হৃদয়ের দশদিগন্তে এখন রঙিন আলোর নাচন। সে আলোয় দুলে উঠছে আত্মার গহিনে লুকানো ভালোবাসার কথা।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের সঙ্গে সঙ্গে ১লা ফাল্গুনও। ভালোবাসা দিবস আর পহেলা ফাল্গুন- এ দুটি ক্ষণকেই আপন করে নিয়েছে তরুণ প্রজন্মসহ সব বয়সী মানুষেরা। ফাগুনে গাছে গাছে ফুটেছে শিমুল ও পলাশ। প্রকৃতি সেজেছে বাহারি রঙে। আর নগরে বসন্ত এসেছে তরুণ-তরুণীর বেশভূষায়। এই উৎসবের আমেজই আরও রঙিন হয়ে উঠবে ভালোবাসা দিবসের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে।
'ভালোবাসা'- মাত্র চারটি অক্ষর। অথচ এই চারটি অক্ষরে বেষ্টিত শব্দের গভীরতা আর ব্যাপকতা সীমাহীন। 'ভালোবাসা দিলে মা মরে যায়/ যুদ্ধ আসে, ভালোবেসে/ মায়ের ছেলেরা চলে যায়'- কী প্রগাঢ় এক শক্তি আর বিষাদ এই ভালোবাসার। তবুও কবি উচ্চারণ করেন- 'মনে রেখো ভালোবাসা তোমার আমার'। তাইতো যুগে যুগে, কালে কালে ভালোবাসার টানে আকুল হয়েছে মানব-মানবী। হৃদয়ের প্রগাঢ় আকাঙ্ক্ষা আর মমতা দিয়ে পরস্পরকে কাছে টেনেছে। আবেগমথিত কণ্ঠে একে অন্যকে বলেছে, 'জানি শুধু তুমি আছ তাই আছি/ তুমি প্রাণময় তাই আমি বাঁচি'।
আজকের দিনে প্রকাশ করা ভালোবাসাটাই বসন্তের এই ঋতুতে বাড়িয়ে ফেলবে তার পরিধি। বাড়বে আবেগ, মমতাও। কি জানি এক অচেনা ঘোরে এই বসন্ত প্রকৃতিতে ঢুকতেই নিয়ে আসে ভালোবাসার অমর বাণী। প্রকৃতি তখন ভালোবাসায় বুঁদ হতে হতে নিঃশেষ হয়ে যায়! আর ভালোবাসা নামের সেই অব্যক্ত অনুভূতিকে ব্যক্ত করতে গিয়েই মহিমান্বিত হয় বছরের নিদিষ্ট একটি দিন- 'ভ্যালেন্টাইন্স ডে' বা 'ভালোবাসা দিবস'। রোমান বিশ্বাসমতে, আজ প্রেমের দেবতা কিউপিড 'প্রেমবাণ' বা শর বাগিয়ে ঘুরে ফিরবে হৃদয় থেকে হৃদয়ে। অনুরাগতাড়িত প্রেমিক-হৃদয় এফোঁড়-ওফোঁড় হবে দেবতার বাঁকা ইশারায়।
ইতিহাস মতে, রোমান পাদ্রি সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ক্রিশ্চিয়ান ধর্ম প্রচারের অভিযোগে ২৭০ সালে মৃত্যুদণ্ড দেন রোমের দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। তিনি কারাগারে বন্দি থাকার সময় ছোট ছেলেমেয়েরা তাকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে জানালা দিয়ে চিঠি ছুড়ে দিত। বন্দি সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন চিকিৎসা করে জেলারের মেয়ের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন। এভাবে মেয়েটির সঙ্গে তার যোগাযোগ ঘটে। মারা যাওয়ার আগে মেয়েটিকে লেখা একটি চিঠিতে তিনি জানান, 'ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন। ' অনেকে মনে করেন, এই সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারেই প্রথম জুলিয়াস ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে 'সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে' হিসেবে ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে নয়; বরং তা ছড়িয়ে পড়েছে বাবা-মা, ভাই-বোন, সন্তান, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন, প্রিয় ব্যক্তিত্ব, এমনকি পোষা প্রাণী থেকে শুরু করে গাছপালার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশেও।
দিবসটি কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে নগরীর বিভিন্ন বিপণিবিতানে গিয়ে তরুণ-তরুণীদের ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কার্ড, শোপিসসহ নানা উপহারসামগ্রী কিনতে দেখা গেছে। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। নামকরা হোটেল ও রেস্টুরেন্ট বিশেষ লাঞ্চ ও ক্যান্ডল-লাইট ডিনারের ব্যবস্থা করেছে।
টেলিভিশনে আজ প্রচার হবে বিশেষ অনুষ্ঠান। আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন কনসার্টেরও। আর সেই সব কিছুতেই আজ উচ্চারিত হবে ভালোবাসার কথা, ভালোবাসার মানুষটিকে হৃদয়ের মাঝখানটাই গেঁথে রাখবার কথা।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০
এইচএমএস/আরএ