ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বান্দরবানের রেইচা

তীব্র পানির কষ্টে পাহাড়ের ১০ হাজার মানুষ

কৌশিক দাশ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০২২
তীব্র পানির কষ্টে  পাহাড়ের ১০ হাজার মানুষ ঝিড়ির পানি

বান্দরবান: তীব্র পানির সংকটে অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করছে বান্দরবানের ৩ নম্বর সদর ইউনিয়নের রেইচা এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ। র্দীঘদিনের এই সমস্যা নিরসনে নেয়নি কেউ স্থায়ী কোনো উদ্যোগ।

সে কারণে বিশুদ্ধ পানির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে জীবনযাপনসহ চাষাবাদ।

বান্দরবান সদর উপজেলার অন্তর্গত রেইচা এলাকায় বর্তমানে ৮২৫টি পরিবার বসবাস করছে। সৃষ্টিলগ্ন থেকে এ পাড়ায় রয়েছে তীব্র পানির সমস্যা। পাহাড়ি এলাকা, তাই ওয়াসার পানির কোনো লাইন নেই।  ঝিরি থেকে পানি সংগ্রহ করে চলে তাদের জীবনযাপন। গ্রীষ্মকাল এলেই পানির কষ্ট বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এলাকায় কোনো গভীর নলকূপও নেই, তাই বিশুদ্ধ পানির জন্য চরম কষ্টে দিনযাপন করছে সাধারণ মানুষ।

রেইচা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো. জলিল বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এলাকায় বিশুদ্ধ পানির কোনো সুব্যবস্থা নেই। পাশের ঝিরি থেকে পাড়ার মানুষ পানি সংগ্রহ করে জীবনযাপন করছেন। তিনি আরও বলেন, গ্রীষ্মকাল এলে ঝিরিতে পানি কমে যায় আর এতে পানির কষ্ট বেড়ে যায় দ্বিগুণ।

রেইচা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মংনুপ্রু মারমা বাংলানিউজকে বলেন, পৌরসভা এলাকার কিছু দূরত্বে আমাদের রেইচা এলাকা।  তবে সৃষ্টিলগ্ন থেকে এখানে কোনো পানির লাইন আসেনি। বিশুদ্ধ পানির অভাবে আমাদের ঝিরি আর নদীর পানি ব্যবহার করতে হয়। এ বিষয়ে আমরা কয়েকবার সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন করেছি, তাতেও কোনো কাজ হয়নি।

এদিকে পানির কষ্টে শুধু জীবনধারণই নয়, ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ ব্যবস্থাও। পানির অভাবে বিভিন্ন ফলফলাদি ও শাকসবজি উৎপাদনে বেগ পেতে হচ্ছে কৃষকদের। থলিপাড়া, রেইচা বাজার, তমবুসে পাড়া, রেইচা ঘোনাপাড়া, সাতকমল পাড়া, লম্বাঘোনা পাড়া, জিনিইঅং পাড়া, রত্নপুর পাড়া, ঘুংকিয়ং পাড়া, ডলুঝিড়ি পাড়া,গোয়ালিয়া খোলা দক্ষিণপাড়া ও রোয়াজা পাড়ার মানুষ এখন পানির অভাবে ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা চনুমং মারমা বাংলানিউজকে বলেন, পানি না থাকায় আমাদের ফলফলাদি আর শাকসবজি শুকিয়ে যাচ্ছে। পচে যাচ্ছে অনেক গাছ। পানির অভাবে এলাকায় চাষাবাদ কমে যাচ্ছে।

অপর বাসিন্দা হ্লাথুচিং মারমা বলেন, পানির অভাব কিছুটা দূর করার জন্য প্রতিবছর গ্রীষ্ম মৌসুমে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে মেঘলা জেলা পরিষদের লেক থেকে পাইপ টেনে আমাদের পাড়ায় কয়েকদিন পানি সরবরাহ করেন। তা দিয়ে গ্রীষ্ম মৌসুমে কিছুটা চাষাবাদ করা যায়।

তিনি আরও বলেন, জেলা পরিষদের লেকের পাশাপাশি আর যে সব লেক রয়েছে, তা থেকে যদি রুটিন করে কিছু পানি আমাদের দেওয়া হতো তবে গ্রীষ্মের এই সময়টায় পানির কষ্ট অনেকটাই কমে আসবে।

পাইপ লাইনের মাধ্যমে এলাকায় পানি সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।  তাই ব্যক্তিগতভাবে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে অনেকে গভীর নলকূপ এবং রিংওয়েল বসালেও শুষ্ক মৌসুমে সেখানে দেখা নেই পানির। এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি ঝিরির পানি দিয়েই চলে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাপন। পাড়ার বাসিন্দাদের এমন পানির কষ্টের কথা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে বলে জানান এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান।

৩ নম্বর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অংসাহ্লা মারমা বাংলানিউজকে বলেন, রেইচা এলাকার পানির সমস্যা নিয়ে আমি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অবগত করেছি। আশা করি তিনি এর একটি স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

রেইচা এলাকার বিভিন্নপাড়ায় পানির সমস্যার কথা জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বান্দরবানের আহ্বায়ক ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য মোজাম্মেল হক বাহাদুর বাংলানিউজকে জানান, রেইচা এলাকার মাটি অত্যন্ত পাথুরে। তাই ওই এলাকার গভীর নলকূপ বসানো হয় না। আর যেগুলো হয়েছে বেশিরভাগই গ্রীষ্ম মৌসুমে পানি থাকে না। এতে ওই এলাকায় মানুষের বিশুদ্ধ পানি পেতে কষ্ট হচ্ছে।  

তিনি বাংলানিউজকে আরও বলেন, পানির সমস্যা স্থায়ীভাবে নিরসনের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর শিগগিরই রেইচা এলাকায় একটি প্রকল্প হাতে নিয়ে কাজ শুরু করবে।

এদিকে ব্যক্তিগতভাবে পানির সমস্যা নিরসনের জন্য প্রতি শুষ্ক মৌসুমে জেলা পরিষদের লেক থেকে পাড়ায় কয়েকদিনের জন্য পানি সরবরাহ করা হলেও এবার পানির সমস্যা স্থায়ীভাবে নিরসনের জন্য একটি প্রকল্প প্রণয়নের কথা জানিয়েছে পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২২
আরএ/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।