রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এমন তথ্য জানান গ্রেফতার গোপাল মণ্ডল (২০) ।
জানা গেছে, নাজিরপুর উপজেলার পশ্চিমচর বানিয়ারী গ্রামের ভগ্নিপতি মহানন্দ মধুর বাড়িতে বেড়াতে এসে গত ৬ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন বাবলু।
এ ঘটনায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি নাজিরপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মাত্র তিন দিনের মধ্যে ওই ক্লুলেস হত্যা মামলার আসামিকে গ্রেফতারসহ হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হয়।
পিরোজপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সূত্র জানায়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পিরোজপুরের পুলিশ পরিদর্শক মো. আহসান কবির জানান, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত একমাত্র খুনী গোপাল মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে পিরোজপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পল্লবেশ কুণ্ডর আদালতে হাজির করলে তিনি খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।
পিবিআই সূত্র আরও জানায়, ত্রিভুজ প্রেমের কারণে গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে মোবাইলে ফোন করে নাজিরপুর উপজেলার পশ্চিমচর বানিয়ারী এলাকায় ডেকে নিয়ে বাবলুকে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করলে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে কাচি (সিজার) দিয়ে বুকে আঘাত করে তাকে হত্যা করে বন্ধু গোপাল মণ্ডল।
ঘাতক গোপাল বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার চরবানিয়ারী বাওয়ালীপাড়া গ্রামের গোলক মণ্ডলের ছেলে। খুনের পর মরদেহ গুম করার জন্য বাবলুর পরিহিত প্যান্টের বেল্ট খুলে গলায় পেঁচিয়ে মরদেহ টেনে স্থানীয় সমীর মণ্ডলের মাছের ঘেরের পাশে হোগলা ক্ষেতে ফেলে রাখে।
এছাড়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লাঠি স্থানীয় বিকাশ মণ্ডলের মাছের ঘেরে, কাচি (সিজার) একটি ডোবায় এবং নিহত বাবলুর ব্যবহৃত মোবাইলটি পার্শ্ববর্তী খালে ফেলে দেয় ঘাতক গোপাল। গ্রেফতারের পর তার দেওয়া তথ্যমতে সেগুলো উদ্ধার করে পিবিআই।
পিআইবি সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট সদর উপজেলার হালিশহর এলাকার বাসুদেব মণ্ডলের ছেলে নিহত বাবলু মণ্ডল গত ২৯ জানুয়ারি সরস্বতি পূজা উপলক্ষে নাজিরপুর উপজেলার পশ্চিম চরবানিয়ারী গ্রামে ভগ্নিপতি মহানন্দ মধুর বাড়িতে বেড়াতে যায়। ওই বাড়িতে থাকাকালীন গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে তার ব্যবহৃত মোবাইলে ফোন করে কেউ তাকে ডেকে নেয়। এর পর থেকে সে নিখোঁজ ছিল। এ ঘটনায় ৮ ফেব্রুয়ারি ভগ্নিপতি মহানন্দ নাজিরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ওই দিন বিকেলে নাজিরপুর উপজেলার পশ্চিম চরবানিয়ারী গ্রামের সমীর মণ্ডলের মাছের ঘেরের পাশে হোগলা ক্ষেত থেকে বাবলু মণ্ডলের মরদেহ উদ্ধার করে নাজিরপুর থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে ৯ ফেব্রুয়ারি নাজিরপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে দেওয়া হলে পিবিআই পিরোজপুরের পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে গোপালকে গ্রেফতার করে। পিবিআইর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং প্রেমের কারণে সে বাবলু মণ্ডলকে হত্যা করেছে বলে জানায়।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে গোপাল মণ্ডল জানায়, ২ বছর ধরে একই গ্রামের একটি মেয়ের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। একপর্যায়ে বাবলু মণ্ডল তার প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ওই মেয়েটির সঙ্গে বাবলুরও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি জানার পর সে বাবলুকে সতর্ক করে দেয়। এতেও বাবলু সড়ে না গেলে গোপাল তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে এবং ৬ ফেব্রুয়ারি বাবলুকে তার ভগ্নিপতি মহানন্দের বাড়ি থেকে মোবাইলে ফোন করে ডেকে নিয়ে হত্যা করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২০
আরএ