ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মুছে গেছে ভাড়াউড়া চা বাগানের ৪৭ শহীদের নাম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৮
মুছে গেছে ভাড়াউড়া চা বাগানের ৪৭ শহীদের নাম ভাড়াউড়া চা বাগানের গণহত্যার স্মৃতিস্তম্ভ। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া ভাড়াউড়া চা বাগানের ৪৭জন চা শ্রমিকদের নাম আজ বিলুপ্তির পথে। হৃদয়ের মণিকোঠর আর স্মৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। সেদিনের রক্তরঞ্জিত সেই মৃত্যুপুরীটি আজ স্মৃতিসৌধ, যা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে।

ভাড়াউড়া চা বাগানের প্রবেশমুখে অবস্থিত চা শ্রমিকদের গণহত্যার স্মৃতিস্তম্ভটি স্থাপিত হলেও সেখানে নেই নামের তালিকা। নতুন প্রজন্ম কিংবা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আগ্রহীদের জন্য সঠিক ইতিহাস নির্ভর নামের তালিকা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে শহীদের পরিবার।

বাংলানিউজজের অনুসন্ধানে এবং চা শ্রমিক নেতা বিজয় হাজরার সহযোগিতায় ভাড়াউড়া চা বাগানের প্রতিটি শ্রমিক লাইন ঘুরে এই নামগুলো খুঁজে পাওয়া গেছে। ১৯৭১ সালের ১ মে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া চা-বাগানে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যায় প্রাণহারানো ব্যক্তিরা হলেন:

১) হোসেনী হাজরা, ২) চিনিলাল হাজরা, ৩) গুরা হাজরা, ৪) টিমা হাজরা, ৫) শনিচারা হাজরা, ৬) হুলা হাজরা, ৭) হিংরাজ হাজরা, ৮) কৃষ্ণচরণ হাজরা, ৯) মহারাজ হাজরা, ১০) নুনু লাল হাজরা, ১১) মংগুরা হাজরা, ১২) ডুমার চন্দ তুড়িয়া, ১৩) সোম মাঝি, ১৪) নকুলা হাজরা, ১৫) কালাচান্দ ঘাটুয়ার, ১৬) সুখ রঞ্জন রিকিয়াশন, ১৭) ইন্দ্র ভূঁইয়া, ১৮) ফাগু হাজরা, ১৯) রামরাল হাজরা, ২০) জগু হাজরা, ২১) বিশ্বম্ভর হাজরা, ২২) হিরুয়া হাজরা, ২৩) শিব মুড়া, ২৪) চৈইত ভুঁইয়া, ২৫) অঘনু ভুঁইয়া, ২৬) বুকউ তেলী, ২৭) রাজকুমার মাল, ২৮) রামরাল মাল, ২৯) ফেরুয়া গৌড়, ৩০) রামকৃষ্ণ গৌড়, ৩১) রামচরণ গৌড়, ৩২) গবিনা গৌড়, ৩৩) ভজুয়া হাজরা, ৩৪) গঙ্গা বারই, ৩৫) রামদেও হাজরা, ৩৬) জগদেও কাহার, ৩৭) গঙ্গা কুর্মী, ৩৮) চুনি হাজরা, ৩৯) অমৃতা হাজরা, ৪০) ক্ষুদিরাম হাজরা, ৪১) বীরবলী হাজরা, ৪২) ব্রিজনারায়ন গোয়ালা, ৪৩) মংরা তুড়িয়া, ৪৪) হরকু হাজরা, ৪৫) রামসুরুক হাজার, ৪৬) বাংশিং তুড়িয়া এবং ৪৭) মংরা হাজরা।

এছাড়াও সেদিন মরদেহের স্তুূপ থেকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে যারা বেঁচে গিয়েছিলেন জামহির হাজরা, গোরাপচাদ হাজরা, চিনিয়া হাজরা, কৈলা হাজরা, তেতলা হাজরা, কেদারলাল হাজরা, রমেশ হাজরা, করমা হাজরা, ডেপুয়া হাজরা প্রমুখ। তাদের কারও শরীরে গুলি লেগেছিল, কারও লাগেনি। গুলির আগেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন। তবে তাদের কেউই আর বেঁচে নেই।

শহীদ ফাগু হাজরার একমাত্র ছেলে এবং চা শ্রমিক নেতা বিজয় হাজরা বাংলানিউজকে স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি তখন ছোট ছিলাম। আমার বাবা (ফাগু হাজরা) চা বাগানে ট্রাক্টর চালাতেন। বাবাকে যখন পাকিস্তানীরা ধরে নিয়ে যায় তখন আমিও ছিলাম। আমাকে ‘হট যাও’ (সরে যাও) বলে সরিয়ে দেওয়া হয়। চা বাগানের অন্যান্য সবার সাথে বাবাকেও জড়ো করা হয়। তারপর এই বধ্যভূমিতে নিয়ে দাঁড় করিয়ে গুলি করে। ‘টেটেটে’ গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে চারদিক। আমরা বাগান থেকে তখন পালিয়ে যায়।  

ভাড়াউড়া চা বাগানের প্রাক্তন সর্দার জয়রাম হাজরা বাংলানিউজকে বলেন, পাকিস্তানি সেনারা এসে ‘চলো, তুমলোক কাজ করেগা’ (চলো, তোমরা কাজ করবে) বলে অনেক মানুষকে নিয়ে বটগাছের নিচে জড়ো করে। তারপর নতুন উদ্বোধন হওয়া কালীবাড়ির সামনে নিয়ে চা শ্রমিকদের গুলি করে হত্যা করে। শ্রমিকদের কাজ দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যায়। এই ঘটনাগুলো আমি প্রত্যক্ষদর্শীর কাজ থেকে শুনেছি।

শহীদ কালাচাঁদ ঘাটুয়াল নাতি মৃত উজ্জ্বল ঘাটুয়ালের স্ত্রী কনক ঘাটুয়াল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা শহীদ পরিবার। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো সরকারি-বেসরকারি সাহায্য পাই নাই।  

বাংলাদেশ সময়: ১২০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৮
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।