরগতি’ দেখে হতাশ ও ক্ষুব্ধ ফারুকীর পরিবার। ফারুকীর বড় ছেলে রেজা ফারুকী বাংলানিউজকে বলেন, মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি, যোগাযোগ করা হয় না। কিছু জিজ্ঞেস করলে তারা বলে, ‘ঢাকঢোল পিটিয়ে নয়, তদন্ত চলছে নীরবে। তদন্তের গতি বৃদ্ধির জন্য উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। তবে পুলিশ এর আগেই আদালত থেকে তদন্তের জন্য অতিরিক্ত সময় চেয়ে নিয়েছে।
ইসলামী ছাত্র সেনার পক্ষ থেকে জামায়াতের কয়েকজন নেতাসহ ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপকদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্যেও গ্রেফতার করা হলো না বলেও আক্ষেপ করেন রেজা ফারুকী।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের পর বিচারের দাবিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার না করা হলে আগামীতে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র সেনা।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার বাংলানিউজকে বলেন, তদন্তের ধীরগতি দেখে এটা স্পষ্ট যে, খুনিদের আড়ালের চেষ্টা চলছে। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আগামী ২৮ মার্চ ঢাকা থেকে রোডমার্চ করা হবে। দেশব্যাপী জনমত সৃষ্টি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচি থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৫