লিখন যশোরের মনিরামপুর পৌর এলাকার তাহেরপুর গ্রামের সন্তোষ চক্রবর্তীর ছেলে। সে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় মনিরামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে অংশ নিয়েছে।
প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শৈশব থেকেই মা ব্যতিত জীবনের কোনো কিছুই বোঝেনি সে। মায়ের সঙ্গে ছিল বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক। তেমনি চার ভাই-বোনের মধ্যে লিখন একমাত্র ছেলে হিসেবে মায়ের কাছে অত্যন্ত আদরের ছিল। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, মায়ের মরদেহ বাড়িতে রেখে গণিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয় তাকে।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে লিখনের মা মল্লিকা চক্রবর্তীর (৫২) মৃত্যু হয়। তবে মঙ্গলবার ছিল লিখনের গণিত পরীক্ষা। পরীক্ষা দিয়ে বিকেলে পৌরসভার তাহেরপুর মহাশ্মশানে মায়ের শেষ কৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন করে সে।
এখনো বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। শোকাবহ পরিবেশের মধ্যে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) পরীক্ষা দিতে হবে তাকে।
লিখনের বাবা সন্তোষ চক্রবর্তী জানান, স্ত্রী (লিখনের মা) মল্লিকা দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ুজনিত রোগে ভুগছিলেন। তাদের তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে। লিখন তাদের একমাত্র ছেলে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় উন্নত চিকিৎসা করানোর পরও তার স্ত্রীকে বাঁচাতে পারেননি।
লিখনের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ জানান, লিখন ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব পরীক্ষায় প্রথমস্থান অধিকার করেছে। এবারের এসএসসি পরীক্ষায়ও সে ঈর্ষণীয় ফলাফল অর্জন করবে বলে তিনি আশাবাদী।
বোন মাধবী চক্রবর্তী জানান, পরিবারে সবার প্রিয় লিখন। তার এখনও আটটি পরীক্ষা বাকি। একদিকে মায়ের শোক কোনোভাবেই সইতে পারছি না। অপরদিকে ভাইয়ের পড়ালেখা আর পরীক্ষা নিয়ে আমরা শোকে পাথর হয়ে গেছি।
মঙ্গলবার বিকেলে তাহেরপুর মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০১২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০
ইউজি/আরবি/