ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলানিউজকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

আঞ্চলিক সহযোগিতা ও বিশ্বজুড়ে উচ্চারিত বাংলাদেশ

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
আঞ্চলিক সহযোগিতা ও বিশ্বজুড়ে উচ্চারিত বাংলাদেশ ছবি:কাশেম হারুন / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বিদায়ী বছরে আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে দারুণ সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ দমন, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) বাস্তবায়নসহ নানা ক্ষেত্রের সফলতায় বিশ্বাঙ্গনে বছরজুড়ে বারবার উচ্চারিত হয়েছে বাংলাদেশের নাম।



বাংলানিউজকে দেওয়া সাক্ষাতকারে দেশের এসব সফলতার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

অতীত সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বিদায়ী বছরে বাংলাদেশের আঞ্চলিক সফলতার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা চুক্তির বাস্তবায়নকে উল্লেখ করেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে ৬৬ বছর ধরে রাষ্ট্রহীন মানুষ নাগরিকত্ব পান।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, এটি মূলত দ্বিপক্ষীয় বিষয় হলেও আঞ্চলিক ও বৈশ্বিকভাবে এর প্রভাব রয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের দীর্ঘ অমীমাংসিত ইস্যু বিনা রক্তপাতে, কোনো ধরনের সংঘাত বা উত্তেজনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ সমাধান- একটি নজিরবিহীন ঘটনা। বর্তমান বিশ্বে যেখানে অসহিষ্ণুতা বেড়েছে, এক দেশের প্রতি আরেক দেশের বিশ্বাসের ঘাটতি দেখা গেছে- সেখানে এতো বছর পরেও দীর্ঘদিনের জিইয়ে থাকা স্থলসীমানা সমস্যার সমাধান সারা বিশ্বে প্রশংসা পেয়েছে।

শাহরিয়ার আলম বলেন, বিশ্বনেতাদের নাড়িয়ে দিয়েছে এ ঘটনা। আর এর মাধ্যমে অর্জিত আত্মবিশ্বাসে ভর করে নেপাল, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে বিবিআইএন এবং বিদ্যুৎ বণ্টন চুক্তি করতে যাচ্ছি। যা সফলতার উদাহরণ হয়ে থাকবে।

সার্বিক বিবেচনায় কূটনৈতিক অঙ্গনে সরকার ২০১৫ সালে একটি ‘সফল’ বছর পার করেছে দাবি করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এ এক বছরে বাংলাদেশ বিশ্বাঙ্গনে অনেক বিষয়ে নেতৃত্ব দিয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রায় ১৪টি সংস্থার নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করে বিশ্বাঙ্গনে নিজের উপস্থিতি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ’।

‘এছাড়া বিশ্বের অন্য দেশ ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মতো বাংলাদেশকেও নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। সেখানেও সফল হয়েছে সরকার’।

জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের অনড় অবস্থানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ও সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক উদ্যোগগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের একাত্মতা প্রকাশ প্রশংসিত হয়েছে। প্রশংসা পেয়েছে শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশ নেওয়াও।

পররাষ্ট্রনীতির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দশম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের পররাষ্ট্রনীতি অংশকে গাইডলাইন ধরে আমরা এগিয়ে চলেছি। এ বছর শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের দু’বছর শেষ হচ্ছে। বিগত বছরের মতো বিদায়ী বছরেও আঞ্চলিক কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ সব পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

এক্ষেত্রে তিনি সার্কভুক্ত সম্মেলনে বাংলাদেশ এবং অংশ নেওয়া দেশগুলোর যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ সহযোগিতার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ঐকমত্যে পৌঁছানোর কথা উল্লেখ করেন।

এমডিজি বাস্তবায়নে সফলতার কথা উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, বিশ্বের যে কয়েকটি দেশ এমডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিশ্ব দরবারে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাম বারবার সুনামের সঙ্গে উচ্চারিত হয়েছে।

এ সফলতার পেছনে জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে এমডিজি’র লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে সমন্বিত করতে সরকারের নেওয়া উদ্যোগকে এগিয়ে রাখেন তিনি।
 
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বা এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রাও সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে জানান শাহরিয়ার আলম।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান সম্পর্ককে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ‘গভীর ও বিস্তৃত’ বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ক্রমাগত বাড়ছে। অতীতে কিছু বিষয়ে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ থাকলেও, বর্তমানে আমরা তাদেরকে দেশের বাস্তবতার বিষয়গুলো বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের চলমান বিচার প্রশ্নে আন্তর্জাতিক মহলের যে উদ্বেগ ও সমালোচনা ছিলো, তা দূর করতে সরকার সমর্থ হয়েছে। এখন একটিমাত্র দেশ (পাকিস্তান) নেতিবাচকভাবে বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছে।

আসছে বছরও বিশ্ব সংস্থাগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, তা অব্যাহত রাখাকে অগ্রগণ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে আরও বেশি হারে দক্ষ শ্রমিক পাঠানো এবং নতুন বাজার খোঁজাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার কথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
জেপি/এসএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।