ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পান না হিজড়ারা

রেজাউল করিম রাজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২১
যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পান না হিজড়ারা

ঢাকা: হিজড়া জনগোষ্ঠী বলতে অনেকেই ভাবেন, রাস্তা ঘাটে, বাসে ট্রেনে যারা চোখে মুখে কড়া মেকআপ, ঠোঁটে গাঢ় লিপিস্টিক লাগিয়ে চাঁদাবাজি করেন কিংবা মানুষের সঙ্গে অশ্লীল কথা বলেন।  

কিন্তু এদের বাইরেও আরও অনেক হিজড়া আছেন, যারা সমাজের বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়েছেন।

 তবে শিক্ষাগ্রহণ শেষে যোগত্যানুযায়ী তারা কোনো চাকরি পাচ্ছেন না।

সম্প্রতি রাজধানীর বেশ কিছু এলাকার  হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাদের কাজ না পাওয়ার বিষয়ে জানা যায়।

হিজড়ারা জানান, জীবন যাপনের জন্য সব থেকে বেশি প্রয়োজন কর্মসংস্থানের। কিন্তু সেই কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে তাদেরকে নানা হয়রানি এবং অপমানের শিকার হতে হয়। অধিকাংশ চাকরির ক্ষেত্রে লিঙ্গ হিসেবে পুরুষ অথবা নারী চাওয়া হয়।  চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়াদের জন্য কোনো বিকল্প না থাকায় অনেক হিজড়া যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরির আবেদনই করতে পারেন না। অন্যদিকে আবেদন করলেও মৌখিক পরীক্ষার সময় হিজড়া হওয়ার কারণে তাদেরকে চাকরি দেওয়া হয় না। যার ফলে অনেক হিজড়াই কাজের অনিশ্চয়তার ফলে গণপরিবহনে, পাড়া মহল্লায় চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত হন।

বাড্ডা এলাকায় বসবাসরত স্নাতক সম্পন্ন করা কনা নামের একজন হিজড়া চাকরির জন্য ভাইভা বোর্ডের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, খাদ্য অধিদপ্তরের পিয়ন পোস্টে আমি চাকরির জন্য আবেদন করেছিলাম। ভাইভা দেওয়ার সময়, তারা আমাকে জিজ্ঞেস করে আপনি কী মেয়ে না ছেলে? তখন আমি তাদের বলি, আমি একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। তখন তারা আমাকে বলে, না না এখানে আপনাকে চাকরি দেওয়া যাবে না। তখন তারা আমাকে ভাইভা বোর্ড থেকে বের করে দেয়। সবকিছু ঠিক থাকা সত্ত্বেও আমি হিজড়া হওয়ার কারণে, সেখানে আমার চাকরি হয়নি।

ভাটারায় থাকেন ম্যানেজম্যন্টে থেকে অনার্স পাশ করা রোজ নামের আরেকজন ট্রান্সজেন্ডার। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, হিজড়া হওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের সিভি প্রথমেই রিজেক্ট করে দেয়। আমরা অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি। তারপরেও কোনো লাভ হচ্ছে না। আমাদেরকে সমাজ এবং রাষ্ট্র কেউ কোনো চাকরির সুযোগ দিচ্ছে না। চাকরি বা কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা খুবই অবহেলিত।

আমাদের থেকে কম যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সেখানে কোনো মেয়ে বা ছেলেকে চাকরি দেওয়া হচ্ছে। আবার চাকরি হলেও দেখা যায়, একই যোগ্যতার অন্যদের ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হলেও আমাদেরকে কম বেতন দেওয়া হয়।

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়্যারিং থেকে পড়াশোনা করা রোদেলা নামের আরও একজন বলেন, চাকরির আবেদন ফরমে ছেলে অথবা মেয়ের কথা উল্লেখ থাকে, সেখানে অন্য কোনো লিঙ্গের কথা উল্লেখই থাকে না। স্কুলে ভর্তীর ক্ষেত্রেও একই আবস্থা। আমাদের দাবি সেখানে যেন আমাদেরকেও যুক্ত করা হয়। চাকরির ক্ষেত্রে সিভিতে হিজড়া উল্লেখ করলে প্রথমেই আমাদের বাতিল করে দেয়। সিভিতে যদি হিজড়া উল্লেখ নাও করি, তারপরেও ভাইভাতে যখন আমাদেরকে দেখে আমরা একটু আলাদা, তখন আমাদেরকে বাতিল করে দেয়। আমাদের সমাজের মানুষের মানসিকতাটাই এমন যে, হিজড়ারা কোনো কাজ করতে পারবে না। তারা মানুষের কাছ থেকে হাত পেতে চেয়ে খাবে। কিন্তু আমরা মানুষের কাছে হাত পাততে চাই না, আমরা কাজ করে খেতে চাই।  

চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে এসব হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষের চাওয়া, সমাজের অন্য ছেলে মেয়েদের যে যোগ্যতায় চাকরি এবং বেতন দেওয়া হয়, তাদেকেও যেন সেই অনুযায়ী চাকরি এবং বেতন দেওয়া হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২১
আরকেআর/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।