বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে চট্টগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষার সমান সুযোগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নকে টেকসই করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
‘মেধাবী শিক্ষার্থীরা যেন বিপথগামী হয়ে জঙ্গিবাদে না জড়িয়ে পড়ে সেজন্য আমরা শিক্ষক ও অভিভাবকদের সচেতন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এগুলো হলো-শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জঙ্গিবাদ বিরোধী নানামুখী সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে; যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া ১০ দিনের বেশি অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শনাক্ত করছে; অনুপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকের সঙ্গে আলোচনা করে অনুপস্থিতির কারণ সন্দেহজনক বলে প্রতীয়মান হলে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অভিভাবক-শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীর সমন্বয়ে অভিভাবক সমাবেশ আয়োজন করা হচ্ছে । ’
তিনি আরও বলেন, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সন্ত্রাসী ও ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ বিরোধী সভা করা হচ্ছে; কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষার্থীদের জন্য এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিজ পরিচালনা করা হচ্ছে; শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে ও নৈতিক শিক্ষা প্রদানে পাঠ্যপুস্তকে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে; পাঠ্যপুস্তকে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস সন্নিবেশিত করা হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় দিবস বিষয়ে শিশু কিশোরদের অবহিত করার জন্য পাঠ্যপুস্তকে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার নির্মাণ করা হচ্ছে; বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন হতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ হতে শুরু করে প্রতিটি হল ও ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক ডিজিটাল সিকিউরিটি সিস্টেম ব্যবহার করে ছাত্র-ছাত্রীদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার ও মনিটরিং করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
‘উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিরাপদে থাকুক এবং মুক্তচিন্তা, উদার দৃষ্টিভঙ্গিতে বেড়ে উঠুক সে প্রত্যাশায় বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন নেটওয়ার্কের (BDREN) মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে বহিঃবিশ্বের গবেষণা ও শিক্ষা নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বার্থে ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর বিবেচিত হতে পারে এমন কোনো কার্যকলাপে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করবে না এবং সন্ত্রাসী বা জঙ্গি তৎপরতা বা এই জাতীয় কোনো কার্যকলাপে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কোনোভাবেই পৃষ্ঠপোষককতা করা যাবে না মর্মে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ’
তিনি আরও বলেন, জঙ্গি/সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যেন কোনোভাবে সম্পৃক্ত থাকতে না পারে সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যানকে আহবায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে জঙ্গিবাদ বিরোধী ব্যানার, ফেস্টুন সরবরাহ করা হয়। জেলা/ উপজেলা পর্যায়ে আয়োজিত জঙ্গিবাদ বিরোধী র্যালি/সমাবেশে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারাদেশে সর্বস্তরের জনসাধারণ, শিক্ষক, অভিভাবক, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে জঙ্গিবাদের কুফল তুলে ধরে বিভিন্ন গণসচেতনতামূলক কর্মসূচি আয়োজন করা হচ্ছে; জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গৃহীত এ সকল গণসচেতনতামূলক প্রচারণা প্রিন্ট মিডিয়া, টিভি চ্যানেল, অনলাইন ও সামাজিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ চালু হওয়ার ফলে অন্য অপরাধের মতো জঙ্গি কর্মকান্ডের সংবাদ তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় জঙ্গিবাদ দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০
এসই/এইচএডি/