ঢাকা, সোমবার, ৮ আশ্বিন ১৪৩১, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পরিত্যক্ত জমিতে কুল চাষ, বছরে ৬ লাখ টাকা আয় শরিফুলের

এস.এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০২২
পরিত্যক্ত জমিতে কুল চাষ, বছরে ৬ লাখ টাকা আয় শরিফুলের

বাগেরহাট: বাগেরহাটের মোল্লাহাটে শখের বশে পরিত্যক্ত জমিতে করা কুল বাগান থেকে শরিফুলের বাৎসরিক আয় ৬ লাখ টাকা। কুল চাষ করেই তার সংসারে এসেছে সচ্ছলতা।

শরিফুলের এ সফলতায় প্রতিবেশীরাও ঝুঁকছে কুল বাগানে। শুধু মোল্লাহাটে নয়, বাগেরহাট জেলার প্রতিটি উপজেলার চাষিরাও ঝুঁকছেন কুল চাষে।

মোল্লাহাট উপজেলার ছোট খাচনা গ্রামের শিকদার শরিফুল ইসলাম (৫০)। বাড়ির জমি দেখা-শুনাই ছিল যার প্রধান কাজ। প্রতিবেশী শেখ এনছান উদ্দিনের বাগান দেখে শখ হয় কুল বাগান করার। শখের বশেই ২০১৭ সালে ৫২ শতক জমিতে আপেল কুলের বাগান করেন তিনি। প্রথমে ৭০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন তিনি। মাত্র দুই বছরেই কয়েক লাখ টাকা লাভ হয় তার কুল বাগান থেকে। এরপর থেকে চাষ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করেন শরিফুল। মাত্র তিন বছর পরে ২০২০ সালে চার একর জমিতে কুল চাষ করেন তিনি। ভূমি উন্নয়ন, চারা ক্রয়, সার-ঔষধ ও শ্রমিক বাবদ ৫ লক্ষাধিক টাকা বিনিয়োগ ব্যয় হয় বাগানে। ওই বছরই দুই লাখ টাকা লাভ হয় তার।

পরে ২০২১ সালে চার একর বাগানের ৩শ’ গাছ থেকে ৬ লক্ষাধিক টাকার কুল বিক্রি করেন তিনি। এবছরও ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার কুল বিক্রি হবে বলে আশা করছেন শরিফুল। ইতোমধ্যে প্রায় চার লাখ টাকার কুল বিক্রি করেছেন তিনি।

জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত কুল বিক্রি করা যায়। এরপরেও কিছু কিছু কুল বিক্রি হয়। গাছ থেকে কুল তোলা, বাছা ও বাজারজাত করণের জন্য শরিফুলের সঙ্গে নিয়মিত আরও তিনজন শ্রমিক কাজ করেন।

শরিফুল ইসলামের আপেল কুল বাগানে কাজ করেন মনিরুজ্জামান।

তিনি বলেন, আমরা তিনজন নিয়মিত কুল তোলা, বাছাই, বক্সে ভরার কাজ করি। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত, অনেক দিন সন্ধ্যা পর্যন্তও কুল তুলতে হয় আমাদের। এর পরে বস্তা বা বক্সে ভরে বাজারে নিয়ে যাই। সেখান থেকে পাইকাররা নিয়ে যান। অনেক সময় মোল্লাহাট বাজার ও গোপালগঞ্জ জেলা সদরেও ভ্যান বা নসিমনে করে কুল নিয়ে যাই।

তিনি আরও বলেন, কুল শেষের পরে গাছের ডাল ছাঁটাই, সার প্রয়োগ, পানি দেওয়াসহ কুল বাগানেই সারাবছর জুড়ে মাঝে মধ্যে কাজ করি।

শরিফুলের বোন নাসিমা বেগম বলেন, শরিফুল ২০১৭ সালের দিকে আপেল কুলের বাগান করার পর থেকে আর্থিক আমরা অনেক ভাল আছি। বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত জমিতে সবাই যদি এভাবে কুলসহ অন্যান্য ফলের বাগান করে তাহলে সংসারে সচ্ছলতা আসবে বলে মনে করি।

স্থানীয় দিদার ফকির ফকির বলেন, শরিফুল ইসলাম ও শেখ এনছান উদ্দিনের কুল বাগান দেখে, আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। চারা ও অন্যান্য বিষয়ের জন্য শরিফল ভাইয়ের সাথে আলোচনা করেছি। আশাকরি এবছর শুরু করতে পারব।

সফল কুল চাষি শিকদার শরিফুল ইসলাম বলেন, স্বল্প সময় ও কম কষ্টে অধিক লাভ দেখে আমি কুল চাষ শুরু করি। আমার চাষ করা আপেল কুল খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিকরও। এজন্য এই কুলের চাহিদা অনেক। পুরো সিজিন ধরে প্রতি কেজি কুল ৫০ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারি। আশা করি এবছর ৭ লক্ষাধিক টাকার কুল বিক্রি করতে পারব।

কুল বাগানের খরচ ও আয়ের বিষয়ে শরিফুল ইসলাম বলেন, চারা, শ্রমিক, ভূমি উন্নয়ন, সার ও ঔষধ দিয়ে এক একর বাগানের জন্য প্রথম বছর ১ লাখ টাকার মত ব্যয় হয়। এরপর থেকে একর প্রতি ব্যয় ২৫ থেকে ৩৫ হাজারে নেমে আসে। ভাল ফলন হলে প্রতি একর জমি থেকে ১ লাখ থেকে ২ লাখ টাকার কুল বিক্রি করা সম্ভব।

নতুন চাষিদের উদ্দেশ্যে শরিফুল ইসলাম বলেন, নতুন চাষিদের জন্য প্রথমে খেয়াল রাখতে হবে কুলের জাত বিবেচনা করা। বাণিজ্যিকভাবে অনেক কুলের চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে তার নিজ এলাকার বাজারে যে জাতের কুলের সর্বাধিক চাহিদা রয়েছে এবং ফলন বেশি সেই কুল চাষ করা ভাল। তবে আমার ধারণা আপেল কুলে লাভ বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপপরিচালক কৃষিবিদ আজিজুর রহমান বলেন,  মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এসব কুলের চাহিদা অনেক বেশি। বর্তমানে জেলায় অনেকই কুল চাষ শুরু করছেন। আমরাও কুল চাষিদের সব ধরনের কারিগরি পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এবার বাগেরহাট জেলায় ৩২৭ হেক্টর জমিতে কুলের আবাদ হয়েছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬৯৬ মেট্রিক টন।

ভবিষ্যতে কুল আবাদের জমির পরিমাণ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২
এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।