ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

অটোরিকশা উপহার পেল সেই ইয়াছিনের পরিবার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২
অটোরিকশা উপহার পেল সেই ইয়াছিনের পরিবার

লক্ষ্মীপুর: সংসারে উপার্জনের অবলম্বন অটোরিকশা চুরি যাওয়ায় কিশোর ইয়াছিনের কান্না যেন থামছেই না। ভাড়া করা অটোরিকশার শোকে কাতর ছিল লক্ষ্মীপুরের ইয়াছিন।

বাংলানিউজসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তার পরিবারকে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (মিশুক) উপহার দেয় ঢাকার বেসরকারি সংস্থা 'প্রজেক্টস ফর হিউম্যানিটি (পিফরএইচ)।

স্থানীয় সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে রিকশাটি ইয়াছিনে মা ফেন্সি আক্তারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

রিকশা হস্তান্তরের সময় লক্ষ্মীপুর সদরের ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি, ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোতাহের আলী ও সাংবাদিক মীর ফরহাদ হোসেন সুমন, মাহমুদ ফারুক, মো. নিজাম উদ্দিন, জামাল উদ্দিন রাফি, রুবেল হোসেন এবং জুনাইদ আল হাবিব উপস্থিত ছিলেন।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পৌর এলাকার দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের পলোয়ান মসজিদের কাছ থেকে কিশোর ইয়াছিনের অটোরিকশাটি চুরি হয়। এসময় সে কান্নায় ভেঙে পড়ে।  

ঘটনাটি এবং ইয়াছিনের পরিবারের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে প্রথম বাংলানিউজে 'মুহূর্তেই উধাও অটোরিকশা, কান্নায় ভেঙে পড়লো কিশোর চালক' শিরোনামে ইয়াছিনের ছবি দিয়ে মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপরই বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে খবরটি প্রচার হলে বিষয়টি অনেকের নজরে আসে। বিভিন্ন সংস্থা এবং লোকজন তাকে সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে আসে। 'রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার্স ক্লাব' নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইয়াছিনের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করে।  

এছাড়া দেশ-বিদেশ থেকে অনেকেই ফোন করে ইয়াসিনের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। ইয়াছিন সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের চরভুতা গ্রামের বাসিন্দা।  

ইয়াছিন জানায়, অভাবের সংসার হওয়ায় ১৪ বছর বয়সেই সে অটোরিকশার হ্যান্ডেল ধরেছে। তার বাবা চারটি বিয়ে করেছেন। গত দুই বছর থেকে তাদের কোনো খোঁজ রাখেন না বাবা ইব্রাহিম। তিন বোন ও মাকে নিয়ে খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছে সে। ৯ মাস আগে তার ছোট ভাইটি ব্রেন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।  

তার চিকিৎসা করাতে পরিবারের অনেক ঋণ করতে হয়েছে। ধার-দেনা শোধ এবং দুর্দশাগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সে দেড় মাস থেকে ভাড়ায় একটি অটোরিকশা চালানো শুরু করে। দিনে তিনশ টাকা ভাড়া দিতে হতো মালিককে। বাকি দুইশ বা তিনশ' টাকা দিয়ে তাদের সংসার চলতো।  

গত ৬ ফ্রেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে লক্ষ্মীপুরের ভবানীগঞ্জ চৌরাস্তা থেকে জেলা শহরে আসার জন্য দুইজন যাত্রী তার অটোরিকশায় ওঠে। কয়েক ঘণ্টা বিভিন্নস্থান ঘুরিয়ে পৌরসভার দক্ষিণ মজুপুর এলাকায় এনে সুযোগ বুঝে তার অটোরিকশাটি নিয়ে উধাও হয়ে যায় যাত্রীবেশী ওই দুই চোর।  

সে জানায়, অটোরিকশাটি চুরি যাওয়ায় তার মালিক তাকে জরিমানার জন্য চাপ দিচ্ছে। অন্যদিকে উপার্জনের একমাত্র অবলম্বনটি হারিয়ে সংসারের চাকা বন্ধ হয়ে গেছিলো।  

তবে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় বিভিন্নস্থান থেকে তার খোঁজ খবর নিচ্ছে অনেকে। থানা পুলিশ এবং র‌্যাব সদস্যরা তার অটোরিকশা এবং চোরদের সন্ধানে মাঠে নেমেছে।  

অটোরিকশা উপহার পেয়ে ইয়াছিনের মা ফেন্সি আক্তার বলেন, আমরা অসহায়। অভাবের মধ্যে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। ছেলেকেও লেখাপড়া করাতে পারিনি। এখন বেঁচে থাকার একটা অবলম্বন হলো। এজন্য সাংবাদিক ও রিকশাদানকারী সংগঠনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

ভবানীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি বলেন, পরিবারটি খুব অসহায়। পরিষদের পক্ষ থেকেও তাদের সহযোগিতা করা হবে।

** মুহূর্তেই উধাও অটোরিকশা, কান্নায় ভেঙে পড়লো কিশোর চালক

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।