ঢাকা: ‘রাজধানীর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করতে সুমন শিকদার মুসাকে নির্দেশ দেন আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী। একইসঙ্গে আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা সন্ত্রাসীরাও যুক্ত হন।
র্যাব বলছে, দুবাই বসে টিপু হত্যার পরিকল্পনা ও শুটার নিয়োগ করেন মুসা। টিপুর লোকেশন নিশ্চিত করতে টাইম টু টাইম তথ্যও দেন শুটারদের। তবে, টিপু হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী হলেন মতিঝিলের বাসিন্দা রিজভী হাসান ওরফে বোচা বাবু হত্যা মামলার আসামি ওমর ফারুক।
শনিবার (০২ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ‘টিপু হত্যাকাণ্ডের ঠিক ১২ দিন আগে দুবাই চলে যান মুসা। দুবাই বসে হত্যার পুরো ছক তৈরি করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী টিপুকে হত্যা করতে ১৫ লাখ টাকা চুক্তি করেন মুসা। অভিযান চালিয়ে টিপু হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ওমর ফারুক, নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির, আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ ও কাইল্লা পলাশকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় র্যাব তাদের কাছ থেকে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা জব্দ করে।
আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডটি দেশে সংঘটিত হলেও নিয়ন্ত্রণ করা হয় দুবাই থেকে। দেশে থাকা নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির, মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশসহ আরও কয়েকজন টিপুর অবস্থান সম্পর্কে বেশ কয়েকদিন ধরে মুসার কাছে তথ্য পাঠাতেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির আনুমানিক চারবার টিপুর অবস্থান সম্পর্কে মুসাকে অবহিত করেন। পরে টিপুর গ্রান্ড সুলতান রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ তাকে নজরদারিতে রাখেন এবং তার অবস্থান সম্পর্কে তিনি ফ্রিডম মানিককে অবহিত করেন। টিপুর অবস্থান সম্পর্কে জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টার দিকে আন্ডারওয়ার্ল্ডের তত্ত্বাবধানে মুসার পরিকল্পনায় হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হয়। ’
কে এই ওমর ফারুক?
র্যাব জানায়, ওমর ফারুক টিপু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন ও হত্যাকাণ্ড সংগঠনের জন্য অর্থ লেনদেনও করেন তিনি। এদিকে ২০১৬ সালে রিজভী হাসান ওরফে বোচা বাবু হত্যাকাণ্ডের চার্জশিটভুক্ত চার নম্বর আসামিও তিনি। ওই মামলায় তিনি আগেও কারাভোগ করেছেন।
হত্যাকাণ্ডে কার কী অংশ?
নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির হত্যাকাণ্ডের সময় টিপুকে নজরদারির কাজ করেন। এই হত্যার জন্য অর্থ দিয়েছেন তিনি। ঘটনাস্থলের কাছেই তাকে সাদা শার্ট, জিন্স প্যান্ট ও কেডস/জুতা পরা অবস্থায় দেখা যায়। যা সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে। ঘটনার পরে তিনি তার মোবাইল ফোন বিক্রি করে দেন। তার ব্যবহৃত সিমকার্ডও ভেঙে ফেলেন।
র্যাব তাকে গ্রেফতার করার পর মোবাইল ফোন ও সিমকার্ড উদ্ধার করেন। এছাড়া ঘটনার আগের দিন তিনি সীমান্তবর্তী চৌদ্দগ্রাম এলাকায় একদিন অবস্থান করেছিলেন। তিনি রিজভী হাসান বাবু হত্যাকাণ্ডের এক নম্বর চার্জশিটভুক্ত আসামি। তার নামে অস্ত্র আইনে পল্লবী থানায় আরেকটি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ ঘটনার দিন টিপুকে নজরদারি ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সমন্বয় করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়নে সহায়তা করেছেন।
এর আগে তিনি মতিঝিল থানায় অস্ত্র আইনের একটি মামলায় কারাভোগ করেছেন। আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ ঘটনার পরিকল্পনা ও অর্থ যোগানের সঙ্গে জড়িত। তিনি রিজভী হাসান ওরফে বোচা বাবু হত্যাকাণ্ডের দুই নম্বর চার্জশিটভুক্ত আসামি। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অপরাধে ১২টি মামলা রয়েছে এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগও করেছেন।
আরও পড়ুন>>মিল্কী হত্যার প্রতিশোধ নিতেই টিপুকে খুন
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২২
এসজেএ/এএটি