তিনি বলেন, ১০২টি প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পখাতের অন্তত ৬২টিতে ঘোষিত মজুরি কাঠামো নেই। রপ্তানি আয়ের প্রধান খাতের গার্মেন্টস শ্রমিকরা নূন্যতম মজুরি ১৮ হাজার টাকা দাবি করছে, অথচ দাবির অর্ধেক বেতনও তাদের দেওয়া হয়নি।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে শহরের অশ্বিনী কুমার হলে অনুষ্ঠিত শ্রমিক সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রতন বলেন, ন্যায্য মজুরি ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইনসহ শ্রমিকের অধিকারসমূহ আন্দোলন-সংগ্রামের পথেই আদায় করতে হবে। কারণ শ্রমিকদের গণতান্ত্রিক শ্রম আইনের দাবি আজ উপেক্ষিত। যতোটুকু আইন আছে, তারও কার্যকারিতা নেই। শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতির জন্য নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র তাও দেওয়া হয় না। কাজ করতে এসে প্রতিবছর বহু শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেন, কিন্তু তাদের কর্মক্ষেত্রে জীবনের নিরাপত্তা নেই। আজ কর্মক্ষেত্রে নিহত-আহত হলে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা আর পুনর্বাসনের দাবি উপেক্ষিত।
তিনি বলেন, শ্রমিকরা দেশের শিল্প বা কারখানা বাঁচিয়ে রাখতে সংগ্রাম করে জীবন দিচ্ছে, তাদের সব জীবনীশক্তি ক্ষয় করে উৎপাদনের চাকাকে সচল রাখছে, উন্নয়নের গতিকে ধরে রাখছে, কিন্তু তারা মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারছেন না। তাদের থাকার ঘর নেই, তিন বেলা মানসম্মত খাবার জোটে না, রেশনের দাবি উপেক্ষিত। চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল ও তাদের সন্তানের লেখাপড়ার কোনো ব্যবস্থা নেই।
শ্রমিক ফ্রন্ট বরিশাল জেলা কামিটির সহ-সভাপতি দুলাল মল্লিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- বাসদ বরিশাল জেলার আহ্বায়ক ইমরান হাবিব রুমন, সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের শহীদুল ইসলাম, বাবুল তালুকদার, মিজানুর রহমান, হানিফ মৃধা প্রমুখ।
রুমন বলেন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমক ফ্রন্ট তার জন্মলগ্ন থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক সবখাতের শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ ও সচেতন করার সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। শ্রমিক ফ্রন্ট মনে করে আন্দোলন সংগ্রামের পথেই গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, ন্যায্য মজুরি, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার আদায় ও সুবিধাবাদী ট্রেড ইউনিয়নের বিপরীতে বিপ্লবী ধারার ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যেখানে শ্রমিকদের সমস্যা সেখানেই সংগঠন এবং আন্দোলন গড়ে তুলে দাবি আদায় করতে হবে।
ডা. মনীষা বলেন, পর্যাপ্ত শিল্প-কলকারখানা না থাকায় বরিশালে কর্মসংস্থানের সুযোগ একেবারেই কম। বিসিকসহ যে কারখানাগুলো আছে সেখানেও ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। ফলে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত।
তিনি বলেন, ভোলার গ্যাস দেশীয় কোম্পানি বাপেক্সকে দিয়ে উত্তোলন করে বরিশাল বিভাগে গ্যাসভিত্তিক কারখানা নির্মাণ করে বেকার সমস্যা সমাধান এখন সময়ের দাবি। আবার বিকল্প কর্মসংস্থান ছাড়া বস্তি, রিকশা ভ্যান উচ্ছেদ না করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। অবিলম্বে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করে ব্যাটারিচালিত সব যানবাহনের লাইসেন্স দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশ শেষে একটা লাল পতাকা সজ্জিত র্যালি বের করা হয়, যা শহরের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
এর আগে বরিশাল সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের নিহত দুই সদস্য ও অসুস্থ এক সদস্য পরিবারের মধ্যে আর্থিক সহায়তা দেন কেন্দ্রীয় সভাপতি ও স্থানীয় নেতারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২০
এমএস/আরবি/