ঢাকা, সোমবার, ৮ আশ্বিন ১৪৩১, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মেয়েরাও ব্যবসায়ী হতে পারে: গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী

শারমীনা ইসলাম ও ইসমাইল হোসেন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২০ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২২
মেয়েরাও ব্যবসায়ী হতে পারে: গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী, ছবি-ডিএইচ বাদল

ঢাকা: গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী। ভাষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর নাতনি।

একজন লেখিকা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা। সব পরিচয় ছাপিয়ে বাংলাদেশে আধুনিক বিজ্ঞাপন শিল্প প্রসার হয়েছিল যার হাত ধরে। বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান অ্যাডকম লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান তিনি।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে সত্তরের দশকে কীভাবে তিনি লেখালেখির পাশাপাশি বিজ্ঞাপনে আধুনিকতার ছোঁয়া এনেছিলেন এবং সাম্প্রতিক সময়ে নারীর অবস্থান নিয়ে বাংলানিউজের মুখোমুখি হয়েছিলেন গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী।

 বাংলানিউজ: তখনকার দিনে বিজ্ঞাপন-বিজনেসে আসার জন্য সময়টা কেমন ছিল  

গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী: ১৯৭৪-এ অ্যাডকম শুরু করেছি। তখনকার দিকে আমি যখন কোনো অফিসে ঢুকতাম তখন সবাই তাকিয়ে থাকতেন, অনেকেই জানতে চাইতেন কী, কেন এসেছি?

বাংলানিউজ: শুরুটা সাংবাদিকতায়? 

গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী: কেজি টু থেকে কাগজে লেখালেখি শুরু করি। ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর ইংলিশ লিটারেচার পড়ার সময় থেকে অবজারভার পত্রিকায় লেখা শুরু করলাম। প্রথমে চিলড্রেন পেজে শুরু করে পরে উইমেন্স পেজের দায়িত্ব পেলাম। এরপর আবার ফিল্ম পেজের দায়িত্ব পেলাম। কিন্তু তখনও আমি বেতন পেতাম না। তবে আমি কাজটা খুব এনজয় করতাম। চিলড্রেন পেজে ‘আংকেল কিম’নামে লিখতাম। সবাই পুরুষ ভাবতো, বিয়ের পর অবজারভারে ছবি ছেপেছিল। এভাবে পরিচয়টা ডিসক্লোজ করে দিল।

বাংলানিউজ: নারীদের এম্পাওয়ার করার গল্পটা জানাবেন

গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী: অবজারভারে কাজ করার সময়ে বিয়ে হয়ে গেল, আমার স্বামীর পোস্টিং হয়ে গেল করাচি। সেখানে উইমেন্স ম্যাগাজিনে জয়েন করি। এটা নারীদের এম্পাওয়ার করার জন্য বের হয়েছিল। আমি সেটা এন জয় করি। ‘সি ম্যাগাজিনে’ কাজ করছিলাম। সেখানে শুধু একটা মেয়ে ছিল। ওই মেয়েসহ লাঞ্চ টাইমে বের হতাম। তার বন্ধুরা বিজ্ঞাপনে কাজ করতো।

আমি খুব সাধারণ মেয়ে ছিলাম। কোনো মেকআপ করতাম না। একটা সিম্পল সুতি শাড়ি পরতাম। অনেক লম্বা চুল ছিল। ওরা সব গল্প করতো ফ্যাশন নিয়ে। কথার সময় বলতো ক্লায়েন্ট কপি লিখেছিলাম পছন্দ করেনি। আমি বললাম কী নিয়ে- ওরা বলতো, আমি লিখতাম। পরের দিন দেখি ছেপেছে বা আমি গেলে বলতো ‘বাঙাল কা জাদু কেয়া’ ক্লায়েন্ট আমার লেখা পছন্দ করেছে। এভারে কপি লেখা শুরু করলাম। পরে দেশে ফিরে কিছু দিন একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় চাকরি করি। তারপর নিজেই শুরু করি স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান অ্যাডকম।  

বাংলানিউজ: আজকের অবস্থানের পেছনে কার উৎসাহ বেশি ছিল

গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী: আমার বাবা বলতেন আস্তে কথা বলছো কেন, মিন মিন করে কথা বলো কেন। আব্বা-আম্মা কেউ আমাকে মানুষ হিসেবে বড় করেছেন। এজন্য আমি বলি প্রতিদিনই নারী দিবস। একদিন কেন, হোয়াই এইট মার্চ অনলি আমার মা না থাকলে কি আমি আসতাম আমার শ্বাশুড়ি যদি আমাকে বন্দি করে রাখতেন, যদি উৎসাহ না দিতেন তাহলে আজকের এই অবস্থানে আসা সম্ভব হতো না।  
বাংলানিউজ: নিজেকে মূল্যায়ন করেন কীভাবে

গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী: ছোটকাল থেকে কষ্ট হয়েছে ঠিকই। ক্লায়েন্টরাও সাসপেক্ট করতো, মেয়ে মানুষ, পারবে, পারবে না। কিন্তু আই হ্যাব টু প্রুভ মাইসেলফ। আমি পারি করতে।

বাংলানিউজ: নারীদের কীভাবে এগিয়ে নিয়েছেন

গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী: আমি যখন নিজের অবস্থা দেখলাম, তখন বুঝলাম যে অন্য মেয়ে যখন আমার অফিসে আসবে তাকে প্রটেকশন এবং কনফিডেন্স দিতে হবে। তার ফ্যামিলিকে কনফিডেন্স দিতে হবে যে- সি সেইফ হেয়ার(সে এখানে নিরাপদ)। আমার অফিসে যে ছেলেরা আছে তাদেরকে বললাম যে তোমার বাড়িতে যে বউ আছে, বোন আছে, তাদেরকে যেভাবে ট্রিট করো সেভাবে ট্রিট করবে। যে রকম চাও তোমার বোনকে কেউ উত্তক্ত করবে না, সে রকম তোমরাও করবে না। বোনকে যে রকম আদর করো, যত্ন করো ঠিক সে রকম করেই কলিগদের পাশে থাকবে। আর মেয়েদেরকে বললাম তোমার বাড়িতে তোমার ভাইকে যে রকম দেখাশুনা করে রাখো, সেরকম এখানেও রাখবে। আমার অফিসে বন্ডিংটা সাংঘাতিক, একটা ফ্যামিলি।  

বাংলানিউজ: প্রায় সব অফিসেই এখন অনেক নারী কাজ করেন, কেমন লাগে

গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী: অসম্ভব ভালো লাগে আমার। এখন শুধু একজন দুইজন দেখি না। অনেক কোম্পানির হেড নারীরা। ইয়াং জেনারেশন এমনভাবে এগিয়ে এসেছে, খুব ভালো লাগে। আমাদের মেয়েরা অনেক এগিয়ে গেছে। আমাদের গ্রামের মেয়েরাও যে কত উন্নত, ওদের সঙ্গে কথা না বললে জানা যায় না। আমি গ্রামে গিয়ে ওদের সঙ্গে কথা বলি, ওরা অনেক কিছু জানে। ওদের শুধু সাহস দেওয়া এবং স্কোপটা দেওয়া। ওরা জিনিস সুন্দরভাবে তৈরি করছে কিন্তু কীভাবে বিক্রি করবে সেটা জানে না। ছোট ছোট প্রশিক্ষণ দিলে ওরা এগিয়ে আসবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২২
এমআইএইচ/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।