সেই সঙ্গে তিনি সংসদ কার্যকর করার জন্য বিরোধী দলের সদস্যদের পাশাপাশি শুধুমাত্র মন্ত্রী ছাড়া সরকারি দলের সব সদস্য সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার বিধান চালু করারও প্রস্তাব করেন।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ প্রস্তাব করেন।
জিএম কাদের বলেন, গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা। জাতীয় নির্বাচনে বহুল প্রচলিত বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন ভোট পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে অনিয়মের সুযোগ ও সম্ভাবনা কম। এ পদ্ধতির কারণে জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতি করেন অর্থাৎ সংসদ সদস্যরা সমগ্র দেশের ভোটে নির্বাচিত হবেন। ছোট ছোট দেশের পক্ষে সারাদেশে ব্যাপী কিছু না কিছু ভোট থাকলে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ থাকবে।
তিনি বলেন, পৃথিবীর বহু দেশে সংখ্যানুপাতিকহারে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের পদ্ধতি চালু হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে যে দল শতকরা ২০ শতাংশ ভোট পাবে, সেই দল সংসদের মোট আসনের ২০ শতাংশ সংসদ সদস্য পাবে। সংসদের মোট আসন ৩০০ হলে সেই দল ৬০টি আসন পাবে স্বভাবিকভাবে এটাই নিয়ম।
‘তবে ভগ্নাংশ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে ব্যবস্থা আছে। অনেক ক্ষেত্রে দলীয় প্রার্থীদের ক্রম নির্ণয় হয় ভোটারদের পছন্দের মাধ্যমে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে আনুপাতিক হারে প্রতিনিধি নির্বাচন ভোট পদ্ধতি। এতে নির্বাচনী ব্যবস্থায় কোনো সমস্যা হবে না। নির্বাচনী ব্যবস্থা সুসংসহত হবে। ’
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে থাকা বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ করে জাপা চেয়ারপারসন বলেন, আমরা এই অনুচ্ছেদটি পুরোপুরি বাতিল হোক এটা চাই না। তবে সংসদীয় ব্যবস্থার যে পদ্ধতি আমাদের দেশে চালু আছে সেটা সংসদে সরকারি দলের সদস্যদের সরকারি কর্মকাণ্ডের কোনো বিরোধিতা কিংবা সরকারের বাইরে ভোট প্রদানের সুযোগ নেই। সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের মূল কেন্দ্রবিন্দু হবে জাতীয় সংসদ। কিন্তু এখানে ঘাটতি রয়েছে।
‘ওয়েস্ট মিনিস্টার পদ্ধতির সরকারে শুধু সরকারি দলের মন্ত্রীরা ছাড়া বাকি সব সদস্য, বিরোধী দলের সদস্য সবাই সরকারের যে কোনো বিষয়ে সমালোচনা এবং বিপক্ষে ভোট দিতে পারে। শুধু মন্ত্রীরা পারে না। বাজেট, অভিশংসন ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে বিরোধী দলের সদস্যদের পাশাপাশি সরকারি দলের সদস্যরাও যাতে বিপক্ষে ভোট দিতে পারে, সে ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাহলে সংসদ কার্যকর হবে। ’
বিরোধী দলের উপনেতা আরও বলেন, সংসদে সমালোচনা হলে সংসদ প্রাণবন্ত হয়। বিরোধী দলের সদস্যরা কোনো বিষয়ে সুপারিশ মেনে নেওয়া হলে তা সংসদকে কার্যকর করে। এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা বেকারত্ব। এই বেকারেত্বের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে, কিন্তু বেকারের তুলনায় কর্মসংস্থান হচ্ছে না। শিক্ষা ব্যবস্থাকে কর্মের উপযোগী করে ঢেলে সাজাতে হবে, তাতে বেকার সমস্যা কিছুটা হলেও দূর হবে।
তিনি বলেন, যেভাবে মাদক ছড়িয়ে পড়ছে তা সত্যিই আশঙ্কাজনক। গত বছর মাদক বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালনা হচ্ছে, কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্টতা থাকায় এ অভিযান সফল হচ্ছে না।
‘দেশের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে জনসংখ্যা। প্রতিনিয়তই জনসংখ্যা বাড়ছে। বিশ্বের সবচেয়ে জনসংখ্যার দেশ প্রথমে চীন, পরে ভারত। কিন্তু বাংলাদেশের জনঘনত্ব চীনের চেয়ে আটগুণ, ভারতের চেয়ে সাড়ে তিনগুণ বেশি। এ সমস্যার সমাধান করা জরুরি,’ যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২০
এসকে/এমএ